নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ভারতীয় সংবিধানের ৭৫ বছর পূর্তিতে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতীয় সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমেরিকার নিউইয়র্ক রাজ্য সিনেট একটি বিশেষ প্রস্তাব পাস করেছে, যেখানে ভারতের সংবিধানকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্ক: আমেরিকার নিউইয়র্ক রাজ্য সিনেটে ভারতীয় সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকীর উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে ভারতীয় সংবিধানকে ভারতের অব্যাহত অগ্রগতির জন্য একটি নির্দেশিকা কাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উৎসব পালিত হয়েছে।

এই প্রস্তাবটি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জেরেমি কুনি দ্বারা প্রস্তাবিত হয়, যিনি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত একমাত্র সদস্য। বুধবার একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাবটি পাস করা হয়, যেখানে নিউইয়র্কে ভারতের মহাব্যবসায়িক কনসুল বিনয় প্রধান এবং ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

প্রস্তাবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব

এই প্রথমবার যখন আমেরিকার কোনও আইনসভায় ভারতীয় সংবিধানের বার্ষিকীর উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিনেট সংবিধানকে ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের নির্দেশিকা দলিল বলে উল্লেখ করেছে এবং এটিকে কেবলমাত্র ভারতের জন্য নয়, বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস বলে অভিহিত করেছে।

সিনেটর কুনি বলেছেন, ভারতীয় সংবিধান কেবল ভারতের দলিল নয়, এটি সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের শক্তি এবং ন্যায়, সমতা এবং স্বাধীনতা যেমন মূল্যবোধের প্রতীক। এই দিনটি কেবল ভারতে নয়, বিশ্বজুড়ে পালন করা উচিত।

ভারত-আমেরিকার সম্পর্কের নতুন উচ্চতা

এই প্রস্তাবটি পাস হওয়ার ফলে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে গণতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। নিউইয়র্ক স্থিত ভারতীয় মহাব্যবসায়িক দূতাবাসের কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং এটিকে ভারত-আমেরিকার সাধারণ মূল্যবোধের প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন। মহাব্যবসায়িক কনসুল বিনয় প্রধান এই উপলক্ষে বলেছেন, এই প্রস্তাবটি ভারতীয় গণতন্ত্রের সামর্থ্য এবং আমেরিকার সাথে আমাদের সাধারণ প্রতিশ্রুতি উদযাপন করে। এটি কেবল সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে না, বরং ভারতীয় সম্প্রদায়ের পরিচয়কেও শক্তিশালী করবে।

জেরেমি কুনির আবেগময় যাত্রা

সিনেটর কুনি এই উপলক্ষে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের যাত্রা ভাগ করে নিয়ে বলেছেন যে কীভাবে ভারত এবং বিশেষ করে কলকাতার সাথে তাঁর সম্পর্ক গভীর। কুনিকে একটি অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল এবং নিউইয়র্কের রোচেস্টার শহরে একক মায়ের কাছে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছেন, আমার জীবনের সূচনা ভারত থেকে হয়েছিল এবং আজ, যখন আমি নিউইয়র্ক সিনেটে ভারতীয় সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকীর সম্মানে প্রস্তাব রাখছি, এটি আমার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। আমি সর্বদা ভারতের সাথে আমার সম্পর্ককে ধরে রেখেছি।

বৈশ্বিক ভারতীয় সম্প্রদায়ের অবদান

কুনি তার বক্তব্যে এটাও উল্লেখ করেছেন যে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ে স্থায়ী প্রভাব ফেলছে। আমেরিকা হোক, ব্রিটেন, কানাডা অথবা অস্ট্রেলিয়া—ভারতীয় প্রবাসীরা সর্বত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা এবং সেবা খাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাঁর মতে, এই বার্ষিকী কেবলমাত্র অতীতের সাফল্যগুলি স্মরণ করার সুযোগ নয়, বরং আগামী প্রজন্মকে ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি এবং তার প্রতি গর্ব অনুভব করার অনুপ্রেরণাও দেয়।

নিউইয়র্ক সিনেটে প্রস্তাব পাস হওয়ার অনুষ্ঠানে ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক দল অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে ভারতীয় সংগীত, নৃত্য এবং বক্তৃতার মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র্য এবং গণতন্ত্রের আবেগ উদযাপন করা হয়।

Leave a comment