সরকার ওয়াক্ফ সংশোধন বিল সংসদে পেশ করবে, যার ফলে স্বচ্ছতা এবং নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। বিরোধী দল এবং মুসলিম সম্প্রদায় সরকারি হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির অভিযোগ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
Waqf Act Amendment: আজ, ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে ওয়াক্ফ সংশোধন বিল পেশ করতে যাচ্ছে। প্রথমে এটি লোকসভায় উপস্থাপিত হবে এবং পুরো অধিবেশনের সময় এর উপর আলোচনা হবে। গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এই সংশোধন ওয়াক্ফ বোর্ডে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আনা হচ্ছে। তবে, এই প্রস্তাব মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে।
ওয়াক্ফ কি এবং এর ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?
ওয়াক্ফ একটি ইসলামি প্রথা, যেখানে কোনও সম্পত্তি ধর্মীয় এবং সামাজিক কল্যাণের জন্য স্থায়ীভাবে উৎসর্গ করা হয়। এর প্রশাসন ওয়াক্ফ বোর্ডের হাতে থাকে, যা এই সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করে। ভারতে প্রায় ৯.৪ লক্ষ একর জমি এবং ৮.৭ লক্ষ ওয়াক্ফ সম্পত্তি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা বলে জানা যায়। ওয়াক্ফ বোর্ডের কাজ হল এই সম্পত্তিগুলি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে যথাযথভাবে পরিচালনা করা।
সরকার কেন ওয়াক্ফ আইনে সংশোধন করছে?
সরকারের যুক্তি হল বর্তমান ওয়াক্ফ আইনে অনেক ত্রুটি রয়েছে, যার ফলে এই সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। পাশাপাশি, কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনায় অনিয়মও দেখা গেছে। সরকারের দাবি, ওয়াক্ফ বোর্ডে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনার জন্য এই সংশোধন প্রয়োজন।
ওয়াক্ফ সংশোধন বিলে কী কী প্রস্তাবিত পরিবর্তন রয়েছে?
- সম্পত্তির বাধ্যতামূলক নিবন্ধন: এখন প্রতিটি ওয়াক্ফ সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টরের কাছে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হবে। এর ফলে সম্পত্তির সঠিক মূল্যায়ন এবং এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে।
- ওয়াক্ফ বোর্ডের গঠনে পরিবর্তন: বর্তমানে ওয়াক্ফ বোর্ডের সদস্যরা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, কিন্তু সংশোধনের পর সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্যরা বোর্ডের অংশ হবেন। এছাড়াও, এতে অ-মুসলিমদেরও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
- নারীদের বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ: সরকারের উদ্দেশ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। নতুন বিধান অনুসারে, বোর্ডে নারী সদস্যদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক হবে।
- বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নতুন পদ্ধতি: বর্তমানে, ওয়াক্ফ সম্পত্তি সংক্রান্ত হাজার হাজার মামলা আদালতে রয়েছে। নতুন সংশোধনে এর সমাধানের জন্য উন্নত আইনগত কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিরোধী দলের প্রতিবাদ কেন?
- বিরোধী দল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মতামত, এই সংশোধনের মাধ্যমে সরকারের হস্তক্ষেপ ধর্মীয় সম্পত্তিতে বৃদ্ধি পাবে।
- বিরোধী দলগুলির দাবি, এই বিল সরকারকে ওয়াক্ফ বোর্ডের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার চেষ্টা।
- মুসলিম সংগঠনগুলির মতামত, এর ফলে ওয়াক্ফ সম্পত্তির স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে এবং সরকার এগুলি নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবে।
- কিছু পণ্ডিতের মতামত, এটি সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন করে।
ওয়াক্ফ বিরোধ এবং আইনগত চ্যালেঞ্জের অবস্থা
ভারতে ওয়াক্ফ সম্পত্তি সংক্রান্ত অনেক বিরোধ আদালতে রয়েছে। ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের কাছে বর্তমানে প্রায় ৪০,৯৫১টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৯,৯৪২টি মামলা মুসলিম সম্প্রদায় নিজেই ওয়াক্ফ বোর্ডের বিরুদ্ধে দায়ের করেছে। এই বিরোধের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, যেমন সম্পত্তির ভুল ব্যবস্থাপনা এবং অনধিকার প্রবেশ।
ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ন্যায়িক পর্যালোচনা
যদি ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনাল কোনও সম্পত্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তকে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। এর ফলে প্রভাবিত পক্ষগুলি ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ পাবে।
কি ওয়াক্ফ বোর্ড যেকোনো সম্পত্তিতে দাবি করতে পারে?
না, ওয়াক্ফ বোর্ড কেবলমাত্র সেই সম্পত্তিতে দাবি করতে পারে যা ধর্মীয় এবং সামাজিক কাজের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে ওয়াক্ফ বোর্ডের কোনও অধিকার নেই।