টোঙ্কের বনাস নদীতে আট যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু

🎧 Listen in Audio
0:00

রবিবারের দিন রাজস্থানের টোঙ্ক জেলায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। জয়পুর থেকে পিকনিক করতে আসা আট যুবক বনাস নদীতে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেছে। তীব্র গরম থেকে মুক্তি পেতে নদীতে নেমে প্রথমে তারা মজা করছিল, কিন্তু একজনের পিছলে পড়া থেকে শুরু হওয়া দুর্ঘটনা কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই এক ভয়াবহ দুঃখান্তে পরিণত হয়।

এই দুর্ঘটনার পর জয়পুর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে রাতের অন্ধকারে জয়পুরে পাঠিয়েছে, যেখানে পরিবারের সদস্যদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

ঘটনার পুরো কাহিনী

এই দুর্ঘটনা টোঙ্ক জেলার নাগওয়া থানা এলাকায় অবস্থিত বনাস নদীর তীরে ঘটে। জয়পুরের ঝোটওয়াড়া এবং কর্ণী বিহার এলাকা থেকে মোট ৮ জন বন্ধু রবিবার সকালে পিকনিক করার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল। দুপুরের দিকে তারা বনাস নদীর তীরে পৌঁছে এবং খাওয়ার পর নদীতে নেমে স্নান করতে শুরু করে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রথমে ২২ বছর বয়সী শাহিদ গভীরতা না বুঝে তীব্র স্রোতে চলে যায়। তাকে বাঁচাতে অন্য বন্ধুরাও নদীতে নেমে যায়, কিন্তু তাদের কারোরই সাঁতার জানত না। একের পর এক সবাই স্রোতে আটকা পড়ে।

উদ্ধার অভিযান ও প্রশাসনের তৎপরতা

ঘটনার খবর পেয়ে টোঙ্ক পুলিশ এবং এসডিআরএফ দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। উদ্ধার অভিযানে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় লেগেছে। সন্ধ্যার মধ্যে সকল যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। টোঙ্ক পুলিশ অধীক্ষক (এসপি) উমেশ কুমার জানিয়েছেন: এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা, যা অসাবধানতার ফল। এলাকায় কোনও লাইফ জ্যাকেট বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না এবং যুবকদের নদীর গভীরতা সম্পর্কে কোন ধারণাও ছিল না।

যারা ছিলেন সেই যুবকরা

ডুবে যাওয়া যুবকরা জয়পুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন, শাহিদ (২২), ফয়জান (২১), আমির (২৩), জুবাইর (২২), সাকিব (২০), সালমান (২১), ফারহান (১৯), এবং ইউনুস (২৪)। তাদের বেশিরভাগই কলেজের ছাত্র ছিলেন অথবা ছোটখাটো ব্যক্তিগত চাকরি করতেন। তারা সবাই ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন এবং প্রায়ই একসাথে ঘুরতে যেতেন।

জয়পুরে শোকের ছায়া

ঘটনার খবর জয়পুরে পৌঁছলেই মৃতদের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। রবিবার রাতে যখন মৃতদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে জয়পুরে আনা হয়, তখন মহল্লায় একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে। বাড়ির বাইরে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল, সবার চোখে জল। পরিবারের সদস্যদের সামলাতে কষ্ট হচ্ছিল। শাহিদের পিতা রিয়াজ আহমদ বলেছেন: সকালে হাসিখুশি করে বেরিয়েছিল। বলেছিল, সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবো। কিন্তু এখন মৃতদেহ আসছে। এটা কে সহ্য করতে পারবে?

বনাস নদীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এই দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলে ধরেছে যে পিকনিক স্পটে সরকারি তত্ত্বাবধান এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন নেই। সেখানে কোন সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ছিল না, কোনও চৌকিদার বা লাইফ গার্ডের ব্যবস্থাও ছিল না। নদীর তীরে বেড়া দেওয়া উচিত, পাশাপাশি সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড এবং পেট্রোলিং দলের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এটি প্রথম দুর্ঘটনা নয়, কিন্তু আশা করা যায় এটিই শেষ হবে।

Leave a comment