সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়: স্বামীর ক্ষতিপূরণের অধিকার

🎧 Listen in Audio
0:00

সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে বলেছে যে, শুধুমাত্র শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার কারণে কোনো নারীর স্বামীকে আশ্রিত হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করা যাবে না।

নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যদি কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীর আয়ের উপর নির্ভরশীল থাকে এবং তাঁর নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস না থাকে, তাহলে তাঁকেও ক্ষতিপূরণের অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই রায় সমাজের ঐতিহ্যবাহী চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে, যেখানে প্রায়ই ধরে নেওয়া হয় যে, স্বামী সর্বদা আয়কারী এবং স্ত্রী তাঁর উপর নির্ভরশীল। এই রায় ক্ষতিপূরণের মামলায় ‘আশ্রিত’ শব্দের সংজ্ঞাকে আরও ব্যাপক করে তুলেছে।

পুরো ঘটনা কী?

এই ঘটনাটি ২০০৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি সংঘটিত একটি সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। একজন নারী মোটরসাইকেলে পিছনে বসে ছিলেন এবং দুর্ঘটনায় পড়ে গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। নারীর স্বামী ও দুইটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান মোটর দুর্ঘটনা দাবি আদালত (MACT)-এর কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি দায়ের করেন।

MACT তাঁদের রায়ের মধ্যে বলেছে যে, মৃতার স্বামী ক্ষতিপূরণ পাবেন না কারণ তিনি ৪০ বছর বয়সী একজন “সক্ষম পুরুষ” এবং তাই তাঁকে আশ্রিত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। শুধুমাত্র সন্তানদের আশ্রিত হিসেবে বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছিল। এই রায়ের বিরুদ্ধে বীমা কোম্পানিও আপত্তি জানায় এবং মামলাটি প্রথমে হাইকোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে।

সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য

সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের একটি বেঞ্চ, যার মধ্যে ন্যায়াধীশ সুধানশু ধুলিয়া এবং ন্যায়াধীশ কে. বিনোদ চন্দ্রন ছিলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন যে, শুধুমাত্র এটা বলা যথেষ্ট নয় যে, স্বামী সক্ষম। যদি তাঁর কোনো আয়ের সরাসরি প্রমাণ না থাকে, তাহলে তাঁকে তাঁর স্ত্রীর আয়ের উপর নির্ভরশীল হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আদালত বলেছে যে, কোনো ব্যক্তিকে শুধুমাত্র তাঁর লিঙ্গ ও বয়সের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আত্মনির্ভর হিসেবে বিবেচনা করা ন্যায্য নয়। যদি কোনো পুরুষ আর্থিকভাবে তাঁর স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং তাঁর আয়ের কোনো প্রমাণ উপস্থিত নেই, তাহলে তাঁকে আশ্রিত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই ভিত্তিতে আদালত স্বামী ও দুই সন্তানকে আশ্রিত হিসেবে বিবেচনা করে মোট ১৭ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেছে।

আইনি ব্যাখ্যার সম্প্রসারণ

এই রায়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আবারও পুনরাবৃত্তি করেছে যে, মোটরযান আইনের অধীনে “আইনি প্রতিনিধি” ও “আশ্রিত” ইত্যাদি শব্দের ব্যাখ্যা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা উচিত নয়। আদালত বলেছে যে, ক্ষতিপূরণের অধিকার তাদের সকলেরই থাকা উচিত যারা মৃতের আয়ের উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল ছিলেন, তাদের আইনি সম্পর্ক ঐতিহ্যবাহী কাঠামোতে সংজ্ঞায়িত হোক আর না হোক।

এই রায় ভারতের বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, বিশেষ করে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলায়। বিভিন্ন কারণে আয় করতে না পারা এবং তাঁদের জীবনসঙ্গীর আয়ের উপর নির্ভরশীল পুরুষদের জন্য এটি একটা স্বস্তির বার্তা। এতে সমাজে লিঙ্গ সমতা অর্জনের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

Leave a comment