সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়: সন্তান সংখ্যার উপর নির্ভর করে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল অবৈধ

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়: সন্তান সংখ্যার উপর নির্ভর করে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল অবৈধ
সর্বশেষ আপডেট: 23-05-2025

সুপ্রিম কোর্টের রায়: মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রতিটি মহিলার অধিকার, সন্তানের সংখ্যার উপর নির্ভর করে ছুটি বন্ধ করা অবৈধ। কোনও প্রতিষ্ঠানই এটি প্রত্যাখ্যান করতে পারে না।

SC: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এমন একটি রায় দিয়েছে যা দেশের সকল নারী কর্মীর অধিকারকে আরও শক্তিশালী করেছে। কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে যে মাতৃত্বকালীন ছুটি (Maternity Leave) প্রতিটি মহিলার সাংবিধানিক অধিকার এবং কোনও প্রতিষ্ঠান – সরকারি হোক বা বেসরকারি – এই অধিকার থেকে কোনও মহিলাকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

এই রায় তামিলনাড়ুর একজন নারী সরকারি কর্মীর আবেদনের পর এসেছে, যার মাতৃত্বকালীন ছুটি এই বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল যে তিনি ইতিমধ্যেই দুই সন্তানের জননী।

ঘটনা কি?

তামিলনাড়ুর উমা দেবী নামে একজন নারী সরকারি কর্মী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। তার প্রথম বিয়েতে দুটি সন্তান ছিল। পরে দ্বিতীয় বিয়েতে আরও এক সন্তান হয়, কিন্তু তিনি যখন তার দপ্তর থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি চেয়েছিলেন তখন তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিয়েছিল যে, রাজ্যের বিধি অনুযায়ী, কেবলমাত্র প্রথম দুই সন্তানের জন্যই মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা পাওয়া যায়।

সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বক্তব্য

বিচারপতি অভয় এস. ওক এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়াঁর বেঞ্চ এই মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়ে বলেছে, "মাতৃত্বকালীন ছুটি যেকোনো নারী কর্মীর অধিকার। এটি প্রজনন অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং মাতৃত্ব সুবিধার অন্তর্ভুক্ত।"

কোর্ট আরও বলেছে যে, কেবলমাত্র এই কারণে যে একজন মহিলার ইতিমধ্যে দুটি সন্তান আছে, তাকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

মাতৃত্বকালীন ছুটি: অধিকার নাকি সুবিধা?

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে যে, মাতৃত্বকালীন ছুটি কোনও সুবিধা নয়, বরং একটি অধিকার। এই অধিকার সংবিধানে অন্তর্নিহিত নারীর মর্যাদা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত।

২০১৭ সালে ভারত সরকার মাতৃত্ব সুবিধা আইনে সংশোধন করে ছুটির সময়কাল ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করেছে। এই বিধি সকল প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য যেখানে ১০ জন বা তার বেশি কর্মী কর্মরত আছেন।

দত্তক নেওয়া সন্তানের জননীর ক্ষেত্রে কি?

কেবলমাত্র জৈবিক জননী নয়, দত্তক নেওয়া সন্তানের জননীরাও মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকারী। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে যে দত্তক নেওয়া সন্তানের জননীরাও ১২ সপ্তাহ ছুটি পাবেন, যা সন্তানকে হস্তান্তরের তারিখ থেকে শুরু হবে।

দুই সন্তানের সীমা নিয়ে প্রশ্ন

তামিলনাড়ুর বিধিতে এই ধারা রয়েছে যে, মাতৃত্বকালীন ছুটি কেবলমাত্র প্রথম দুই সন্তানের জন্য প্রযোজ্য হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই সীমাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে বলেছে যে, কোনও মহিলাকে তার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ভিত্তিতে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

কোর্ট বলেছে “এই বিধি ব্যক্তিগত জীবনের পছন্দ এবং নারীর মর্যাদার বিরুদ্ধে। বিবাহ, পুনর্বিবাহ বা সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।”

কোম্পানি ও সরকারি বিভাগের জন্য বার্তা

এই রায়ের পর সকল প্রতিষ্ঠান – সরকারি হোক বা বেসরকারি – এর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা গেছে যে, নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া এখন কোনও পছন্দের বিষয় নয়, বরং আইনি দায়িত্ব।

কোম্পানিগুলিকে উচিত তাদের HR নীতি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনা অনুযায়ী আপডেট করা এবং নিশ্চিত করা যে কোনও মহিলাকে তার প্রজনন অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় না।

নারী কর্মীদের কি করা উচিত?

যদি আপনি একজন নারী কর্মী হন এবং আপনার কোম্পানি বা দপ্তর মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার জন্য অস্বীকার করছে, তাহলে আপনি:

  • লিখিত অভিযোগ দায়ের করুন।
  • আপনার দপ্তর বা কোম্পানির HR বিভাগের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • যদি তবুও কোন শুনানি না হয়, তাহলে আপনি আইনি পন্থা অবলম্বন করতে পারেন – যেমন শ্রম আদালত বা হাইকোর্টে আপিল করা।
  • আপনি জাতীয় মহিলা কমিশন বা রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছ থেকেও সাহায্য নিতে পারেন।

Leave a comment