শিলং-এর হত্যা মামলায় স্ত্রী সোনম ও প্রেমিক রাজ মিলে স্বামী রাজার হত্যা করেছে। ১৮ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পুলিশ ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
Shillong Murder Case: শিলং থেকে উঠে আসা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সমগ্র দেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই মামলায় নিহত রাজা রঘুবংশীর হত্যার পিছনে তার স্ত্রী সোনম এবং তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহের হাত রয়েছে। পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে যে, এই হত্যা কোনো হঠাৎ ঝগড়া বা পারস্পরিক বিরোধের ফল নয়, বরং পূর্ণ পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন সোনমের প্রেমিক রাজের বন্ধু এবং একজন তার চাচাতো ভাই।
হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোনম ও রাজের মধ্যে প্রণয় সম্পর্ক ছিল এবং বিবাহের আগেই তারা রাজার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ফেব্রুয়ারী মাসে তারা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সোনমকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ করা হবে, যাতে মনে হয় সে নদীতে ভেসে গেছে। দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছিল অন্য কারও হত্যা করে তার মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা এবং সোনমের স্কুটি সেখানেই রেখে দেওয়া, যাতে মনে হয় সোনমের মৃত্যু হয়েছে। এই দুটি পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয় এবং অবশেষে সোনমের বিয়ে হয় রাজার সাথে।
বিয়ের পরও পরিবর্তন হয়নি ইচ্ছা
রাজা ও সোনমের বিয়ের পরও হত্যার পরিকল্পনা চালু থাকে। বিয়ের কয়েকদিন পর সোনম তার স্বামী রাজার সাথে কামাখ্যা মন্দির দর্শনের জন্য গুয়াহাটি যায়। সেই সময় রাজ এবং তার সঙ্গীরাও সেখানে পৌঁছে যায়। গুয়াহাটিতে হত্যার চেষ্টা করা হয় কিন্তু সফল হয়নি। এরপর সোহরা (চেরাপুঞ্জি) যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
হত্যার দিন: ১৮ মিনিটে সব শেষ
১৯ মে সোনম ও রাজা তাদের বন্ধুদের সাথে ওয়াইসেডম এলাকার পার্কিং লটে যায়। রাজা যখন টয়লেটে যায়, তখন সোনমের প্রেমিক রাজ এবং তার তিন সঙ্গী মিলে রাজার হত্যা করে। এই সম্পূর্ণ ঘটনা দুপুর ২ টা থেকে ২ টা ১৮ মিনিটের মধ্যে ঘটে। এরপর মৃতদেহ একটি গভীর খাদে ফেলে দেওয়া হয়।
হত্যার পর পালানোর পরিকল্পনা
হত্যার পর সোনম তার রেনকোট তার সঙ্গী আকাশকে দিয়ে দেয় এবং রক্তাক্ত শার্টটি লুকিয়ে রাখা হয়। তারপর সবাই আলাদা আলাদা স্কুটিতে ঘটনাস্থল থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। এভি পয়েন্টে আকাশ রেনকোট ফেলে দেয় এবং স্কুটি বদল করে। এরপর সোনম ট্যাক্সিতে চড়ে গুয়াহাটি পৌঁছে, যেখানে রাজ তাকে বুর্কা দেয় যাতে সে পরিচয় গোপন রাখতে পারে।
পলায়নের পরিকল্পনা
গুয়াহাটি থেকে সোনম শিলিগুড়ির বাস ধরে, তারপর সেখান থেকে পটনা ও আরার ভেতর দিয়ে লখনউ পৌঁছে। লখনউ থেকে সে ইন্দোর পৌঁছে এবং ২৬ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত সেখানেই থাকে। ইন্দোর লুকিয়ে থাকার সময় মিডিয়ায় খবর আসে যে, তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। রাজ যখন এই খবর পায়, তখন সে সোনমকে অবিলম্বে ইন্দোর ছেড়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার এবং নিজেকে অপহরণের শিকার বলে দেখানোর নির্দেশ দেয়।
গ্রেফতারি ও তদন্তের দিক
৮ জুন যখন সোনম ইন্দোর থেকে বেরোতে চলেছিল, তখন শিলং পুলিশের দুটি দল উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে সক্রিয় ছিল। পুলিশ যখন খবর পায়, তখন সোনম গাজীপুর পৌঁছে এবং সেখানেই অপহরণের শিকার হওয়ার গল্প বলে। পুলিশের মতে এটি কোনো সুপারি কিলিং নয়, বরং প্রণয় সম্পর্কের পরিণতি। রাজ এই ঘটনায় মোট ৫৯ হাজার টাকা খরচ করেছে।
তিনবার ব্যর্থ হত্যা, চতুর্থবার সফল হলো খুনি
আসামিরা প্রথমে গুয়াহাটি, তারপর নাঙ্গরিয়াট এবং মাবালখিয়াটে রাজাকে মারার চেষ্টা করে কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ওয়াইসেডমে হত্যা করা হয়। হত্যার পর আসামিরা আশা করছিল যে, রাজার মৃতদেহ পঁচে যাবে এবং কেউ পরিচয় করতে পারবে না।
শিলং পুলিশের বিবৃতি
শিলংয়ের এসপি বিবেক জানিয়েছেন যে, পুলিশের কাছে বেশ ভালো প্রমাণ রয়েছে এবং ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হবে। সোনমের পরিবার তার প্রণয় সম্পর্কের কথা জানতো কিনা, তা তদন্তের বিষয়।