সমাজবাদী পার্টির তিন বিধায়ক বহিষ্কার

🎧 Listen in Audio
0:00

সমাজবাদী পার্টি তিনজন বিদ্রোহী বিধায়ক অভয় সিংহ, রাকেশ প্রতাপ সিংহ এবং মনোজ পাণ্ডেয়কে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। আখিলেশ যাদব দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন এবং দলিত-ওবিসি-সংখ্যালঘু (পিডিএ) সমীকরণকেও শক্তিশালী করেছেন।

UP রাজনীতি: সমাজবাদী পার্টি তিনজন বিদ্রোহী বিধায়ক অভয় সিংহ, রাকেশ প্রতাপ সিংহ এবং মনোজ পাণ্ডেয়কে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এই বিধায়কদের উপর বিজেপির সাথে যোগাযোগ এবং দলবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সপা শুধুমাত্র শৃঙ্খলার বার্তা দেয়নি, বরং তাদের পিডিএ (পিছড়া, দলিত, সংখ্যালঘু) ভোটব্যাঙ্ককেও ধরে রাখার চেষ্টা করেছে।

তিন বিধায়কের বিরুদ্ধে বড়ো ব্যবস্থা

সমাজবাদী পার্টির জাতীয় সভাপতি আখিলেশ যাদব দলবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনজন বিধায়ককে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। এই তিনজন বিধায়ক অভয় সিংহ, রাকেশ প্রতাপ সিংহ এবং মনোজ পাণ্ডেয় বিজেপির সমর্থনে খোলাখুলিভাবে এসেছিলেন। সপার মতে, এই নেতারা সপার আদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে বিজেপির সাম্প্রদায়িক এবং বিভাজনমূলক রাজনীতির সমর্থন করেছেন।

পার্টি স্পষ্ট করেছে যে, এই সিদ্ধান্ত 'শৃঙ্খলা'কে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং সপার মূল আদর্শকে রক্ষা করার জন্য নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপটি এমন সময় নেওয়া হয়েছে যখন এই বিধায়কদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল এবং 'অনুগ্রহকাল'ও দেওয়া হয়েছিল।

রাজ্যসভা নির্বাচন সংক্রান্ত বিদ্রোহের ঘটনা

২০২৪ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনের সময় সপার সাতজন বিধায়ক দলীয় লাইন থেকে সরে গিয়ে বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। এই বিদ্রোহী বিধায়কদের মধ্যে অভয় সিংহ, রাকেশ প্রতাপ সিংহ এবং মনোজ পাণ্ডেয় ছাড়াও রাকেশ পাণ্ডেয়, পূজা পাল, বিনোদ চতুর্বেদী এবং আশুতোষ মৌর্যও ছিলেন। তবে, দল এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র তিনজন বিধায়ককে বহিষ্কার করেছে এবং বাকি চারজনকে কিছু সময়ের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে।

খোলাখুলি বক্তব্য শাস্তির কারণ হয়েছে

যে তিনজন বিধায়ককে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে দলের বিরুদ্ধে খোলাখুলি বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। অভয় সিংহ এবং মনোজ পাণ্ডেয় সপাকে হিন্দুবিরোধী বলেও অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, রাকেশ প্রতাপ সিংহ সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে আখিলেশ যাদবকে 'ছোটো মনের মানুষ' বলেছিলেন। এই বক্তব্য এবং বিজেপি নেতাদের সাথে দেখা করার ঘটনা দলকে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।

জাতিগত সমীকরণকেও সামলানোর কৌশল

বহিষ্কৃত তিনজন বিধায়কই সাধারণ বর্গের। অভয় সিংহ এবং রাকেশ প্রতাপ সিংহ ঠাকুর জাতিভুক্ত, আর মনোজ পাণ্ডেয় ব্রাহ্মণ। সপার বর্তমান কৌশল পিডিএ অর্থাৎ পিছড়া, দলিত এবং সংখ্যালঘু বর্গকে কেন্দ্র করে গঠিত। তাই এই তিন নেতাকে বাদ দেওয়া দলের রাজনৈতিক গণিতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না।

উল্টো, এতে এই বার্তা যায় যে দল শৃঙ্খলাহীনতা সহ্য করবে না, সেটা যে কোনও জাতি বা অঞ্চলের নেতা হোক না কেন। অন্যদিকে, চারজন বিধায়ক—পূজা পাল, রাকেশ পাণ্ডেয়, বিনোদ চতুর্বেদী এবং আশুতোষ মৌর্যকে এখনও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। এই নেতারা দলের প্রধানের উপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি এবং ভবিষ্যতে উন্নতি করার আশা প্রকাশ করেছেন।

চার বিদ্রোহী কেন রক্ষা পেল, কী কারণ?

পূজা পাল এবং আশুতোষ মৌর্য পিছড়া জাতির। অন্যদিকে, রাকেশ পাণ্ডেয় এবং বিনোদ চতুর্বেদী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। সপা এই চার নেতার প্রতি এখনও নরম মনোভাব পোষণ করছে। দলের মতে, তাদের আচরণ অন্য তিনজনের মতো 'জনবিরোধী' ছিল না। সপা এটাও স্পষ্ট করেছে যে, ভবিষ্যতে যদি এই বিধায়কদের আচরণ শৃঙ্খলাহীন বলে মনে হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় লাইনে ফিরে আসার শেষ সুযোগ

সপা-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, চার বিদ্রোহীকে 'ভালো আচরণ'-এর ভিত্তিতে এখনও সময় দেওয়া হয়েছে। দল চায় তারা আবার লাইনে ফিরে আসুক এবং সপার আদর্শের সমর্থন করুক। দল এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, জনবিরোধী বা বিজেপি সমর্থক কর্মকাণ্ডের জন্য কোনও স্থান নেই। যেখানে থাকবেন সেখানেই নির্ভরযোগ্য থাকবেন, এই বার্তা স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।

ব্যক্তিগত আক্রমণ সমীকরণ নষ্ট করেছে

বহিষ্কৃত তিন বিধায়ক শুধুমাত্র দলীয় লাইন ভাঙেনি, বরং দলের প্রধানের উপরও সরাসরি আক্রমণ করেছে। এতে সপা নেতৃত্বের সুনামও প্রশ্নাতীত হয়েছে। মনোজ পাণ্ডেয় এবং অভয় সিংহ যেখানে আখিলেশ যাদবকে 'হিন্দুবিরোধী' বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেখানে রাকেশ প্রতাপ সিংহ ব্যক্তিগত মন্তব্যও করেছেন। এই আক্রমণাত্মক মনোভাবই তাদের বরখাস্তের প্রধান কারণ হয়েছে।

Leave a comment