রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করেছেন, যেখানে বিলের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, যদি সংবিধান পুরোপুরি ক্ষমতা প্রদান করে, তাহলে আদালতের হস্তক্ষেপ ভুল।
নয়াদিল্লি: ভারতে বিল অনুমোদনের প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সাংবিধানিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ৮ই এপ্রিল একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যেখানে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির উপর বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, রাজ্যপালকে যেকোনো বিলের উপর তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং যদি বিল পুনরায় পাশ হয়, তাহলে রাজ্যপালকে এক মাসের মধ্যে অনুমোদন দিতে হবে। এই রায়ের উপর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু প্রশ্ন তুলেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং রাষ্ট্রপতির আপত্তি
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, কোনো বিল যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতিকেও তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই রায় নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, সংবিধানের ২00 এবং ২01 অনুচ্ছেদের অধীনে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে বিল অনুমোদন বা বাতিল করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি। তাই সুপ্রিম কোর্টের সময়সীমা নির্ধারণ সংবিধানের ক্ষমতার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের মতো।
রাষ্ট্রপতি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি সংবিধান কোনো বিলের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পুরো ক্ষমতা প্রদান করে, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে মাঝখানে হস্তক্ষেপ কেন করছে? কি আদালত সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে না?
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ১৪টি প্রশ্ন
রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে বেশ কিছু সাংবিধানিক দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- কি রাজ্যপাল সংবিধানের ২00 অনুচ্ছেদের অধীনে বিলের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সকল বিকল্প ব্যবহার করতে পারেন?
- কি রাজ্যপালকে মন্ত্রিসভার পরামর্শে বাধ্য হতে হবে?
- কি রাজ্যপালের সাংবিধানিক বিবেচনার ন্যায়িক পর্যালোচনা করা যায়?
- কি অনুচ্ছেদ ৩৬১ রাজ্যপালের কাজের ন্যায়িক পর্যালোচনাকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে?
- কি সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার জন্য আদালত আদেশ জারি করতে পারে?
- কি সুপ্রিম কোর্টকে অনুচ্ছেদ ১৪৩ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
- কি বিলের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আদালতের হস্তক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত?
- কি সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সংবিধান বা আইনের বর্তমান বিধানের বিরুদ্ধে হতে পারে?
এই বিতর্কের অর্থ কি?
এই ঘটনা সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিচার বিভাগের সীমা এবং নির্বাহী শক্তির অধিকারের মধ্যে ভারসাম্যের সাথে সম্পর্কিত। সুপ্রিম কোর্ট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দ্রুততা এবং স্বচ্ছতাকে মাথায় রেখে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে যাতে বিলের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধা না থাকে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতির যুক্তি, সাংবিধানিক বিধানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের মতো।