পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বৃদ্ধি, এদিকে আদনান সামি ফওয়াদ চৌধুরীকে লক্ষ্য করেছে। তার পাকিস্তানি পাসপোর্ট ২০০৫ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছিল।
নয়াদিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনা আরও বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে, খ্যাতনামা ভারতীয় গায়ক ও সঙ্গীতশিল্পী আদনান সামি পাকিস্তানের প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ফওয়াদ চৌধুরীকে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য তীব্র ভৎসনা করেছেন। এই বিতর্ক তখন সামনে আসে যখন চৌধুরী সোশ্যাল মিডিয়ায় আদনান সামির ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে মন্তব্য করেন। এটি একটি নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করে, যা এখন পুরো বিশ্বে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
ফওয়াদ চৌধুরীর টুইটের প্রতিক্রিয়া
চৌধুরী ফওয়াদ হুসেন সম্প্রতি একজন ভারতীয় সাংবাদিকের টুইট শেয়ার করে লিখেছেন, "আদনান সামির ব্যাপারে কি?" এই টুইটের মাধ্যমে তিনি সামির ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এই টুইটটি একটি পোস্টের সাথে করেছেন, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এর জবাবে আদনান সামি টুইট করেছেন, "এই অশিক্ষিত বোকাকে কে বুঝাবে!" তিনি এই টুইটের মাধ্যমে ফওয়াদ চৌধুরীর ব্যঙ্গের কড়া জবাব দিয়েছেন এবং ভারতে আসা থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব পাওয়া পর্যন্ত সকল ঘটনা ব্যাখ্যা করেছেন।
আদনান সামির নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক
আদনান সামির জন্ম লন্ডনে হয়েছিল, কিন্তু তিনি পাকিস্তানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি ভারতে এসে এখানে সঙ্গীতে নিজের পরিচয় তৈরি করেন। ২০০৫ সালে তাঁর পাকিস্তানি পাসপোর্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছিল এবং পাকিস্তান সরকার তা নবায়নের অনুমতি দেয়নি। এরপর সামি ভারত সরকারের কাছে তাঁর ভিসার অবস্থা বৈধ করার আবেদন করেন, যা গ্রহণ করা হয় এবং ২০০৬ সালে তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
সামি বলেন, তাঁর পরিবারের শিকড় লাহোরে নয়, বরং পেশোয়ারে। তাঁর পিতা পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর অভিজ্ঞ রাজনয়নীতক ছিলেন এবং তাঁর মা মূলত জম্মু-কাশ্মীরের।
পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার উপর সামির টুইট
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে একটি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল, যাতে ২৬ জন নিহত হয়েছিল। এই হামলার পর সামি টুইট করে লিখেছেন, "আশা ও প্রতিশ্রুতি ভরা নির্দোষ জীবন নির্মমভাবে শেষ হয়ে গেল এবং পিছনে রেখে গেল কান্না, ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন এবং অসহ্য দুঃখ। মানবতা কীভাবে এত নিচুতায় নেমে যেতে পারে?"
তিনি এই টুইটের মাধ্যমে হামলার প্রতি তাঁর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং মানবতার ক্ষতি করে এমন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করেছেন।
নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সমালোচনা
সামি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় আরও বলেছেন যে ফওয়াদ চৌধুরী তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে তিনি পাকিস্তানি, কিন্তু সামি স্পষ্ট করে বলেছেন যে তাঁর শিকড় লাহোরে নয়, বরং পেশোয়ারে। এছাড়াও তিনি বলেছেন যে তাঁর পিতা পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তাঁর মা জম্মু-কাশ্মীরের।
সামি আরও বলেছেন যে কারও সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তার পরিচয়, ইতিহাস এবং প্রেক্ষাপট বুঝে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও তিনি মনে করেন যে নাগরিকত্ব কেবল কাগজে নয়, বরং সেই দেশের প্রতি আনুগত্য এবং সম্মানের সাথে যুক্ত।
ভারতীয় নাগরিকত্বের পর সামির যাত্রা
আদনান সামিকে ১৩ই মার্চ ২০০১ সালে ইসলামাবাদস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন এক বছরের ভিজিটর ভিসায় ভারতে ডেকে আনে। পরে তাঁর ভিসা সময়ে সময়ে বৃদ্ধি করা হয়। তাঁর পাকিস্তানি পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ায় তিনি মানবিক ভিত্তিতে ভারতে থাকার আবেদন করেন, যা ভারত সরকার মঞ্জুর করে। ডিসেম্বর ২০০৫ সালে তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
সামি ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পে নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন এবং অনেক হিট গান দিয়েছেন যেমন 'কবি তো নজর মিলাও', 'তেরা চেহেরা', 'লিফট করা দে', এবং 'ভর দো জোলি'। তাঁর সঙ্গীত যাত্রা ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে।