ইউনুস সরকার: ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ও কৌশলগত উদ্বেগ

ইউনুস সরকার: ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ও কৌশলগত উদ্বেগ
সর্বশেষ আপডেট: 11-04-2025

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনুস তাঁর শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাধ্যমে একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, সম্প্রতি চীন সফর থেকে ফিরে তাঁর দেওয়া বক্তব্য কেবলমাত্র একটি সাধারণ মন্তব্য ছিল।

ভারত-বাংলাদেশ: বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পূর্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে ভারত থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করে চীন-পাকিস্তানের কাছাকাছি যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। BIMSTECH সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইউনুসের মধ্যে যদিও দেখা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী ঘটনাক্রম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই দেখা সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

কট্টরপন্থীদের উপর বর্ধিত নির্ভরতা

মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার এখন কিছু ইসলামী কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর প্রভাবের অধীনে চলে গেছে। এই গোষ্ঠীগুলিই শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল এবং এখন নিজেরাই ক্ষমতার অংশীদার হয়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠীগুলির চিন্তাধারা কেবল ভারতবিরোধী নয়, তারা বাংলাদেশের উদার ও বহুত্ববাদী চরিত্রকে মুছে ফেলে একটি ইসলামী গণরাজ্যের দিকে দেশকে নিয়ে যেতে চায়।

এই কারণেই হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলাগুলি গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশপ্রেমিক সন্ত স্বামী চিন্ময় প্রভুকে ক্রমাগত নির্যাতন করা হচ্ছে, কারণ তিনি হিন্দুদের পলায়ন না করার এবং বাংলাদেশেই তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। এটি একটি ইঙ্গিত যে বাংলাদেশের বহুত্ববাদী বুনট দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে।

ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য এবং ভূ-রাজনৈতিক ইঙ্গিত

চীন সফর থেকে ফিরে ইউনুস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে 'ল্যান্ড লকড' বলে উল্লেখ করে বলেছেন যে, সমুদ্রের উপর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ আছে। এই বক্তব্যের পিছনে কেবলমাত্র ভৌগোলিক অহংকার নয়, একটি কৌশলগত বার্তাও লুকিয়ে আছে। বাংলাদেশ এখন ভারতের প্রতি ঐতিহ্যগত সহযোগী ভূমিকা ত্যাগ করে একটি অধিক স্বাধীন, বরং সংঘাতপূর্ণ নীতির দিকে এগোচ্ছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: সংযম ও সতর্কতা

বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রতি এখনও পর্যন্ত ভারত সংযম অবলম্বন করেছে। বাণিজ্য, খাদ্য সামগ্রী এবং টেক্সটাইল শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে, কিন্তু ভিসা নীতিতে পরিবর্তন করে ভারত নিজের অসন্তোষের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষ করে মেডিকেল ভিসায় যে কমানো হয়েছে তা দেখায় যে, ভারত মানবিক মূল্যবোধের আড়ালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের সাথে আপোষ করবে না।

নিরাপত্তা ও কৌশলগত সামরিক অবস্থান

বাংলাদেশে পাকিস্তান ও চীনের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ ভারতের জন্য বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যখন 'চিকেন নেক' এর মতো সংবেদনশীল ভৌগোলিক স্থানের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে আছে। ইউনুস সরকার থেকে এখন সেই ধরণের নিরাপত্তা সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই যা শেখ হাসিনা সরকারের সময় সহজে পাওয়া যেত। ভারতকে এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য বিকল্প কৌশল তৈরি করতে হবে। এছাড়াও, আঞ্চলিক কূটনীতিতে নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারের মতো প্রতিবেশীদের সাথে সমন্বয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন যাতে চীনের ঘেরাওকে কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করা যায়।

যতক্ষণ না বাংলাদেশে স্থায়ী ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়, ততক্ষণ ভারতকে যেকোনো রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে নিজের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। যদি বাংলাদেশের ভূমি ভারতবিরোধী কার্যকলাপের আখড়া হয়ে ওঠে, তাহলে ভারতকে কঠোর অবস্থান নিতেও পিছপা হওয়া উচিত নয়।

Leave a comment