জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং পরবর্তীতে পরিচালিত অপারেশন সিন্দুরের পর ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। ভারত এখন শুধুমাত্র সীমান্তে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক উন্মোচনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নয়াদিল্লি: পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার অভিযান আরও তীব্র করেছে। এই প্রেক্ষিতে ভারতের একটি প্রতিনিধি দল ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে আছেন জনতা দল (যুক্ত) -এর নেতা সংজয় ঝা।
ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এই উদ্যোগ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন করার দিকে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পাহলগাম হামলা এবং ভারতের কর্মকাণ্ড
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা সমগ্র দেশকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। এর পর ভারত তার জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল গ্রহণ শুরু করে। অপারেশন সিন্দুরের সফল সমাপ্তি সন্ত্রাসবাদীদের গুরুতর ক্ষতি করেছে, যা ভারতের সেনা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মনোবলকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে।
এই হামলার পর ভারত শুধুমাত্র দেশের ভেতরেই নয়, বিদেশেও তার কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে। ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী মডিউলের প্রকৃত রূপ উন্মোচন করছে।
ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন জোট
ভারতের প্রতিনিধি দল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দেশটির প্রধান ইসলামিক সংগঠন নাহদাতুল উলামা (NU)-এর নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে সহযোগিতা শক্তিশালী করা। সংজয় ঝা বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ার সাথে ভারতের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব শক্তিশালী হয়েছে। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও শান্তি রক্ষার জন্য ইন্দোনেশিয়া সর্বদা পাশে ছিল।
নাহদাতুল উলামার প্রতিনিধিরাও পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করে এবং বলেছেন যে সাধারণ মানুষের উপর হামলা তারা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে। তারা আঞ্চলিক স্থায়িত্ব ও শান্তির জন্য ভারতের সাথে অংশীদারিত্বের আশা প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কৌশল
এই বৈঠকে বিশেষ করে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী প্রস্তাবগুলিকে OIC (OIC) সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাস হতে বাধা দেওয়ার কৌশলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভারত ইন্দোনেশিয়ার কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বিচ্ছিন্ন করা যায়। এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত মিশর, ওমান, কাজাখস্তান এবং বাহরাইন সহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। এই দেশগুলিও পাহলগাম হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
কলম্বিয়া বিতর্কেরও সমাধান করেছে ভারত
এই সময় ভারতের আরও একটি প্রতিনিধি দল কলম্বিয়া গিয়েছিল। সেখানে ভারতের অপারেশন সিন্দুর নিয়ে কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে ভারতের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর অবিলম্বে এই বিবৃতিতে আপত্তি জানিয়েছেন এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কলম্বিয়ার উপ-বিদেশ মন্ত্রী রোজা ইয়োলান্ডা ভিলাভিসেন্সিও বিষয়টির সম্পূর্ণ তথ্য নেওয়ার পর ভারতের পক্ষে নতুন বিবৃতি জারি করার কথা বলেছেন, যার ফলে ভারতের সুনাম ও প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়েছে।
আজ সন্ত্রাসবাদ শুধুমাত্র একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। এই হুমকির মোকাবেলা করার জন্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা ও ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। ভারত এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধুমাত্র তার অঞ্চলের নিরাপত্তা শক্তিশালী করেনি, বরং এই বার্তাও দিয়েছে যে কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল ধর্ম ও দেশকে একত্রিত হতে হবে।