পাহলগাম হামলার পর ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিক অভিযান

পাহলগাম হামলার পর ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিক অভিযান
সর্বশেষ আপডেট: 01-06-2025

জম্মু-কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর এবং এর পরে পরিচালিত অপারেশন সিন্দুরের পর ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ভারত এখন শুধুমাত্র সীমান্তে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে উন্মোচন করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

নয়াদিল্লি: পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের অভিযান আরও তীব্র করেছে। এই ক্রমেই ভারতের একটি প্রতিনিধি দল ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছে, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। জনতা দল (যু) -এর নেতা সংজয় ঝা এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ এবং কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এই উদ্যোগ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন করার দিকে একটি বড় ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।

পাহলগাম হামলা এবং ভারতের সক্রিয়তা

জম্মু-কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা সমগ্র দেশকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। এর পর ভারত নিজের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল অবলম্বন শুরু করেছে। অপারেশন সিন্দুরের সফল সমাপ্তি সন্ত্রাসবাদীদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে, যার ফলে ভারতের সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থার মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই হামলার পর ভারত শুধুমাত্র দেশের ভিতরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেনি, বরং বিদেশেও নিজের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী মডিউলের ঘটনা উন্মোচন করছে।

ইন্দোনেশিয়া সফর: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন জোট

ভারতের প্রতিনিধি দল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দেশের প্রধান ইসলামিক সংগঠন নাহদাতুল উলামা (এনইউ)-এর নেতাদের, রাজনীতিবিদদের, সাংবাদিকদের এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ এবং কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে সহযোগিতা শক্তিশালী করা। সংজয় ঝা বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ার সাথে ভারতের বন্ধুত্ব এবং অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য ইন্দোনেশিয়া সবসময় পাশে ছিল।

নাহদাতুল উলামার প্রতিনিধিরাও পাহলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করে এবং বলেছে যে তারা সাধারণ মানুষের উপর হামলার সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে। তারা অঞ্চলে স্থায়িত্ব এবং শান্তির জন্য ভারতের সাথে অংশীদারিত্বের আশা প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কৌশল

এই বৈঠকে বিশেষ করে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী প্রস্তাবগুলিকে ওআইসি (OIC) জাতীয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে গৃহীত হওয়া থেকে রোধ করার কৌশলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভারত ইন্দোনেশিয়ার কাছে সহযোগিতার আবেদন করেছে যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বিচ্ছিন্ন করা যায়। এই উদ্যোগ এমন সময় এসেছে যখন ভারত মিশর, ওমান, কাজাখস্তান এবং বাহরাইন সহ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। এই দেশগুলিও পাহলগাম হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

কলম্বিয়া বিতর্কের সমাধানও করেছে ভারত

এই সময় ভারতের আরেকটি প্রতিনিধি দল কলম্বিয়াও গিয়েছিল। সেখানে ভারতের অপারেশন সিন্দুর নিয়ে কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে, ভারতের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর তৎক্ষণাৎ এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কলম্বিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী রোজা ইয়োলান্ডা ভিলাভিসেন্সিও বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য প্রাপ্তির পর ভারতের পক্ষে নতুন বিবৃতি জারি করার কথা বলেছেন, যার ফলে ভারতের সুনাম এবং প্রভাব শক্তিশালী হয়েছে।

আজ সন্ত্রাসবাদ শুধুমাত্র একটি দেশের সমস্যা নয় বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হুমকির মোকাবেলা করার জন্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। ভারত এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজের অঞ্চলের নিরাপত্তা শক্তিশালী করেনি, বরং এই বার্তাও দিয়েছে যে কট্টরপন্থী এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল ধর্ম ও দেশকে একত্রে আসতে হবে।

Leave a comment