অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (এপিসিসি)-র সভাপতি গৌরব গগৈ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পত্র লিখেছেন, যেখানে তিনি অসমের এক মহিলার রহস্যজনক মৃত্যুর তাৎক্ষণিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
গৌরব গগৈ: উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে গঙ্গার তীরে এক যুবতীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মৃতার পরিচয় অসমের দিমা হাও জেলার বাসিন্দা রোসমিতা হোজাই হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। রোসমিতার রহস্যজনক মৃত্যুতে কেবল তার পরিবার নয়, রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভা সদস্য গৌরব গগৈ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে একটি কঠোর কিন্তু আবেগঘন চিঠি লিখে তাৎক্ষণিক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
রেলওয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন রোসমিতা, রহস্যজনক পরিস্থিতিতে গঙ্গার তীরে মৃতদেহ উদ্ধার
জানা গেছে, রোসমিতা হোজাই দিল্লিতে রেলওয়ে ভর্তি বোর্ড (RRB)-এর পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। পরীক্ষার পর তিনি দুই অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে দিল্লি থেকে ঋষিকেশ যান। ৬ই জুন তিনি হঠাৎ করে নিখোঁজ হন এবং ৫ দিন পর তার মৃতদেহ গঙ্গার তীরে উদ্ধার করা হয়। এই দুঃখজনক ঘটনায় কেবলমাত্র হোজাই পরিবার নয়, সমগ্র অসমে উদ্বেগ ও ক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে।
অসম কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ তার চিঠিতে লিখেছেন, একজন মেধাবী ছাত্রীর নিখোঁজ হওয়ার পর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির নয়, হাজার হাজার এমন যুবক-যুবতীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যারা শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের সন্ধানে অন্য রাজ্যে ভ্রমণ করে। গগৈ মুখ্যমন্ত্রী ধামির কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টি দেখেন এবং তদন্তে কোনো ধরনের অবহেলা না হয় তা নিশ্চিত করেন।
‘ঘটনার সকল দিক তুলে ধরে তদন্ত হোক’: গগৈর আবেদন
চিঠিতে গগৈ স্পষ্ট করে বলেছেন যে এই ঘটনাকে কেবলমাত্র দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তদন্ত কেবলমাত্র যুবতীর মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য নয়, বরং কোন পরিস্থিতিতে তিনি দুই অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে ঋষিকেশে গিয়েছিলেন, কিসের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন এবং পূর্বে কোনো সম্পর্ক ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থার কাছে দাবি করেছেন যে, ঘটনায় জড়িত সকল ব্যক্তির সাথে গভীর জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক এবং সকল ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট, হোটেল রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজ ও কল ডিটেইলস খতিয়ে দেখা হোক।
গগৈ তার চিঠিতে উত্তরাখণ্ড সরকারকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, সময়োপযোগী পদক্ষেপই এ ধরনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। রোসমিতার পরিবার ও তার সম্প্রদায়কে ন্যায় বিচার পেতে হবে এবং এটি তখনই সম্ভব যখন তদন্তে স্বচ্ছতা ও গতি উভয়ই থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও এই ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ধামিকে পৃথক চিঠি লিখেছেন। তিনিও বলেছেন, যদি কোনো ধরনের অপরাধমূলক জড়িত থাকে তবে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শর্মা এও দাবি করেছেন যে অসম সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো সমন্বয়ক কর্মকর্তাকে তদন্তে যুক্ত করা হোক।
এই ঘটনায় উত্তরাখণ্ড পুলিশ ও ঋষিকেশ প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে স্থানীয় পুলিশ এটিকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য করে শুরু করেছিল, কিন্তু এখন রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের নেতারা যখন এ বিষয়ে সক্রিয় হয়েছেন, তখন তদন্তের দিক হত্যা বা ষড়যন্ত্রের দিকে ঘুরছে বলে মনে হচ্ছে।