ইলাহাবাদ হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়: অনলাইন গেমিং ও বাজি ধরায় কঠোর আইনের আহ্বান

🎧 Listen in Audio
0:00

ইলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে অনলাইন গেমিং এবং বাজি ধরার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়ে নতুন এবং কার্যকর আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।

প্রয়াগরাজ: ইলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রায়ে অনলাইন গেমিং এবং ভার্চুয়াল বাজি ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে কঠোর ও আধুনিক আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে। কোর্ট বলেছে যে ১৮৬৭ সালে প্রণীত জনসাধারণের জুয়া আইন আজকের ডিজিটাল যুগে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে এবং এটি বর্তমান বাস্তবতার সাথে মেলে না।

ন্যায়ালয়ের মন্তব্য: পরিবর্তিত সময়ে পরিবর্তিত আইন

বিচারপতি বিনোদ দিবাকরের একক বেঞ্চ আগ্রা निবাসী ইমরান খান এবং অন্যদের একটি আবেদনের শুনানি করে এই মন্তব্য করেছেন। আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের জুয়া আইন, ১৮৬৭ অনুসারে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তারা নিম্ন আদালত কর্তৃক জারি করা সামনকে চ্যালেঞ্জ করে অপরাধমূলক মামলা বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন।

কোর্ট দেখেছে যে অনলাইন বাজি ধরা এবং গেমিংয়ের বর্তমান অবস্থার উপর কোনও কার্যকর এবং স্পষ্ট আইন দেশে বিদ্যমান নেই। কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে যে আজ অনলাইন গেমিং এবং বাজি ধরা আন্তর্জাতিক সার্ভার থেকে পরিচালিত হয়, যা কেবল ভারতের রাজ্যগুলির নয় বরং দেশের সীমানার বাইরেও অবস্থিত।

সরকারকে দেওয়া নির্দেশনা

হাইকোর্ট উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে যা অনলাইন গেমিং এবং বাজি ধরার সাথে সম্পর্কিত বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে একটি কার্যকর আইনগত কাঠামো তৈরি করবে। এই কমিটির সভাপতিত্ব রাজ্যের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা প্রফেসর কে.ভি. রাজু করবেন এবং इसमें প্রধান সচিব (রাষ্ট্রীয় কর), এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত এবং আইনি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এই কমিটি ডিজিটাল মাধ্যমে জুয়া এবং গেমিং থেকে উদ্ভূত ঝুঁকির তদন্ত করবে এবং পরামর্শ দেবে যে কোন ধরণের আইনি ব্যবস্থা অবিলম্বে কার্যকর করা যেতে পারে।

তরুণদের উপর প্রভাব

কোর্ট তার রায়ে বিশেষভাবে বলেছে যে আজকের তরুণ সমাজ অনলাইন গেমিং এবং বাজি ধরার জালে আটকা পড়ছে। এর ফলে তারা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে না, বরং মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, অনিদ্রা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা போன்ற গুরুতর সমস্যায়ও ভোগছে। কোর্ট বলেছে যে ফ্যান্টাসি স্পোর্টস, পোকার, অনলাইন ক্যাসিনো, বেটিং অ্যাপ এবং ই-স্পোর্টস-এর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আইনের অবস্থা অস্পষ্ট, যার ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

পুরানো আইন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে

জনসাধারণের জুয়া আইন, ১৮৬৭ সেই সময়ের জন্য উপযুক্ত ছিল যখন জুয়া শুধুমাত্র ভৌত জুয়াঘরে সীমাবদ্ধ ছিল। এই আইনের অধীনে মাত্র ২০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আজকের সময়ে কোটি কোটি টাকার ডিজিটাল বাজি ধরা হচ্ছে, যার ফলে সরকারের রাজস্ব লোকসান হচ্ছে এবং নাগরিকরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক উদাহরণও উপস্থাপন করা হয়েছে

কোর্ট এটিও বলেছে যে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এই সমস্যার সমাধানের জন্য ইতিমধ্যেই কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। উদাহরণস্বরূপ,

  • ইউকে ২০০৫ সালে গ্যাম্বলিং আইন প্রণয়ন করেছে, যাতে লাইসেন্সিং, বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থপাচার রোধের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  • অস্ট্রেলিয়া ২০০১ সালে অনলাইন বাজি ধরা নিয়ন্ত্রণ করেছে।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি এবং পেনসিলভেনিয়ার মতো রাজ্যগুলি অনলাইন ক্যাসিনোকে বৈধ এবং নিয়ন্ত্রিত করেছে।
  • সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও অনলাইন বাজি ধরার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কোর্টের স্পষ্ট বার্তা: এখন কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন

কোর্ট বলেছে যে ভারত সরকারের নীতি আয়োগ ২০২০ সালে একটি নীতি পত্র প্রকাশ করেছিল যাতে অনলাইন গেমিংয়ের আইনগত প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু আজও এই বিষয়টি ‘গ্রে জোন’ অর্থাৎ অস্পষ্ট অঞ্চলে রয়েছে। কোর্ট উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিবের কাছে আদেশের একটি কপি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে যাতে কমিটি দ্রুত গঠন করা যায় এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যায়।

Leave a comment