মোদীর ভোপাল সফর: দেবী অহিল্যাবাইয়ের স্মৃতি ও নারী সশক্তিকরণের উপর জোর

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে উপস্থিত হয়েছেন, যেখানে তিনি দেবী অহিল্যাবাই সশক্তিকরণ মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তিনি রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক বহু নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।

ভোপাল: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে অনুষ্ঠিত দেবী অহিল্যাবাই সশক্তিকরণ মহাসম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ সংস্কৃতি দপ্তর কর্তৃক লোকমাতা অহিল্যাবাই হোলকারের জন্মদিন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই সময় প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র অহিল্যাবাইয়ের জীবন ও সংগ্রাম স্মরণ করেননি, বরং নারী সশক্তিকরণের উপর জোর দিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ও কাজের উদ্বোধন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মোহন ভাগবতও এই অনুষ্ঠানে পিএম মোদীর আগমনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

অহিল্যাবাই হোলকার: অনুপ্রেরণার উৎস

পিএম মোদী তার ভাষণের শুরুতে লোকমাতা অহিল্যাবাইয়ের ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ২৫০-৩০০ বছর আগে যখন ভারত দাসত্বের বেড়িতে বন্দী ছিল, তখন অহিল্যাবাই নিজের সাহস ও দৃঢ়চেতায় শুধুমাত্র নিজের রাজ্যের সমৃদ্ধিই বাড়াননি, বরং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও সংরক্ষণ করেছিলেন। গরিবদের সাহায্য করা, মন্দির ও তীর্থস্থান পুনর্নির্মাণের মতো কাজ তিনি করে গেছেন, যা আজও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।

পিএম মোদী আরও বলেছেন যে, অহিল্যাবাইয়ের জীবন শিক্ষা দেয় যে, যখন মনে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্প থাকে, তখন কোনও চ্যালেঞ্জই অসম্ভব নয়। তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেছেন যে, অহিল্যাবাই নারীদের অধিকারের জন্যও বহু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যেমন মেয়েদের বিবাহের যথাযথ বয়সের উপর জোর দেওয়া এবং বিধবাদের পুনর্বিবাহের অধিকার প্রদান করা। এটি সেই সময়ের চিন্তাধারার থেকে অনেক এগিয়ে ছিল, যখন নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা করাও কঠিন বলে মনে করা হতো।

নারী সশক্তিকরণের উপর বিশেষ জোর

পিএম মোদী বলেছেন যে, আজকের সরকার লোকমাতা অহিল্যাবাইয়ের নীতি অনুসরণ করে কাজ করছে। তিনি ‘নাগরিক দেবো ভবঃ’ মন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এটি ঋণ যে, সে সমাজের সেবা করবে। তিনি বলেছেন যে, সরকারের সকল পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে নারীরা রয়েছেন। মোদী এই তথ্যটি ভাগ করে নিয়েছেন যে, সরকার নারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বিশেষ অভিযান চালিয়েছে, যার অধীনে ৩০ কোটিরও বেশি নারীর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই মাধ্যমেই পরিকল্পনার সুবিধা সরাসরি নারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

মুদ্রা যোজনায় ৭৫% এর বেশি প্রাপক নারী, যা নারী সশক্তিকরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে তার প্রমাণ। পিএম মোদী নারী সংরক্ষণ আইনের উল্লেখ করে বলেছেন যে, এখন সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়েছে, যার ফলে তারা প্রতিটি স্তরে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

নারী সুরক্ষা ও মাতৃশক্তির গৌরব

পিএম মোদী বলেছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলি ভারতীয় নারীদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, ভারতে সর্বদাই নারীদের সশক্তি করার প্রথা ছিল। তিনি বলেছেন যে, ২৫০-৩০০ বছর আগে সেনাবাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ এবং নারী সুরক্ষা দল গঠন, দুটোই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, যা আজও অনুপ্রেরণা।

পিএম মোদী অপারেশন সিন্দুরেরও উল্লেখ করেছেন, যা আতঙ্কবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের সবচেয়ে বড় ও সফল অভিযান ছিল। এই অভিযানে বিএসএফ-এর নারীরাও সামনে ছিলেন এবং তারা অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আমাদের মেয়েরা এখন শুধু সেনাবাহিনীতেই নয়, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীতেও অগ্রভাগে লড়াই করছে।

তিনি জানিয়েছেন যে, সেনাবাহিনীতে প্রথমবারের মতো নারী ক্যাডেটদের প্রথম ব্যাচ ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি (এনডিএ) থেকে পাস আউট হয়েছে, যা নারীদের সামরিক সেবায় বর্ধিত অংশগ্রহণের উদাহরণ।

মেয়েদের সাহসিক সাফল্য

পিএম মোদী দুই নারী নাবিকের উদাহরণও দিয়েছেন, যারা মোটরবিহীন নৌকা দিয়ে প্রায় ২৫০ দিনের সমুদ্রযাত্রা সম্পন্ন করেছেন। এই সময় তারা বহু সমুদ্রের ঝড়ো আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাদের সাহসিক ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। পিএম বলেছেন যে, নক্সালবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান হোক বা সীমান্তপার আতঙ্কবাদ, আজ আমাদের মেয়েরা ভারতের সুরক্ষার ঢাল হয়ে উঠেছে।

Leave a comment