রাজস্থানে আবারও বিতর্কিত ব্যবসায়ী ললিত মোদীর পরিবারের সাথে যুক্ত একটি কোম্পানি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী কিশোরীলাল মীণা রবিবার হঠাৎ করে অভিযান চালিয়ে কোটা জেলার কাছে অবস্থিত একটি সার উৎপাদন কারখানা এবং তার সাথে সংযুক্ত গুদামগুলি সিলগালা করে দিয়েছেন। অভিযানের সময় সেখান থেকে বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা এখন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই পুরো তদন্তের বিশেষ ব্যাপার হলো কৃষিমন্ত্রী নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং কর্মকর্তাদের সাথে মিলে নমুনা সংগ্রহ এবং নথিপত্র পরীক্ষা করেছেন। তিনি মিডিয়াকে জানিয়েছেন, "আমি নিজেই জানতে চেয়েছি এই কারখানা এবং গুদাম কার নামে, এবং যে তথ্যগুলি সামনে এসেছে, সেগুলি অত্যন্ত চমকপ্রদ।"
অভিযানের সূচনা
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সার ও সারক উৎপাদন বিভাগে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল যে, এলাকার কিছু গুদামে মানসম্মতের চেয়ে কম মানের সার মজুত করে উচ্চমূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর কৃষিমন্ত্রী নিজেই এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে সংশ্লিষ্ট গুদাম এবং কারখানায় গোপন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রবিবার হঠাৎ করে মন্ত্রী কিশোরীলাল মীণা নিজেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে কর্মকর্তাদের দল নিয়ে অভিযান চালান। এই কারখানা এবং গুদাম ললিত মোদীর পরিবারের সাথে যুক্ত কোম্পানীর নামে নিবন্ধিত বলে অভিযোগ উঠেছে, যিনি আগে আইপিএলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং বর্তমানে বিদেশে আছেন।
ঘটনাস্থলে কী পাওয়া গেল?
অভিযানের সময় কারখানার চত্বরে ব্যাপক পরিমাণ প্যাকিং সামগ্রী, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্যাগ এবং লেবেল ছাড়া সার পাওয়া গেছে। গুদামগুলিতে প্রায় ৫০০ টন এর বেশি সার মজুত ছিল, যার উপর উৎপাদন তারিখ এবং মান সম্পর্কিত কোনো তথ্য ছিল না। কর্মকর্তারা ১২ প্রকার নমুনা সংগ্রহ করেছেন যা জয়পুরের রাজ্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, সারের মান অনেক কম পাওয়া গেছে এবং কৃষকদের জন্য এর বিতরণ ক্ষতিকারক হতে পারে।
কৃষিমন্ত্রীর বিবৃতি
কৃষিমন্ত্রী কিশোরীলাল মীণা বলেছেন: এটি কেবল অভিযান নয়, কৃষকদের সাথে হওয়া প্রতারণার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা। আমি পুরো বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। কারখানা এবং গুদাম অবিলম্বে সিলগালা করা হয়েছে। রিপোর্ট আসা পর্যন্ত কোনো সামগ্রী এখান থেকে সরানো হবে না। তিনি আরও বলেছেন, যদি এটা প্রমাণিত হয় যে ইচ্ছাকৃতভাবে নকল সার বাজারে ছাড়া হচ্ছিল, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে এবং লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
বিরোধী ও সরকারের বক্তব্য
বিরোধী দল এই অভিযানকে রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যায়িত করেছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেছেন, এটি বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল। অন্যদিকে সরকার দাবি করেছে যে, অভিযান সম্পূর্ণ নিয়মিত এবং এর উদ্দেশ্য কেবল কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা। স্থানীয় কৃষকরা এই অভিযানকে সমর্থন করে বলেছেন যে, গত কয়েক মাস ধরে সারের নামে নকল পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল, যার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষক নেতা হেমরাজ গুর্জর বলেছেন, সরকার যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নিত, তাহলে কৃষকদের পুরো বর্ষাকালীন ফসল বিপন্ন হয়ে যেত।
রাজ্য সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছে, যাতে কৃষি বিভাগ, এফসিআই এবং রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। আগামী সপ্তাহে ল্যাব রিপোর্ট আসার পর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।