প্রযুক্তির জগতে এমন এক বিস্ফোরক মোড় এসেছে, যা কর্পোরেট খাতের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আজ পর্যন্ত আমরা AI কে শুধুমাত্র চ্যাটবট, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অটোমেটেড সিস্টেম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ মনে করেছি, কিন্তু এখন এই প্রযুক্তি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাতে চলেছে, যেখানে মানুষের মস্তিষ্ককে পিছনে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সিলিকন ভ্যালির অগ্রণী টেক কোম্পানি Dictum AI সম্প্রতি উন্মোচন করেছে – বিশ্বের প্রথম AI-চালিত ভার্চুয়াল CEO, যার নাম Aurora X।
কী এই Aurora X?
Aurora X কোন সাধারণ সফ্টওয়্যার নয়, বরং একটি অত্যন্ত উন্নত Generative AI সিস্টেম, যা বড় বড় কর্পোরেট সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত। এই ভার্চুয়াল CEO রিয়েল-টাইম ডেটা অ্যানালিসিস, কোম্পানির বৃদ্ধি কৌশল, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পণ্য উন্নয়ন ইত্যাদি বৃহৎ কাজ একাই সামলাতে পারে।
কোম্পানির দাবি, Aurora X কোন মানব CEO এর চেয়ে চারগুণ দ্রুত এবং ১০০% পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এবং সবচেয়ে বড় কথা – এটি ছুটি চায় না, বেতন নেয় না এবং কখনো ভুল করে না। এটি শুধু প্রযুক্তি নয়, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব, বলেন ডঃ নীল রায়না, যিনি একজন নামকরা AI গবেষক।
কীভাবে কাজ করে ভার্চুয়াল CEO?
- বাজারের প্রবণতার রিয়েল-টাইম বিশ্লেষণ: Aurora X বাজারের কর্মকাণ্ড কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রক্রিয়া করে।
- কর্মচারী বিশ্লেষণ: প্রতিটি কর্মচারীর উৎপাদনশীলতা, মেজাজ এবং কাজের অভ্যাসের পর্যবেক্ষণ।
- যুক্তিযুক্ত পরিকল্পনা: কোম্পানির বৃদ্ধি, অর্থ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই।
- হোলোগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ: প্রয়োজন হলে Aurora X একটি হোলোগ্রাফিক অবতারে উপস্থিত হয় এবং ভিডিও মিটিংও করে।
মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে?
এই প্রশ্নটি পুরো বিশ্বে আলোচনা তৈরি করেছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোম্পানিগুলি এই প্রবণতা অনুসরণ শুরু করে, তাহলে CEO, CFO এবং অন্যান্য অনেক উচ্চ বেতনের নির্বাহী পদ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তবে, কিছু মনে করেন ভার্চুয়াল CEO মানুষের সহায়তা করবে, তাদের স্থান নেবে না। কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যখন AI এত নির্ভুলতা এবং দ্রুততার সাথে কাজ করতে পারে, তখন মানুষ কেন?
ভারতের উপর কী প্রভাব পড়বে?
ভারতে Infosys, TCS এবং Wipro-এর মতো কোম্পানিগুলিও AI-ভিত্তিক নেতৃত্ব মডেলের উপর গবেষণা শুরু করেছে। আগামী দুই বছরে ভারতের ১০০ টির বেশি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে AI সিস্টেমকে ব্যবস্থাপনা স্তরে প্রয়োগ করতে পারে। বড় MNC এবং স্টার্টআপগুলি এই প্রযুক্তি গ্রহণের প্রতিযোগিতায় রয়েছে কারণ এটি ব্যয় কমানো এবং স্কেলেবিলিটি উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত লাভজনক।
নৈতিক প্রশ্নও উঠছে...
AI দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এক কথা, কিন্তু মেশিনকে এত অধিকার দেওয়া কি নিরাপদ? যদি কখনও কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয় বা AI ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তার দায় কার? নেতৃত্ব শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার নাম নয়, মানবতা এবং আবেগগত বোঝাপড়াও প্রয়োজন, বলেন মনোবিজ্ঞানী ডঃ অরবিন্দ সাক্ষেনা।
AI ইতিমধ্যেই আমাদের জীবনের অনেক দিকে বিপ্লব এনেছে। কিন্তু এখন যখন নেতৃত্বও মেশিনের হাতে চলে যাচ্ছে, তখন ভাবার বিষয় হলো আগামী দিন কি সম্পূর্ণ ডিজিটাল গভর্ন্যান্সের হবে?