রাশিয়া চালু করল নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ ‘ভ্লাডস’, WhatsApp-Telegram-এর বিকল্প?

🎧 Listen in Audio
0:00

রাশিয়া ‘ভ্লাডস অ্যাপ’ নামে একটি নতুন নিরাপদ মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যা বিদেশি অ্যাপের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এবং কেবলমাত্র দেশের ভিতরে ব্যবহার করা যাবে।

সারা বিশ্বে ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। আমেরিকা ও ইউরোপ যেখানে ডেটা সুরক্ষা নিয়ে কঠোর আইন তৈরি করছে, সেখানে রাশিয়াও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার একটি নতুন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত মেসেজিং অ্যাপকে অনুমোদন দিয়েছে, যার নাম ‘ভ্লাডস অ্যাপ’ বলে জানা গেছে। এই অ্যাপকে দেশে জনপ্রিয় এবং বিদেশি মেসেঞ্জার যেমন WhatsApp এবং Telegram-এর বিকল্প হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

ভ্লাডস অ্যাপ কি?

‘ভ্লাডস অ্যাপ’ একটি রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত এবং নিরাপদ মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হবে, যা কেবলমাত্র যোগাযোগের জন্যই নয়, সরকারি সেবাগুলির সাথে যুক্ত হওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হবে। এটিকে ডিজিটাল স্বায়ত্তশাসনের দিকে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অ্যাপ সরাসরি সরকারি ডেটাবেস এবং সেবাগুলির সাথে সংযুক্ত হবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা তাদের পরিচয় যাচাই করতে পারবেন, সরকারি ফর্ম পূরণ করতে পারবেন, চুক্তিতে ডিজিটাল সাইন করতে পারবেন এবং অর্থ প্রদানও করতে পারবেন। এর ব্যবহার আইডি যাচাই, শিক্ষাগত সেবা এবং এমনকি ভোট প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্যও করা যেতে পারে।

সরকার কেন এই অ্যাপ আনছে?

এই অ্যাপ চালু করার পিছনে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল রয়েছে – বিদেশি টেক কোম্পানিগুলির উপর নির্ভরতা শেষ করা। গত কয়েক বছরে রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর, পুতিন সরকার ডেটা গোপনীয়তা এবং জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ডুমার তথ্য নীতি কমিটির প্রধান সের্গেই বোয়ার্স্কি বলেছেন যে এই অ্যাপ ‘WhatsApp এবং Telegram-এর মতো বিদেশি সেবাগুলির জায়গা নেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেছেন যে ‘এই অ্যাপ আমাদের ডিজিটাল সুরক্ষার শেষ ঘাটতিও পূরণ করবে।’

ভারত বা অন্যান্য দেশের ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন কি?

না। এই অ্যাপ কেবলমাত্র রাশিয়ার ভিতরেই উপলব্ধ হবে। বিদেশি ব্যবহারকারীরা, বিশেষ করে যারা রাশিয়ায় বাস করেন না, তারা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়া সরকার নিকট ভবিষ্যতে WhatsApp এবং Telegram-এর মতো বিদেশি মেসেজিং অ্যাপগুলি ব্লক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার নাগরিকদের কাছে বিকল্প হিসেবে কেবলমাত্র এই নতুন Vlad’s App-ই থাকবে।

রাশিয়া কি WhatsApp এবং Telegram-এ নিষেধাজ্ঞা জারি করবে?

এই প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়, তবে ইঙ্গিত অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি ‘ভ্লাডস অ্যাপ’ সফল হয় এবং সরকার প্রত্যাশিত ফলাফল পায়, তাহলে রাশিয়ার ভিতরে WhatsApp এবং Telegram-এর মতো অ্যাপগুলি ব্লক করা যেতে পারে।

যদিও Telegram-এর সূচনা করেছিলেন একজন রাশিয়ান ডেভেলপার পেভেল ডুরভ, তবে এটি এখন একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি হয়ে উঠেছে এবং এর সদর দপ্তর দুবাইতে রয়েছে। WhatsApp ইতোমধ্যেই আমেরিকা ভিত্তিক মেটা কোম্পানির অংশ। রাশিয়া সরকার বলেছে যে এই অ্যাপগুলির মাধ্যমে দেশের ডেটা বিদেশি সার্ভারে যেতে পারে, যা জাতীয় সুরক্ষার দিক থেকে বিপজ্জনক।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী হবে?

যদিও এখনও এই অ্যাপের ইন্টারফেস এবং বৈশিষ্ট্যগুলির সম্পূর্ণ তথ্য সামনে আসেনি, তবে কিছু সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য হতে পারে:

  • এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (রাষ্ট্রের নজরদারির সাথে)
  • সরকারী পরিচয়পত্রের সাথে লিঙ্কিং
  • ডিজিটাল সাইন এবং ডকুমেন্ট ট্রান্সফার সুবিধা
  • রিয়েল টাইম চ্যাট, কল এবং ভিডিও কল বৈশিষ্ট্য
  • সরকারি সেবা পোর্টালের সাথে ইন্টিগ্রেশন
  • রাশিয়ার ক্লাউডে স্টোরেজ এবং ডেটা সিকিউরিটি

এই পদক্ষেপের বড় প্রভাব কী কী হতে পারে?

1. রাশিয়ায় ডিজিটাল স্বাধীনতা সীমিত হতে পারে

একদিকে সরকার এটিকে জাতীয় সুরক্ষার দিকে উঠে আসা পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে, অন্যদিকে সমালোচকদের মতে, এই অ্যাপ রাশিয়ান নাগরিকদের ডিজিটাল স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।

2. বিদেশি কোম্পানিগুলিতে চাপ

এই সিদ্ধান্ত ফেসবুক, মেটা, টেলিগ্রাম এবং X-এর মতো কোম্পানিগুলিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে যাতে তারা তাদের অ্যাপগুলির জন্য স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করে বা রাশিয়া থেকে বের হয়ে যায়।

3. অন্যান্য দেশগুলিকে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে

ভারতের মতো দেশ, যেগুলো ডেটা লোকলাইজেশনে জোর দিচ্ছে, তারাও এই পদক্ষেপটিকে একটি উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারে। সম্ভবত ভবিষ্যতে ভারতও তার ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ মেসেজিং অ্যাপগুলির প্রচার করবে।

Leave a comment