চিনাব সেতুর উদ্বোধনের পর যখন মিডিয়া এই ঐতিহাসিক প্রকল্পের পিছনে থাকা নায়কদের খুঁজতে শুরু করে, তখন ডাঃ জি. মাধবি লতার নাম শিরোনামে চলে আসে।
নয়াদিল্লি: বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু, চিনাব সেতুর উদ্বোধনের পর, যখন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এর নির্মাণে জড়িত ব্যক্তিদের আলোচনা শুরু হয়, তখন এক নাম বিশেষভাবে উঠে আসে – ডাঃ জি. মাধবি লতা। বেঙ্গালুরুস্থ ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) এর অধ্যাপক এবং ভূ-প্রযুক্তিবিদ ইঞ্জিনিয়ার ডাঃ লতাকে অনেক মিডিয়া রিপোর্টে চিনাব সেতুর "প্রধান নায়িকা" বলা হয়েছে। এমনকি উদ্যোগপতি আনন্দ মহিন্দ্রের মতো ব্যক্তিও তাকে তাঁর অনুপ্রেরণা বলেছেন।
কিন্তু ডাঃ মাধবি লতা নিজেই এগিয়ে এসে এই ধরণের দাবিকে নম্রতার সাথে খারিজ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন যে এই সাফল্য একা তাঁর নয়, বরং হাজার হাজার অজ্ঞাত নায়কের পরিশ্রমের ফল।
আমি একা নায়িকা নই, এটি একটি সম্মিলিত বিজয় – ডাঃ জি. মাধবি
ডাঃ মাধবি লতা লিংকডইনে একটি পোস্ট লিখে স্পষ্ট করেছেন যে চিনাব সেতুর নির্মাণ কোন একক ব্যক্তির সাফল্য নয়। তিনি লিখেছেন, ভারতকে চিনাব সেতুর উদ্বোধনের জন্য অভিনন্দন। এটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অসাধারণ নমুনা, কিন্তু এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ভারতীয় রেলওয়ে এবং AFCONS-এর দলের। আমি কেবলমাত্র একজন ভূ-প্রযুক্তিবিদ পরামর্শদাতা হিসেবে ঢাল স্থিরীকরণ এবং ভিত্তি নকশায় অবদান রেখেছি।
তিনি আরও বলেছেন যে এই সেতু নির্মাণে হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক এবং প্রযুক্তিবিদ দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। "আমি সেই সকল অজ্ঞাত নায়কদের সালাম জানাই, যাদের ছাড়া এটি সম্ভব ছিল না," তিনি লিখেছেন। ডাঃ লতার এই নম্রতা এই সময়ে আরও প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়, যখন ব্যক্তিগত প্রশংসা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতায় সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।
মিডিয়ার অতিরঞ্জন এবং ডাঃ লতার স্পষ্টীকরণ
কিছু মিডিয়া রিপোর্টে ডাঃ মাধবি লতাকে "চিনাব সেতুর সুপারউম্যান" বলা হয়েছে, যা তিনি স্পষ্টভাবে খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "এই সকল দাবি ভিত্তিহীন। আমি কখনো বলিনি যে আমি একাই এই সেতুটি তৈরি করেছি। এই প্রকল্পটি শত শত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীর পরিশ্রমের ফল।
তবে, তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে তাঁর গল্প থেকে অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আমি অনেক অভিভাবক এবং ছাত্রের বার্তা পেয়েছি যে তারা এখন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান। এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়," তিনি বলেছেন। কিন্তু তিনি এও অনুরোধ করেছেন যে তাকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শিরোনামে না রাখা হয়।
চিনাব সেতু: ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়
চিনাব সেতুর নির্মাণ ভারতীয় রেলওয়ে এবং AFCONS কোম্পানির দল মিলে করেছে। এই সেতু ১,৩১৫ মিটার লম্বা এবং চিনাব নদীর ৩৫৯ মিটার উপরে নির্মিত, যা এটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু করে তুলেছে। এই প্রকল্পে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যেমন কঠিন ভূ-প্রকৃতি, অত্যধিক উচ্চতা এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতা। কিন্তু ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা এই সকল বাধা পেরিয়ে এক অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিদর্শন রেখেছে।
ডাঃ মাধবি লতা তাঁর ভূমিকাকে সীমিত করে বলেছেন যে তিনি কেবলমাত্র ঢাল স্থিরীকরণ এবং ভিত্তি নকশায় সাহায্য করেছেন। কিন্তু এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, কারণ চিনাব সেতুর নির্মাণ হিমালয় অঞ্চলে করা হয়েছে, যেখানে ভূমিধ্বস এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বদা বিদ্যমান।