ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে RCB-এর জয় উৎসবের সময় হওয়া হিংস্র ভিড়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন কর্ণাটক হাইকোর্ট নিজে থেকেই এই ঘটনার বিচার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Bengaluru Stampede: এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে উৎসবের সময় হওয়া ভিড়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কর্ণাটক হাইকোর্ট এই ঘটনার নোটিশ দিয়েছে এবং আজ বিকাল ২:৩০ টায় শুনানি করবে। আআপ এবং সামাজিক কর্মীরা প্রশাসনের অবহেলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
ব্যাঙ্গালোর ভিড়ের ঘটনা কি?
৩রা জুন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB) ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (IPL)-এর ১৭তম আসর জিতে ইতিহাস গড়েছে। এর পর ৪ঠা জুন ব্যাঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে দলের জয় উৎসব পালিত হওয়ার কথা ছিল।
এই উৎসবে RCB-এর প্রচুর সমর্থক তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ভিড় জমায়। কিন্তু অত্যাধিক ভিড়ের কারণে স্টেডিয়ামের বাইরে ভয়াবহ ভিড় দেখা দেয়। এই দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৪৭ জন আহত হয়।
হাইকোর্ট নিজে থেকেই নোটিশ দিয়েছে
কর্ণাটক হাইকোর্ট এই মর্মান্তিক ঘটনার বিষয়ে নিজে থেকেই নোটিশ দিয়ে আজ (৫ই জুন) দুপুর ২:৩০ টায় শুনানির সময় নির্ধারণ করেছে। আদালত এই ঘটনায় প্রশাসনিক অবহেলা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আয়োজনের পদ্ধতির পর্যালোচনা করবে।
হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ এই ব্যাপারটা স্পষ্ট করে যে এটি কেবলমাত্র একটি দুর্ঘটনা ছিল না, বরং গুরুতর অবহেলার ফল হতে পারে, যার গভীরতর তদন্ত প্রয়োজন।
রাষ্ট্রীয় দল ও কর্মীরা কণ্ঠ উঠিয়েছে
এই ঘটনার পর আআপ-কর্ণাটকের যুব রাজ্য সভাপতি লোহিত হনুমানপুরা ব্যাঙ্গালোর পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি FIR-এ কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংঘ (KSCA) এবং এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের CEO-কে নাম উল্লেখ করে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা এবং জনসাধারণের নিরাপত্তার উপেক্ষার অভিযোগ আনেন।
এছাড়াও সামাজিক কর্মী স্নেহময়ী কৃষ্ণা কব্বন পার্ক থানায় একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া, উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৬ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যা অবহেলাজনিত মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত।
ঘটনার পটভূমি
RCB-এর IPL জয়ের পর ৪ঠা জুন ব্যাঙ্গালোরে বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকরা অনুমান করেছিলেন যে বহু মানুষ আসবে, কিন্তু ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবেশ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত ছিল।
মুক্ত প্রবেশের ঘোষণার ফলে হাজার হাজার মানুষ কোন স্পষ্ট নির্দেশনা এবং ব্যবস্থাপনা ছাড়াই স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয়। দরজা খুলতেই ভিড় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
কেন ছিল অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা?
ঘটনার পর এমন প্রশ্ন উঠছে যে এত বড় ইভেন্টের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন বাড়ানো হয়নি? ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট পুলিশ বাহিনী, ব্যারিকেডিং, জরুরী প্রস্থান এবং চিকিৎসা সহায়তার অভাব এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সাধারণত এ ধরণের অনুষ্ঠানে এন্ট্রি পাস এবং টিকিটভিত্তিক প্রবেশ ব্যবস্থা থাকে, যার ফলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু এবার মুক্ত প্রবেশের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ স্টেডিয়ামের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। দুপুরের দিকে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। যখন কোন একটি গেট খোলা হয়, তখন ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ভয়াবহ ভিড় দেখা দেয়।
মানুষদের মাটিতে পড়ে যাওয়া, পায়ে পিষে মারা যাওয়া দেখা গেছে। কেউ চিকিৎসা সাহায্য পায়নি এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই এই দুঃখজনক ঘটনা একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পরিণত হয়।