আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ কালাওয়াড়িয়া নিখোঁজ। তার ফোন বন্ধ, স্কুটার হারিয়ে গেছে এবং শেষ অবস্থান দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৭০০ মিটার দূরে পাওয়া গেছে।
বিমান দুর্ঘটনা: গত বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদে ঘটা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ কালাওয়াড়িয়া নিখোঁজ। তার শেষ মোবাইল লোকেশন দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে পাওয়া গেছে। পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা, তিনি ভূমিস্থিত নিহতদের মধ্যে থাকতে পারেন। পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য DNA নমুনা জমা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে।
উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই দুর্ঘটনা
বৃহস্পতিবার দুপুর ১:৩৯ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি মেঘাণীনগর এলাকার একটি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। এই দুর্ঘটনা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, ভূমিতে থাকা ২৯ জনও এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
প্রভাবিত এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। মেডিকেল কলেজ ভবনটিও গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আশপাশের সড়ক ও যানবাহন আগুনে পুড়ে গেছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ কালাওয়াড়িয়ার কোনও সন্ধান নেই
এই দুর্ঘটনার পর থেকে নরোড়া निবাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ কালাওয়াড়িয়া (যাকে মহেশ জিরাওয়ালা নামেও চেনা যায়) নিখোঁজ। তিনি মিউজিক অ্যালবাম ও ভিডিও নির্মাণের কাজ করতেন।
তার স্ত্রী হেতল কালাওয়াড়িয়া জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার মহেশ ল' গার্ডেন এলাকায় কারও সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। দুপুর ১:১৪ মিনিটে তিনি ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, তার মিটিং শেষ হয়েছে এবং তিনি বাড়ি ফিরছেন।
কিন্তু এর পর থেকে তিনি বাড়ি ফিরেননি। বারবার ফোন করার পরও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়, এরপর তার শেষ মোবাইল লোকেশন খুঁজে পাওয়া যায় — যা দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে ছিল।
"সে কখনো ওই পথে আসত না..." — স্ত্রী হেতলের উদ্বেগ
মহেশের স্ত্রী হেতল জানিয়েছেন, "প্রায় ১:৪০ মিনিটে তার ফোন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, অর্থাৎ নেটওয়ার্ক চলে গেছে। এটাই ছিল দুর্ঘটনার সময়। তার স্কুটার ও মোবাইল ফোন — দুটোরই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সে কখনোই ওই পথে বাড়ি আসত না যেখানে তার শেষ লোকেশন পাওয়া গেছে।"
পরিবারের আশঙ্কা, মহেশও সেই ২৯ জন ভূমিস্থিত নিহতের মধ্যে থাকতে পারেন যারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এই কারণে, পরিজনরা DNA পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন যাতে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা যায়।
শব শনাক্তকরণে চ্যালেঞ্জ
বিমানে আগুন লাগা এবং প্রচণ্ড ধাক্কায় অনেক শব গুরুতরভাবে পুড়ে গেছে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে তাদের পরিচয় নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ধরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র DNA টেস্টিংই একমাত্র উপায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ফরেনসিক টিম DNA মিলানের প্রক্রিয়া দ্রুত করেছে। এখন পর্যন্ত ৪৭ টি মৃতদেহের পরিচয় DNA পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, যার মধ্যে ২৪ টি মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের মৃত্যুর নিশ্চিতি
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মোট ২৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪১ জন বিমানে যাত্রী ছিলেন এবং ২৯ জন ভূমিতে ছিলেন। সরকার দুর্ঘটনার উচ্চস্তরীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং এয়ার ইন্ডিয়ার টেকনিক্যাল টিমসহ DGCA-এর বিশেষ তদন্ত দল ঘটনার গভীর তদন্ত করছে।