আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ২৪২ জনের মৃত্যু

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ২৪২ জনের মৃত্যু
সর্বশেষ আপডেট: 13-06-2025

আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 বিধ্বস্ত হয়েছে। পাইলট থ্রাস্ট না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। দুর্ঘটনায় ২৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Ahmedabad Plane Crash: আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। টেকঅফের কয়েক মিনিট পরেই বিমানটি ভারসাম্য হারিয়ে বিজে মেডিকেল কলেজের মেস বিল্ডিং এবং হস্টেলে আঘাত হানে। এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীসহ মেডিকেল ছাত্র ও চিকিৎসকদেরও প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্ঘটনার ঠিক আগে পাইলট ‘থ্রাস্ট না পাওয়া’র কথা জানিয়েছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে ইঞ্জিনের ব্যর্থতা, পাখির আঘাত, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা পাইলটের ভুলের মতো সম্ভাব্য কারণগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার ছবি: সেদিন দুপুরে কী ঘটেছিল?

বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171। টেকঅফের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি ভারসাম্য হারায়। বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনার বিমানটি যখন ৪২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছায়, পাইলট ATC কে জানায় যে তিনি থ্রাস্ট পাচ্ছেন না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বিমানটি দ্রুত নিচে নেমে আসে এবং সরাসরি বিজে মেডিকেল কলেজের মেস বিল্ডিংয়ে আঘাত হানে। এরপর তা হস্টেলের বিল্ডিংয়েও আঘাত করে।

দুর্ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে আগুনের উঁচু শিখা এবং কালো ধোঁয়ার ঘন কুয়াশা সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকারী দল, ফায়ার ব্রিগেড এবং চিকিৎসা দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

কে কে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে?

এই বিমানে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে যাত্রী ও ক্রু সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সকলেরই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বিজে মেডিকেল কলেজের MBBS ছাত্র, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার এবং অন্যান্য মেডিকেল কর্মীরাও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বিমানটি প্রথমে যে ভবনে আঘাত হানে, তা মেডিকেল কলেজের মেস ছিল। এরপরই বিমানটি হস্টেলের ভবনে আঘাত করে, যেখানে সেসময় অনেক ডাক্তার ও মেডিকেল ছাত্র উপস্থিত ছিলেন।

পাইলটের শেষ বার্তা: ‘থ্রাস্ট পাচ্ছি না’

এই সম্পূর্ণ ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত পাইলটের কাছ থেকেই এসেছে। টেকঅফের কয়েক সেকেন্ড পর পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানিয়েছিলেন – “I’m not getting thrust.” এর অর্থ ছিল বিমান উড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যাচ্ছিল না। পাইলট যখনই এই পরিস্থিতির কথা জানান, বিমানটি দ্রুত ভারসাম্য হারাতে শুরু করে এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।

কী ইঞ্জিন ব্যর্থ হয়েছিল?

বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনারের মতো বাণিজ্যিক বিমানে দুটি ইঞ্জিন থাকে। যদি একটি ইঞ্জিন ব্যর্থ হয়, তাহলে অন্য ইঞ্জিনটি বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করতে সাহায্য করতে পারে। তাই শুধুমাত্র ইঞ্জিনের ব্যর্থতার কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া কিছুটা সন্দেহজনক মনে হয়।

পাখির আঘাত বা কোনও বহিরাগত আঘাত?

Bird Strike অর্থাৎ পাখির আঘাত, উড়ানের প্রাথমিক মুহূর্তে একটি সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় পাখি ইঞ্জিনে ঢুকে পড়ে এবং এর ফলে ইঞ্জিন ব্যর্থ হতে পারে অথবা আগুন লাগতে পারে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যাপার হলো বিমানটি আকাশে আগুনের শিকার হয়নি। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে স্পষ্ট যে, বিমানটি যখন নিচে নেমে আসে, তখনই বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন লাগে। এটি পাখির আঘাতের সম্ভাবনা কিছুটা কমিয়ে দেয়, তবে তদন্তে এটিকেও উপেক্ষা করা হয়নি।

প্রযুক্তিগত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে পাইলটের বার্তা

যেমনটি পাইলট থ্রাস্ট না পাওয়ার কথা বলেছিলেন, এটি সরাসরি ইঙ্গিত দেয় যে বিমানে কোনও গুরুতর প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয়েছে। সম্ভবত জ্বালানি পাম্প, ইঞ্জেকশন সিস্টেম, ইঞ্জিন কন্ট্রোল মডিউল বা থ্রাস্ট লিভারের মতো কোনও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিয়েছে। প্রতিটি ফ্লাইটের আগে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে ফ্লাইটের প্রযুক্তিগত পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কিছু ত্রুটি এমন হয় যা টেকঅফের সময়ই সামনে আসে।

STALL কী এবং এটি কীভাবে ঘটে?

Stall-এর অর্থ হলো যখন বিমানটিকে উপরে উড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাতাস পাওয়া যায় না। বিমানের ডানা (wings) বাতাসকে কেটে তাকে উপরে তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি গতি কমে যায় অথবা থ্রাস্ট না পাওয়া যায়, তাহলে ডানা বাতাস থেকে সাপোর্ট হারায় এবং বিমানটি হঠাৎ করে নিচে পড়তে শুরু করে।

টেকঅফের সময় বিমানটিকে প্রায় ৩০০ কিমি/ঘন্টা গতির প্রয়োজন হয়। থ্রাস্ট না পাওয়ার ফলে বিমানটি STALL-এর অবস্থায় যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্ঘটনাটিও এমন কোনও পরিস্থিতিতে ঘটে থাকতে পারে।

কী পাইলটের ভুল ছিল?

বিমান ভ্রমণের সময় টেকঅফ ও অবতরণের সময় পাইলটের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একবার বিমান আকাশে উঠে গেলে অটো পাইলট মোড সক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু টেকঅফের সময় পাইলটকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়। এই ক্ষেত্রে পাইলট সময়মতো পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন, যা থেকে স্পষ্ট যে তিনি নিজের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছিলেন। তবুও প্রশ্ন হলো, কী কোনও পর্যায়ে মানুষের ভুলও এই দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে? এটি তদন্তের পরেই জানা যাবে।

এত বড় বিস্ফোরণ কেন হয়েছিল? কারণ হল জ্বালানির পরিমাণ

দুর্ঘটনার পর মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে বিমানটি তেমন উঁচুতে উঠেনি, তাহলে এত বড় বিস্ফোরণ কীভাবে হলো? আসলে, এই ফ্লাইট আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছিল – একটি দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ফলে বিমানে এক লক্ষ লিটারের বেশি জ্বালানি ভরা ছিল।

মন্ত্রণালয়ের মতে, এই বিমানের জ্বালানি ধারণক্ষমতা প্রায় ১.২৬ লক্ষ লিটার এবং এর মধ্যে প্রায় এক লক্ষ লিটার জ্বালানি সেসময় উপস্থিত ছিল। যখন বিমানটি ভবনে আঘাত করে এবং নিচে পড়ে যায়, তখন এই সমস্ত জ্বালানি আগুনের গোলক হয়ে যায়। এর ফলে শুধু যাত্রীদেরই প্রাণহানি হয়নি, ভবনে থাকা ডাক্তার ও ছাত্ররাও বাঁচতে পারেনি।

দুর্ঘটনার পরের পরিস্থিতি ও তদন্ত

দুর্ঘটনার অব্যবহিত পর ঘটনাস্থলে NDRF, ফায়ার ব্রিগেড, চিকিৎসা দল এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করে। যদিও আগুন ও ধোঁয়া উদ্ধার কাজে বৃহত্তম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং DGCA থেকে প্রতিবেদন চেয়েছেন। বর্তমানে ব্ল্যাক বক্স এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে, যা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করবে।

```

Leave a comment