২৬/১১-এর মুম্বই হামলার অভিযুক্ত রানাকে ভারতে আনা, তিহার জেলে বন্দি

🎧 Listen in Audio
0:00

২৬/১১ মুম্বই হামলার প্রধান অভিযুক্ত তাহওয়ুর হুসেন রানাকে আমেরিকা থেকে ভারতে আনা হয়েছে এবং এনআইএ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে। রানাকে ভারতে আনার পর তিহার জেলে রাখা হয়েছে, যেখানে তাকে ১৭৮৪ নম্বর কয়েদীর আইডি দেওয়া হয়েছে। তাকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় 'ছোট্টা রাজন' থাকা জেলে রাখা হয়েছে।

নয়াদিল্লি: ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযুক্ত তাহওয়ুর হুসেন রানাকে ভারতে আনা হয়েছে এবং তিহার জেলে বন্দি করা হয়েছে। এখন তার পরিচয় শুধুমাত্র একটি নাম নয়, বরং কয়েদী নম্বর-১৭৮৪ হিসেবে। আমেরিকান আদালত থেকে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার পর রানাকে এপ্রিল ২০২৫ সালে ভারতে আনা হয়, এবং ২৯ দিনের এনআইএ (জাতীয় তদন্ত সংস্থা) এর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে দিল্লির তিহার জেলের জেল নম্বর-২-এর উচ্চ-নিরাপত্তা কক্ষে স্থানান্তরিত করা হয়। উল্লেখযোগ্য যে, একই জেলে একসময় অন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ছোট্টা রাজনও বন্দি ছিলেন।

একাকিত্বে বন্দি এক উচ্চপদস্থ কয়েদী

তাহওয়ুর রানাকে তিহারের একান্ত কক্ষে রাখা হয়েছে, যেখানে অন্য কোনও কয়েদীর প্রবেশ নেই। তাকে ২৪x৭ নজরদারির জন্য টিএসপি (ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা) এর জওয়ানরা নিয়োজিত রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো এটি নিশ্চিত করা যে তাঁর উপর কোনও আক্রমণ না হয় এবং তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও না করেন। কোনও কর্মীর প্রবেশ কেবলমাত্র কর্তব্যরত অবস্থায়ই অনুমোদিত।

এনআইএ সূত্র অনুসারে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় রানা মুম্বই হামলায় তার ভূমিকা অস্বীকার করেছেন, তবে ডেভিড কলম্যান হেডলির সাথে পুরানো বন্ধুত্ব স্বীকার করেছেন। তবে তদন্তকারী সংস্থার কাছে এমন অনেক ডিজিটাল এবং নথিভুক্ত প্রমাণ রয়েছে যা রানাকে ষড়যন্ত্রে জড়িত প্রমাণ করতে পারে।

স্বর নমুনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

এনআইএ ইতিমধ্যেই তাহওয়ুর রানার স্বর নমুনা এবং হস্তাক্ষর নমুনা সংগ্রহ করেছে। সূত্রের মতে, সংস্থাটি শীঘ্রই তার পলিগ্রাফ পরীক্ষা (মিথ্যা সনাক্তকরণ পরীক্ষা) করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বলা হচ্ছে, রানার সহযোগিতার অভাবের কারণেই তদন্ত সংস্থা এই অতিরিক্ত পদ্ধতির দিকে এগোচ্ছে।

কয়েদীর দাবী: টিভি, ঘড়ি এবং বই

তিহার জেলে থাকাকালীন রানা টিভি এবং ঘড়ির দাবী করেছিলেন যাতে তিনি সময় এবং খবরের সাথে পরিচিত থাকতে পারেন। জেল কর্তৃপক্ষ তার দাবী মেনে এলসিডি টিভি এবং দেয়াল ঘড়ি কক্ষে লাগিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও তিনি ইংরেজি সাহিত্য পড়ার জন্য বই এবং লেখার জন্য কলম-কাগজ চেয়েছিলেন, যা তাকে দেওয়া হয়েছে। এই থেকে স্পষ্ট, রানা যতই উচ্চ-নিরাপত্তায় থাকুক না কেন, তার মানসিক অবস্থা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়োজনের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

রানা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে তার পরিজনদের সাথে ফোনে কথা বলার অনুমতি চেয়েছেন। তবে, নিরাপত্তার কারণে এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই অনুরোধ আদালত এবং তদন্তকারী সংস্থার অনুমতির পরেই পূরণ করা সম্ভব।

আইনী মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি

সরকার রানার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর জন্য বিশেষ আইনজীবীদের একটি দল গঠন করেছে। এই দলের নেতৃত্ব করছেন ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তার সাথে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস. ভি. রাজু, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী দয়ান কৃষ্ণন এবং আইনজীবী নরেন্দ্র মানকে নিয়োগ করা হয়েছে। এই দল রানার বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণ উপস্থাপন করবে এবং তার প্রত্যর্পণের পর ভারতে মামলা চালানোর প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।

সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, মুম্বই হামলার দোষীদের শাস্তি দেওয়া। তাহওয়ুর রানার ক্ষেত্রে এটি ভারতের জন্য একটি কূটনৈতিক এবং বিচারিক পরীক্ষাও। এই মামলার সফল পরিচালনার মাধ্যমে এমন বার্তা যাবে যে, ভারত সন্ত্রাসবাদের সাথে কোনও আপোষ করবে না এবং প্রতিটি দোষীকে তার প্রাপ্য শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Leave a comment