নিয়ন্ত্রক ও মহালেখাপরীক্ষক (CAG) -এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দিল্লির আবকরী নীতি ২০২৪-এর গুরুতর ত্রুটিগুলি উন্মোচিত হয়েছে, যার ফলে সরকার প্রায় ₹২,০২৬.৯১ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নতুন দিল্লি: দিল্লির আবকরী নীতি নিয়ে নিয়ন্ত্রক ও মহালেখাপরীক্ষক (CAG)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুতর ত্রুটি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের মতে, অস্বচ্ছতা ও নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে দিল্লি সরকারকে ₹২,০২৬.৯১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই প্রতিবেদন দিল্লি বিধানসভায় উপস্থাপিত হয়, যেখানে আবকরী বিভাগের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ক্ষতি কীভাবে হয়েছে?
* CAG-এর প্রতিবেদনে আবকরী নীতি বাস্তবায়নের অনেক ত্রুটি পাওয়া গেছে, যার ফলে সরকারকে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রধান ত্রুটিগুলি নিম্নরূপ:
* খুচরা দোকান চালু না হওয়া: অনেক এলাকায় মদ দোকান খোলা হয়নি, যার ফলে সরকারের ₹৯৪১.৫৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
* লাইসেন্স নিলামে ব্যর্থতা: অনেক ব্যবসায়ী লাইসেন্স পরিত্যাগ করার পরে পুনরায় নিলাম করা হয়নি, যার ফলে ₹৮৯০ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।
* অনুচিত ছাড়: কোভিড-১৯-এর নামে মদ ব্যবসায়ীদের ₹১৪৪ কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয়েছে।
* নিরাপত্তা জমা টাকার উপেক্ষা: মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যথাযথ নিরাপত্তা জমা টাকা নেওয়া হয়নি, যার ফলে সরকারের ₹২৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নিয়ম লঙ্ঘন ও স্বচ্ছতার অভাব
CAG-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, আবকরী বিভাগ লাইসেন্স জারির সময় নিয়ম মেনে চলেনি। দিল্লি আবকরী নিয়ম, ২০০১০ অনুযায়ী একই কোম্পানিকে বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স (পাইকারি, খুচরা, হোটেল-রেস্তোরাঁ) দেওয়া যাবে না, কিন্তু কিছু কোম্পানিকে নিয়ম ভেঙে একাধিক ধরণের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, কিছু কোম্পানি প্রক্সি মালিকানার মাধ্যমে লাইসেন্স অর্জন করে মদ ব্যবসায় কার্টেল গঠনের চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে, আবকরী বিভাগ আবেদনকারীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা, বিক্রয় রেকর্ড, মূল্য নির্ধারণ এবং অপরাধমূলক পটভূমি যাচাই করেনি।
মূল্য নির্ধারণে গোলমাল
CAG প্রতিবেদনে এও উঠে এসেছে যে, পাইকারি বিক্রেতাদের মদয়ের মূল্য নির্ধারণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, যার ফলে मनमाने ढंग से মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দিল্লিতে বিক্রি হওয়া মদের মূল্য অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ভিন্ন ছিল, যার ফলে সরকারকে আবগারী শুল্ক হিসেবে ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দিল্লিতে বিক্রি হওয়া মদের মান নিশ্চিত করতে আবকরী বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি পাইকারি বিক্রেতাকে ভারতীয় মানদণ্ড ব্যুরো (BIS)-এর অনুযায়ী পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, কিন্তু ৫১% ক্ষেত্রে বিদেশি মদের পরীক্ষার প্রতিবেদন এক বছরের বেশি পুরানো ছিল অথবা উপলব্ধই ছিল না। অনেক প্রতিবেদন এমন ল্যাব থেকে জারি করা হয়েছিল, যাদের জাতীয় স্বীকৃতি বোর্ড (NABL)-এর স্বীকৃতি ছিল না।
আধুনিক প্রযুক্তির অভাব
মদ চোরাচালান রোধ করার জন্য আবকরী গোয়েন্দা ব্যুরো (EIB)-এর ভূমিকা দুর্বল বলে মনে করা হয়েছে। জব্দকৃত মদের মধ্যে ৬৫% ছিল দেশি মদ, যা দেখায় যে অবৈধ মদ ব্যবসা ব্যাপকভাবে চলছে। প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, অবৈধ সরবরাহ নজরদারি করার জন্য ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
CAG দেখেছে যে, দিল্লি সরকার আবকরী নীতি ২০২১-২২-তে ক্যাবিনেটের অনুমোদন ছাড়াই পরিবর্তন করেছে। নতুন নীতি অনুযায়ী ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলিকে পাইকারি ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সরকারি কোম্পানিগুলি বাদ পড়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে সরকারের ₹২,০০২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
CAG কি সুপারিশ করেছে?
* লাইসেন্স প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা উচিত এবং সমস্ত আবেদনের যথাযথ যাচাই করা উচিত।
* মদের মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা উচিত যাতে মুনাফাখোরি ও কর ফাঁকি রোধ করা যায়।
* মান নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা উচিত যাতে জাল ও মিশ্রিত মদের বিক্রয় বন্ধ করা যায়।
* মদ চোরাচালান রোধ করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
* আর্থিক ক্ষতির দায়িত্ব নির্ধারণ করা উচিত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।