ভারতের আইফোন রপ্তানি: চীনকে ছাড়িয়ে নতুন মাইলফলক

🎧 Listen in Audio
0:00

২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারত ৩৩ লক্ষ আইফোন আমেরিকায় রপ্তানি করেছে, চীনকে ছাড়িয়ে অ্যাপল সাপ্লাই চেইনে বড় সাফল্য অর্জন করেছে।

আইফোন রপ্তানিকারক: ২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারত এমন এক সাফল্য অর্জন করেছে যা বিশ্বের প্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অ্যাপল-এর মতো বিশাল ব্র্যান্ডের আইফোন রপ্তানিতে ভারত প্রথমবারের মতো চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিবর্তন কেবল একটি বাণিজ্যিক সংখ্যা নয়, বরং ভারতের জন্য একটি গ্লোবাল উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের এক বড় ধাপ।

আমেরিকায় আইফোন রপ্তানি রেকর্ড স্তরে

মার্কেট রিসার্চ ফার্ম ক্যানালিস, যা এখন ওমডিয়ার অংশ, তার মতে ২০২৫ সালের এপ্রিলে ভারত আমেরিকায় ৩৩ লক্ষ আইফোন রপ্তানি করেছে। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৭৬% বৃদ্ধি দেখায়। অন্যদিকে, চীন থেকে আমেরিকায় আইফোনের রপ্তানি কমে মাত্র ৯ লক্ষ ইউনিটে নেমে এসেছে।

এটি প্রথমবারের ঘটনা যখন ভারত এক মাসে আমেরিকায় আইফোন রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এই প্রবণতা আগামীতে আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্যারিফ উত্তেজনা ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক

এই পরিবর্তনের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বর্ধমান ট্যারিফ উত্তেজনা। প্রাক্তন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে চীন থেকে আগত অনেক ইলেকট্রনিক পণ্যের উপর অত্যধিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর মধ্যে আইফোনও ছিল।

যেখানে চীনে তৈরি আইফোনের উপর ৩০% ট্যারিফ আরোপ করা হয়, সেখানে ভারতে সমাবেশিত আইফোনের উপর মাত্র ১০% বেস ডিউটি আরোপ করা হয়। এটাই কারণ অ্যাপল তাদের উৎপাদন কৌশল দ্রুত ভারতের দিকে ঘোরানো শুরু করেছে।

১১ এপ্রিল ২০২৫-এ ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকায় আগত কিছু আইফোন মডেলকে ট্যারিফ থেকে অস্থায়ী সুবিধা দিয়েছিল, কিন্তু ততক্ষণে অ্যাপল মার্চ থেকেই ভারত থেকে চালান বাড়ানো শুরু করেছিল। ফলাফল হল একই মাসে ভারত থেকে রপ্তানি বেড়ে ৪৪ লক্ষ ইউনিটে পৌঁছে গেছে।

চীন এখনও এগিয়ে, কিন্তু ভারত গতি ধরছে

তবে, জানুয়ারী থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে মোট চালানের ক্ষেত্রে চীন এখনও এগিয়ে আছে। এই সময়কালে চীন আমেরিকায় ১ কোটি ৩২ লক্ষ আইফোন রপ্তানি করেছে, যখন ভারত থেকে এই সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লক্ষ ইউনিট।

তবুও, বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বৃদ্ধির প্রবণতা ক্রমাগত উপরে উঠছে এবং এই ব্যবধান খুব শীঘ্রই কেটে যাবে।

ওমডিয়ার রিসার্চ ম্যানেজার লে জুয়ান চিউ CNBC কে জানিয়েছেন যে ভারত প্রতি মাসে দ্রুত রপ্তানিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামীতে এটি চীনকে স্থায়ীভাবে পিছনে ফেলে দিতে পারে।

COVID-19-এর পর অ্যাপল রণনীতি পরিবর্তন করেছে

COVID-19 মহামারীর পর অ্যাপল সাপ্লাই চেইন বৈচিত্র্যকরণের উপর জোর দিতে শুরু করেছে। এর অধীনে কোম্পানি চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং ভারতের মতো দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভারতে অ্যাপলের জন্য ফক্সকন প্রধান সমাবেশ অংশীদার, যা তাদের উৎপাদন ক্ষমতায় অসাধারণ বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও, টাটা ইলেকট্রনিক্স হোসুর প্ল্যান্টে আইফোন ১৬ এবং ১৬e-র সমাবেশ কাজ শুরু করেছে।

প্রতিবেদনের মতে, ২০২৫ অর্থবছরে অ্যাপল ভারতে ২২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন সমাবেশ করেছে। এটি নিজেই একটি রেকর্ড এবং ভারতের জন্য একটি বড় অর্জন।

আমেরিকা এখনও অ্যাপলের সবচেয়ে বড় বাজার

যদিও অ্যাপল তাদের উৎপাদন ভারতে স্থানান্তর করছে, তবে কোম্পানির সবচেয়ে বড় বাজার এখনও আমেরিকা। প্রতি ত্রৈমাসিকে আমেরিকায় প্রায় ২০০ লক্ষ আইফোনের চাহিদা থাকে।

তবে ভারত এখনও এই চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করার অবস্থায় নেই, কিন্তু ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা যত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই দিন দূর নয় যখন ভারত একা আমেরিকার বাজারের একটি বড় অংশ সামলাতে পারবে।

ট্রাম্পের সতর্কতা এবং রাজনৈতিক চাপ

ভারতের এই অগ্রগতি সত্ত্বেও অ্যাপলের উপর রাজনৈতিক চাপও বাড়ছে। যেখানে একদিকে চীন অ্যাপলের সাপ্লাই চেইনের পরিবর্তনের জন্য ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে আমেরিকায় ট্রাম্প কোম্পানিকে সতর্ক করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাপলকে আইফোন উৎপাদন আমেরিকায় স্থানান্তর না করলে ২৫% ট্যারিফ আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে অ্যাপলকে আমেরিকার উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে।

এর ফলে অ্যাপলের নীতি নির্ধারণকারী দলের উপর চীন এবং আমেরিকা উভয় পক্ষ থেকেই চাপ পড়ছে।

```

Leave a comment