উত্তরাখণ্ডের বহুচর্চিত অঙ্কিতা ভণ্ডারী হত্যা মামলার রায় আজ কোটদ্বারের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজের আদালতে ঘোষণা করা হবে। এই মামলাটি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ প্রকাশ্যে আসে, যখন ১৯ বছর বয়সী অঙ্কিতা ভণ্ডারী, যিনি বনন্তরা রিসোর্টে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতেন, নিখোঁজ হন।
কোটদ্বার: উত্তরাখণ্ডের কন্যা অঙ্কিতা ভণ্ডারীকে ন্যায়বিচার দানের আশা আজ পূর্ণ হতে পারে। বহুচর্চিত অঙ্কিতা ভণ্ডারী হত্যা মামলায় আদালত রায় ঘোষণার তারিখ ৩০ মে নির্ধারণ করেছিল এবং দুই বছর আট মাস পর আজ কোটদ্বারের বিশেষ আদালত এই গুঞ্জনপূর্ণ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে। সমগ্র দেশের দৃষ্টি এই ঐতিহাসিক রায়ের উপর নিক্ষিপ্ত, কারণ এটি কেবলমাত্র একজন নিরীহ মেয়ের হত্যার ঘটনা নয়, বরং এর সাথে সামাজিক ন্যায়বিচার, নারী নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে জন আন্দোলনও জড়িত।
হত্যার ভয়াবহ সত্য
এই মামলাটি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ তখন সংবাদ শিরোনামে আসে, যখন যমকেশ্বরের একটি বিলাসবহুল বনন্তরা রিসোর্টে কর্মরত ১৯ বছর বয়সী অঙ্কিতা ভণ্ডারী হঠাৎ নিখোঁজ হন। কয়েক দিন পর তার মৃতদেহ লক্ষ্মণঝুলা এলাকার একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। তদন্তে জানা যায়, অঙ্কিতাকে তারই মালিক পুলকিত আর্য এবং তার দুই সহযোগী সৌরভ ভাস্কর ও অঙ্কিত গুপ্তা মিলে হত্যা করেছে।
অভিযোগ অনুসারে, অঙ্কিতার উপর রিসোর্টের ভিআইপি অতিথিদের 'বিশেষ সেবা' প্রদানের চাপ দেওয়া হচ্ছিল, যার প্রতিবাদ করেছিল সে। এই বিষয় নিয়ে বিবাদ হয় এবং পরে তিনজন অভিযুক্ত মিলে অঙ্কিতাকে খালে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করে। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়।
তদন্ত ও প্রমাণের দীর্ঘ লড়াই
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে উত্তরাখণ্ড সরকার এসআইটি (বিশেষ তদন্ত দল) গঠন করে। এসআইটি প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট তৈরি করে এবং এই মামলায় মোট ৪৭ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ফরেনসিক রিপোর্ট, কল ডিটেইলস, সিসিটিভি ফুটেজ এবং সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযোগপক্ষ তিনজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য শক্তিশালী মামলা তৈরি করে।
অন্যদিকে, প্রতিরক্ষাপক্ষ অভিযুক্তদের ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রের দাবি করে তাদের নির্দোষ বলে দাবি করেছে, কিন্তু অভিযোগপক্ষের দাবি, হত্যার পুরো ষড়যন্ত্র পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল এবং এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও জন আন্দোলন
এই মামলাটিকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলা একটি দিক হল মূল অভিযুক্ত পুলকিত আর্য, তৎকালীন বিজেপি নেতা এবং রাজ্য সরকারের প্রাক্তন রাজ্যমন্ত্রী বিনোদ আর্যের পুত্র। মামলা প্রকাশ্যে আসার পর সমগ্র উত্তরাখণ্ড এবং সমগ্র দেশে প্রতিবাদ শুরু হয়। জনতা রাস্তায় নেমে আসে এবং 'অঙ্কিতাকে ন্যায়বিচার দাও' এর স্লোগান গूঞ্জরিত হয়।
রাজনৈতিক চাপের মধ্যে বিজেপি তৎক্ষণাৎ বিনোদ আর্য এবং পুলকিত আর্যকে দল থেকে বহিষ্কার করে। অন্যদিকে সরকার তদন্তে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আশ্বাস দেয়।
আজকের রায় থেকে কী আশা?
এখন দুই বছর আট মাসের দীর্ঘ ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার পর রায় ঘোষণা করা হচ্ছে, তাই পীড়িতার পরিজন এবং দেশবাসী ন্যায়বিচারের আশা নিয়ে আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে। এই রায়ের প্রভাব কেবল এই মামলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি নারী নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে ন্যায়বিচারের স্বাধীনতায় গভীর প্রভাব ফেলবে।
অঙ্কিতার পিতা ও পরিজনরা জানিয়েছেন, তাদের ন্যায়পালিকার উপর পূর্ণ আস্থা আছে এবং তারা চান তাদের মেয়ের আত্মার শান্তি তখনই হবে যখন দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।