আরায় ঘোষণা করলেন চিরাগ পাসওয়ান, বিহারের ২৪৩টি আসনেই প্রার্থী দেবে তাঁদের দল
বিহার নির্বাচন: ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছেন লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-এর প্রধান চিরাগ পাসওয়ান। আরায় জনতার সাথে সরাসরি কথোপকথনের সময় তিনি বড় ঘোষণা করলেন যে তিনি নিজে বিহার থেকে নির্বাচনে লড়বেন এবং কোন আসন থেকে লড়বেন তা জনতা ঠিক করবে। তিনি ‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট’ দর্শনের আওতায় সমগ্র রাজ্যের ২৪৩টি আসনেই নির্বাচন লড়ার কথা জানান। চিরাগ দলিত, প্রবাসী শ্রমিক ও যুবকদের সমস্যা তুলে ধরে এনডিএ সরকারের নীতির সমর্থন জানান এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেন।
আরা থেকে শুরু ‘নতুন বিহার’-এর প্রতিজ্ঞা
লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-এর সভাপতি চিরাগ পাসওয়ান ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে পুরোপুরি সক্রিয়। আরায় ‘আজতক’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে তিনি একটি নতুন চিন্তাধারা, নতুন প্রতিজ্ঞা ও নতুন বিহার গঠনের দিকে এগিয়ে চলেছেন।
তিনি বলেন, তাঁদের দল এইবার বিধানসভা নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছে। চিরাগ শাহাবাদ অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে বলেন যে এই অঞ্চলের জনতা সবসময় পরিবর্তনের পক্ষে ছিল এবং এখন সেই পরিবর্তন পুরো বিহারে আনা হবে।
জনতা ঠিক করবে, চিরাগ কোথা থেকে লড়বেন নির্বাচন
এই আলাপচারিতার সময় যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনি নিজে কোন আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন, তখন তিনি বলেন, “আমি বিহার থেকে নির্বাচনে লড়বো, কিন্তু কোন আসন থেকে, তা বিহারের জনতা ঠিক করবে।” তিনি জনতার আশীর্বাদ নিতে বেরিয়েছেন এবং কোনও রাজনৈতিক গণিত নয়, বরং জনমতের ভিত্তিতে নির্বাচনী সিদ্ধান্ত নেবেন। এই বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে চিরাগ পাসওয়ান তাঁর রাজনৈতিক কৌশলে সাধারণ জনতাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিচ্ছেন।
‘বিহার ফার্স্ট’ স্বপ্ন এবং দলিত সমাজের কণ্ঠ
চিরাগ পাসওয়ান বলেন, তাঁর রাজনীতির উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ক্ষমতায় আসা নয়, বরং বিহারকে ভারতের প্রথম রাজ্যে পরিণত করা। তিনি ‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট’ দর্শন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তিনি সেই চিন্তাধারা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, যেখানে প্রতিটি শ্রেণীর কল্যাণ হবে – চাই দলিত হোক, অনগ্রসর হোক বা প্রবাসী।
তিনি বলেন, এনডিএ সরকার দলিত ও দুর্বল শ্রেণীর জন্য সবসময় কাজ করেছে, চাই তা বাবা সাগেব আম্বেদকরকে ভারতরত্ন প্রদান করা হোক বা কারপূরী ঠাকুরকে তাঁর যথাযথ সম্মান দেওয়া হোক।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও নীতীশ কুমারের প্রশংসা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের অবদানের কথা বলতে গিয়ে চিরাগ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রত্যেককে সম্মান করেন। তিনি দেশে সামাজিক সম্প্রীতি সুদৃঢ় করেছেন।”
অন্যদিকে নীতীশ কুমারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিহারের উন্নয়নে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে বলেন যে যারা ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সেই স্বপ্ন ত্যাগ করা উচিত।
প্রবাসী বিহারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ
প্রবাসী বিহারীদের অবস্থা নিয়ে চিরাগ পাসওয়ান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন যে কোনও বিহারী ছাত্রকে পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হবে না।” তিনি বলেন, এই চিন্তাধারাই তাঁর ‘বিহার ফার্স্ট’ অভিযানের ভিত্তি।
তিনি অভিযোগ করেন যে, এই চিন্তাধারাকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, তাঁর পরিবার এবং দলকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি কখনও ভাঙবেন না। “আমি শেরের ছেলে, আমি ভাঙবো না, নমবো না,” তিনি জোর দিয়ে বলেন। তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে চিরাগ বলেন, “আমার কাছে পদ ও ক্ষমতা কোনও মূল্য নেই। আমার কাছে শুধুমাত্র একটাই জিনিস গুরুত্বপূর্ণ – বিহারী।”
বিহারের ২৪৩টি আসনে লড়াইয়ের ঘোষণা
সবচেয়ে বড় ঘোষণা করে চিরাগ পাসওয়ান বলেন, তাঁদের দল বিহারের ২৪৩টি বিধানসভা আসনেই প্রার্থী দেবে। তিনি বলেন, এইবারের লড়াই শুধু ক্ষমতার জন্য নয়, বরং একটি নতুন চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি যুবকদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, “আজকের যুবকরা চিরাগ পাসওয়ান হোক, নিজেদের অধিকারের লড়াই নিজেরাই করুক। আমি তোমাদের সাথে আছি, কিন্তু আমার পথ তোমাদের সহযোগিতা ছাড়া অসম্পূর্ণ।”