রাতভর ঘুমিয়ে উঠলে শরীর ও মন দুটোই তরতাজা অনুভব করা উচিত। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ঘুম পুরো হওয়া সত্ত্বেও মানুষ নিজেকে ক্লান্ত ও অবসন্ন অনুভব করে। এই অবস্থা যদি একদিনের না হয়ে নিয়মিত হয়, তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে একটি গুরুতর ইঙ্গিত হতে পারে।
পুষ্টির অভাব – শরীরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে তোলে
সকালে উঠেই ক্লান্তি অনুভব করা অনেক সময় ইঙ্গিত করে যে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না।
- আয়রনের অভাব (Anemia): শরীরে আয়রনের অভাবের ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যার ফলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং শরীর ক্লান্ত অনুভব করে।
- ভিটামিন B12 এর অভাব: এই ভিটামিন মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর অভাবের ফলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি অনুভূত হয়।
- ভিটামিন D ও ক্যালশিয়ামের অভাব: এগুলি হাড় ও পেশির শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। এর অভাবের ফলে পেশিতে ব্যথা ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
উপায়: আপনার খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি, ডাল, ডিম, দুধ, অঙ্কুরিত শস্য এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট সেবন করুন।
চাপ ও উদ্বেগ – ঘুমের মানকে প্রভাবিত করে
অত্যধিক মানসিক চাপ বা উদ্বেগের অবস্থায় শরীর ও মস্তিষ্ক পুরোপুরিভাবে শিথিল হতে পারে না। রাতভর ঘুম হয় কিন্তু সেটি গভীর হয় না।
- চাপের ফলে Cortisol হরমোন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ঘুম হালকা হয়ে যায়।
- মন অতিরিক্ত সক্রিয় থাকে, যার ফলে শরীর সঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না।
উপায়:
- ঘুমোনোর আগে মোবাইল ও টিভি থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
- ১০-১৫ মিনিট ধ্যান বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন।
- একই সময়ে ঘুমাতে ও উঠার অভ্যাস করুন।
অধিক ক্যাফেইন সেবন – ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর কারণ
যদি আপনি রাতে দেরিতে চা বা কফি পান করার অভ্যাসী হন, তাহলে এটি আপনার ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু হতে পারে।
- ক্যাফেইন একটি উদ্দীপক যা মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে।
- এর ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় বা ঘুম বারবার ভেঙে যায়।
- এর প্রভাব পরের দিন সকালে শরীরের শক্তির উপর পড়ে।
উপায়:
- রাতে ৭ টার পর ক্যাফেইন থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
- হার্বাল চা বা হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করা ভালো বিকল্প হতে পারে।
লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্য সমস্যা – ক্লান্তির প্রকৃত কারণ
নিয়মিত সকালে ক্লান্তি অনুভব করা অনেক সময় গুরুতর রোগের দিকে ইঙ্গিত করে –
- থাইরয়েডের সমস্যা (Hypothyroidism) – মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায় যার ফলে দুর্বলতা দেখা দেয়।
- ডায়াবেটিস – শরীরে শর্করার ভারসাম্যহীনতা শক্তির মাত্রাকে প্রভাবিত করে।
- রক্তচাপের অনিয়মিততা – কম বা বেশি রক্তচাপের ফলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও অলসতা হতে পারে।
- স্লিপ অ্যাপনিয়া – রাতে বারবার শ্বাস থেমে যাওয়ার ফলে ঘুম পুরো হয় না, যার ফলে সকালে ক্লান্তি হয়।
উপায়:
- রক্ত পরীক্ষা করে শরীরের ভেতরের ঘাটতি বা রোগ শনাক্ত করুন।
- সময়মতো চিকিৎসা পরামর্শ নিন।
অনিয়মিত ঘুম এবং ঘুমের চক্রের ব্যাঘাত
রাতে দেরিতে ঘুমানো, বারবার ঘুম ভাঙা বা ভুল ঘুমের ধরণের কারণেও সকালে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
- ঘুমের অভাবের ফলে শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না।
- এটি শারীরিক ও মানসিক উভয় পর্যায়েই ক্লান্তি নিয়ে আসে।
উপায়:
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা গভীর ঘুম নিন।
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে ও উঠার অভ্যাস করুন।
- শয়নকক্ষের পরিবেশ ঘুমের উপযোগী রাখুন (অন্ধকার, শান্ত, ঠান্ডা)।
যদি মাঝে মাঝে সকালে উঠেই ক্লান্তি অনুভব হয় তাহলে এটি সাধারণ হতে পারে। কিন্তু যদি এটি অভ্যাসে পরিণত হয় তাহলে এটি আপনার শরীরের ভেতর চলমান অসামঞ্জস্য বা ঘাটতির ইঙ্গিত। সঠিক সময়ে পুষ্টি, ঘুম, চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতি মনোযোগ দিলে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।