মিলেনিয়ালদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি: শৈশবের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ভূমিকা

🎧 Listen in Audio
0:00

মিলেনিয়ালদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে শৈশবে ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনের সংস্পর্শে আসার কারণে। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, এই ঝুঁকি যুব প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।

কোলন ক্যান্সার, যা সাধারণত বৃদ্ধদের রোগ হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন মিলেনিয়ালদের (২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুবক-যুবতী) মধ্যেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে শৈশবে ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসার ফলে ভবিষ্যতে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই তথ্যটি বোঝার জন্য সাহায্য করে যে গত কয়েক দশকে ৫০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের ঘটনা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোলন ক্যান্সারের ঘটনা বৃদ্ধি: কারণ কী?

কোলন ক্যান্সার এখন শুধুমাত্র বৃদ্ধদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি এখন যুবকদের মধ্যেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০ বছরে ৫০ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে প্রতি দশকে এই ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে। আগে এই রোগটি বেশিরভাগ বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা যেত, কিন্তু এখন এটি যুবকদেরও প্রভাবিত করছে।

এই পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে, কারণ এই রোগের দ্রুত বৃদ্ধি আমাদের সমাজে একটি নতুন বিপদের দিকে ইঙ্গিত করছে। এই পরিবর্তনের কারণ কী, তা জানা এবং বোঝা অত্যন্ত জরুরী যাতে আমরা এটি প্রতিরোধ করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারি এবং আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।

কোলন ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা

এই গবেষণায় ১১টি দেশের ৯৮১টি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার টিউমারের জিনের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন যে যাদের ৪০ বছর বয়সের আগে কোলন ক্যান্সার হয়েছে, তাদের ডিএনএতে কিছু বিশেষ পরিবর্তন দেখা গেছে। এই পরিবর্তনগুলি এসচেরিচিয়া কোলাই (Escherichia coli) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন কোলিব্যাকটিন (Colibactin) নামক টক্সিনের কারণে হয়।

এই টক্সিনের সংস্পর্শে আসার ফলে শৈশবে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে যারা ১০ বছর বয়সের আগে এই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসেছে।

কোলিব্যাকটিন এবং কোলন ক্যান্সার: জিনে পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

কোলিব্যাকটিন একটি টক্সিন যা এসচেরিচিয়া কোলাই (E. coli) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন হয়। এই টক্সিন জিনে পরিবর্তন আনতে পারে, যা শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে। এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। গবেষকদের মতে, যদি শিশুদের ১০ বছর বয়সের আগে এই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে, তবে এটি জিনে পরিবর্তন আনতে পারে।

এই পরিবর্তন যুবকদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। লুডমিল আলেকজান্ড্রোভ জানিয়েছেন যে এই প্রভাব শৈশবে ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শ থেকে শুরু হয়ে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই গবেষণা থেকে স্পষ্ট যে কোলিব্যাকটিন-এর মত টক্সিনের প্রভাব আমাদের জিনোমে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, যা আমাদের ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের মুখোমুখি করতে পারে।

ক্যান্সারের ঘটনা বৃদ্ধি: কোন কোন দেশে প্রভাব?

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু দেশে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দেশগুলির মধ্যে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, রাশিয়া এবং থাইল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। এই দেশগুলিতে ক্যান্সারের ঘটনা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু বিশেষ ধরণের জিন মিউটেশনও পাওয়া গেছে। এর অর্থ হল এই দেশগুলির স্থানীয় পরিবেশগত কারণ, যেমন দূষণ, খাদ্য এবং জীবনযাত্রার মান, এই রোগের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

গবেষণা থেকে এটিও জানা যায় যে এই দেশগুলিতে বসবাসকারী মানুষ বিশেষ ধরণের পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতএব, এই দেশগুলিতে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বর্ধমান ঘটনা বুঝতে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন।

গবেষকদের মতামত: সমাধান কী হতে পারে?

স্প্যানিশ ন্যাশনাল ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের গবেষক, মার্কোস ডায়াজ-গে'র মতে, বিভিন্ন দেশে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বর্ধমান ঘটনার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এটা সম্ভব যে প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলে বিশেষ পরিবেশগত বা জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত উপাদান এই রোগকে বাড়িয়ে তুলছে। এই কারণেই, গবেষকদের মতে, একটি সাধারণ সমাধানের পরিবর্তে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যভিত্তিক (টার্গেটেড) প্রতিরোধ কৌশল গ্রহণ করা উচিত।

উদাহরণস্বরূপ, কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে খাদ্য, দূষণ বা অন্য কোনও কারণের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা থাকতে পারে, যার দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। এই ক্ষেত্রে, প্রতিটি এলাকার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিতে এই ক্যান্সার থেকে বাঁচার চেষ্টা করা যেতে পারে, যাতে এই রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করা যায় এবং এর ঝুঁকি কমানো যায়।

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়

কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য শৈশবে শিশুদের ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরী। সঠিক সময়ে গ্রহণ করা এই পদক্ষেপগুলি দিয়ে আমরা এই রোগের ঝুঁকি কমাতে পারি। বিশেষ করে, যদি শিশুদের শৈশবে ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে রাখা হয় এবং তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে এই রোগ থেকে বাঁচার একটি ভালো উপায় হতে পারে। অতএব, শিশুদের যত্ন এবং তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন এই বিপজ্জনক রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

Leave a comment