আমেরিকার বাজারে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ আইফোনের আধিপত্য: টিম কুকের ঘোষণা

আমেরিকার বাজারে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ আইফোনের আধিপত্য: টিম কুকের ঘোষণা
সর্বশেষ আপডেট: 04-05-2025

এপলের CEO টিম কুক সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তিনি বলেছেন যে আগামী দিনগুলিতে আমেরিকায় বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আইফোনই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ হবে।

প্রযুক্তি: এপল এখন তার উৎপাদন কেন্দ্র ভারতে স্থানান্তরিত করছে, ফলে ভারতকে আইফোন উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। এপলের CEO টিম কুকের সাম্প্রতিক বিবৃতি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আগামী দিনগুলিতে আমেরিকায় বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আইফোনই ভারতে তৈরি হবে।

এই পদক্ষেপটি চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে নেওয়া হয়েছে এবং ভারত এখন এপলের জন্য কেবলমাত্র একটি প্রধান বাজার নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে।

চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে এপল

চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে সবচেয়ে বড় কারণ হলো বাণিজ্য যুদ্ধ, উচ্চ কর এবং কোভিড-19 এর মতো বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা। এপলকে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য বিকল্প দেশগুলির দিকে ধাবমান হতে হয়েছে। ভারত এবং ভিয়েতনাম এই কৌশল থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। ভারতে আমদানি শুল্ক কম এবং এখানকার সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পরিকল্পনা বিদেশী কোম্পানিগুলিকে আকৃষ্ট করেছে। তদুপরি, ভারতে শ্রম ব্যয় চীনের তুলনায় অনেক কম, যা এটিকে একটি আকর্ষণীয় উৎপাদন গন্তব্য করে তোলে।

ভারতে আইফোন উৎপাদনের বৃদ্ধি

এপলের ভারতে আইফোন তৈরির পদক্ষেপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্চ ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে, ভারতে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের আইফোন তৈরি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৬০% বৃদ্ধি। এটি ভারতের আইফোন উৎপাদন ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান সাফল্য স্পষ্টভাবে দেখায়। ভারতে আইফোন উৎপাদন আগের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে ভারতে তৈরি আইফোনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক নতুন উৎপাদন কেন্দ্র

ভারতে আইফোন অ্যাসেম্বলিংয়ের প্রধান কাজ তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে হচ্ছে। এখানকার কারখানাগুলিতে ফক্সকন, পেগাট্রন এবং টাটা ইলেকট্রনিক্সের মতো প্রধান কোম্পানিগুলি এপলের জন্য স্মার্টফোন তৈরি করছে। ফক্সকন, যা এপলের সবচেয়ে বড় উৎপাদন অংশীদার, কর্ণাটকে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে একটি নতুন কারখানা স্থাপন করেছে। এই কারখানা থেকে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান পাচ্ছে এবং তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনের মতে, যদি ভারতে আইফোন উৎপাদনের বর্তমান গতি বজায় থাকে, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যে ভারতে প্রতি বছর ৬ কোটিরও বেশি আইফোন তৈরি হতে পারে। এটি বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিগুণ হবে। এই বৃদ্ধি ভারতকে কেবলমাত্র একটি প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে না, বরং এটি এপলকে বিশ্ববাজারে তার আইফোনের সরবরাহ আরও শক্তিশালী করতেও সাহায্য করবে।

ভারত থেকে আইফোন রপ্তানির বৃদ্ধি

২০২৪ সালে ভারত থেকে ১৭.৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১.৪৯ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের আইফোন রপ্তানি করা হয়েছে। এটি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের ইঙ্গিত, কারণ এখন ভারতে তৈরি প্রায় ৭০% আইফোন বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। চীনের তুলনায় ভারত থেকে রপ্তানি করা সস্তা, কারণ এখানে করের হার কম। এটি এপলকে তার উৎপাদন এবং রপ্তানির ব্যয় কমাতে সাহায্য করছে।

যদিও ভারতে এপলের বাজার ভাগ বর্তমানে মাত্র ৮%, তবে দেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা আগামী বছরগুলিতে এটিকে আরও বাড়াতে পারে। টিম কুকের বিবৃতি এটাই প্রমাণ করে যে এপল এখন ভারতকে কেবলমাত্র গ্রাহক হিসেবে নয়, একজন অংশীদার হিসেবে দেখছে। ভারতের নীতি, কম ব্যয় এবং দক্ষ কর্মীশক্তি এটিকে বিশ্বব্যাপী আইফোন উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্র করে তুলেছে।

Leave a comment