সাভিত্রীবাই ফুলে-র পুণ্যতিথি: নারীশিক্ষার অগ্রদূতের স্মরণ

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতের নারীশিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারের প্রতীক সাভিত্রীবাই ফুলে-র পুণ্যতিথি ১০ মার্চ পালিত হয়। উনিশ শতকে যখন নারীশিক্ষা নিয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখন সাভিত্রীবাই ফুলে শুধুমাত্র পড়াশোনা করেননি, বরং প্রতিটি মেয়েকে শিক্ষার আলোয় জাগ্রত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে নারীদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা

সাভিত্রীবাই ফুলে-র জন্ম হয় ১৮৩১ সালের ৩ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার নায়গাঁও-এ। মাত্র ৯ বছর বয়সে তার বিবাহ হয় জ্যোতিরাব ফুলে-র সাথে, যিনি তাকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব নেন। জ্যোতিরাব-এর সহযোগিতায় তিনি নিজে শিক্ষা লাভ করার পাশাপাশি ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

১৮৪৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পুণেতে খোলা এই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতির নয়জন ছাত্রীকে শিক্ষা দেওয়া হত। সেই সময়ে যখন মেয়েদের পড়ানোকে পাপ বলে মনে করা হত, তখন সাভিত্রীবাই ফুলে নির্ভীক হয়ে এই পথে অগ্রসর হন।

সমাজের প্রতিরোধ ও সংগ্রাম

যখন সাভিত্রীবাই বিদ্যালয়ে যেতেন, তখন কট্টরপন্থীরা তাঁর বিরোধিতা করত। তাঁর উপর পাথর ও কাদা ছোড়া হত, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি নারীদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।

নারী সবলীকরণের প্রচেষ্টা

• প্রথম নারী শিক্ষিকা হিসেবে ভারতে শিক্ষার নতুন অধ্যায় রচনা করেন।
• বিধবা বিবাহকে উৎসাহিত করেন এবং সমাজে বিধবাদের প্রতি মানসিকতা পরিবর্তনের কাজ করেন।
• অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদবিরোধী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।
• নারীদের অধিকারের জন্য লড়াই করে অনেক বিদ্যালয় ও সমাজ সংস্কার সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন।

মহামারীর সময় আত্মত্যাগ

১৮৯৭ সালে যখন প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে, তখন সাভিত্রীবাই ফুলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ মানুষের সেবা করেন। সংক্রামিত রোগীদের সেবা করতে গিয়ে ১৮৯৭ সালের ১০ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।

সাভিত্রীবাই ফুলে-র উত্তরাধিকার

সাভিত্রীবাই ফুলে কর্তৃক শুরু করা কাজের প্রভাব আজও দেখা যায়। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে আজ লক্ষ লক্ষ নারী শিক্ষা লাভ করছেন এবং সমাজে নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন। তাঁর পুণ্যতিথিতে সমগ্র দেশ তাঁকে স্মরণ করে এবং তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধা জানায়।

Leave a comment