সামাজিক কর্মী সাভিত্রীবাই ফুলে'র জন্মদিন ৩ জানুয়ারি। তিনি ১৮৩১ সালের ৩ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার নায়গাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সাভিত্রীবাই ফুলে ভারতের প্রথম নারী শিক্ষিকা এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি নারী ও দলিত সমাজের শিক্ষা ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে "নারী শিক্ষার অগ্রদূত" এবং "আদিকবিয়ত্রী" হিসেবেও সম্মানিত করা হয়।
প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর কাজগুলি স্মরণ করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষাগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর অবদান জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সাভিত্রীবাই ফুলে'র নাম ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লেখা আছে। তাঁর জীবন ও কাজ ভারতীয় সমাজে বিপ্লবের সঞ্চার করেছিল।
৩ জানুয়ারি ১৮৩১ সালে জন্মগ্রহণকারী সাভিত্রীবাই ফুলে কেবল ভারতের প্রথম নারী শিক্ষিকা ছিলেন না, বরং সামাজিক পরিবর্তনের এক অনন্য প্রতীক ছিলেন। তাঁর জীবন নারী ও দলিত সমাজের উন্নয়নের জন্য উৎসর্গীকৃত ছিল।
সাভিত্রীবাই ফুলে'র জীবন পরিচয়
সাভিত্রীবাই'র জন্ম মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার নায়গাঁওয়ে। তাঁর পিতা খন্দোজী নেওসে এবং মাতা লক্ষ্মীবাই তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষা দানের স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু সামাজিক বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁর বিবাহ ১৩ বছর বয়সী জ্যোতিরাও ফুলে'র সাথে হয়। বিবাহের পর জ্যোতিরাও তাঁর শিক্ষাকে উৎসাহিত করেন এবং নিজেই সাভিত্রীবাই'র শিক্ষার গুরু হন।
নারী শিক্ষার সূচনা
১৮৪৮ সালে সাভিত্রীবাই এবং জ্যোতিরাও ফুলে পুণেতে ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন। এই পদক্ষেপ তৎকালীন সমাজে বিপ্লবী ছিল, যখন মেয়েদের শিক্ষাকে পাপ বলে মনে করা হতো। এই বিদ্যালয়ের সূচনা মাত্র ৯ জন ছাত্রীর সাথে হয়।
সামাজিক অসুবিধার সম্মুখীন
সাভিত্রীবাই ফুলে নারী শিক্ষার জন্য সমাজের বিরোধিতার সম্মুখীন হন। যখন তিনি স্কুলে যেতেন, লোকেরা তাঁর উপর নোংরা, পোড়া এবং গোবর ছুঁড়ে মারত। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতি তাঁকে ভেঙে ফেলতে পারেনি। তিনি তাঁর সাথে একটি অতিরিক্ত শাড়ি নিয়ে যেতেন, যাতে স্কুলে পৌঁছে নোংরা শাড়ি পরিবর্তন করতে পারেন। তাঁর এই অদম্য প্রতিজ্ঞা কেবল শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করেনি, বরং সমাজকে নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছিল।
দলিত ও নারীদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম
সাভিত্রীবাই ফুলে কেবল নারী শিক্ষার জন্যই সংগ্রাম করেননি, বরং বিধবা বিবাহ, ছুঁয়াছুঁয়ি দূরীকরণ এবং দলিত সমাজের উন্নয়নের জন্যও কাজ করেছেন। তিনি নারীদের আত্মনির্ভরশীল করার জন্য অসংখ্য প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে শিক্ষাই সমাজে পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
সাহিত্য ও কবিতার মাধ্যমে সচেতনতা
সাভিত্রীবাই একজন কবিও ছিলেন। তাঁর কবিতাগুলি সমাজে বিরাজমান কুসংস্কারের উপর আঘাত হানত এবং নারীদের সচেতন করে তুলত। মারাঠি সাহিত্যে তাঁর অবদান তাঁকে "আদিকবিয়ত্রী" হিসেবে সম্মানিত করে।
প্লেগ মহামারীতে সেবা ও ত্যাগ
সাভিত্রীবাই ফুলে'র জীবন সেবা ও ত্যাগের প্রতীক। ১৮৯৭ সালে যখন প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে, তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা করেছিলেন। এই সময়, একজন সংক্রমিত শিশুর সেবা করার সময় তিনি নিজেও প্লেগে আক্রান্ত হন এবং ১৮৯৭ সালের ১০ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।
মহান কাজের প্রতিধ্বনি
• সাভিত্রীবাই ৫ বছরের মধ্যে আরও ৫টি স্কুল খোলেন।
• তিনি বিধবা মহিলাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করতেন।
• তিনি "সত্যশোধক সমাজ"-এর প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখেন।
প্রকাশিত সাহিত্য ও সম্মান
সাভিত্রীবাই ফুলে'র উপর অনেক বই ও নাটক প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক জীবনী অনেক লেখক তাঁদের নিজস্ব ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। ২০১৭ সালে গুগল তাঁর ১৮৯তম জন্মদিনে গুগল ডুডলের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানিত করে।
সাভিত্রীবাই ফুলে'র উত্তরাধিকার
আজও সাভিত্রীবাই ফুলে'র নাম ভারতীয় সমাজে অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি কেবল নারীদের শিক্ষার অধিকারই দেননি, বরং তাদের আত্মসম্মানের সাথে জীবনযাপনের পথও দেখিয়েছেন। তাঁর অবদান শিক্ষা দেয় যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের আদর্শ ও লক্ষ্যে অটল থাকাই প্রকৃত সাফল্য।
সাভিত্রীবাই ফুলে ভারতীয় সমাজের এক মহানায়িকা। তাঁর জীবন প্রতিটি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে আজ নারী ও দলিত সমাজ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। সাভিত্রীবাই ফুলে'র শিক্ষা ও তাঁর সংগ্রাম সর্বদা সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে। তাঁর জীবন এই বার্তা দেয় যে শিক্ষা ও সমতা একটি উন্নত সমাজের ভিত্তি।