বাবা রামদেবের ৫৯তম জন্মদিন: জীবন, যোগ এবং সাফল্যের কাহিনি

🎧 Listen in Audio
0:00

আজ, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে বাবা রামদেব তাঁর ৫৯তম জন্মদিন পালন করছেন। তাঁর জীবন অনুপ্রেরণার উৎস, যিনি যোগ ও আয়ুর্বেদকে এক নতুন রূপ দিয়েছেন এবং সারা দেশ তথা বিশ্বজুড়ে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। এই উপলক্ষে আমরা বাবা রামদেবের জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করব এবং সেই সাথে তাঁর সম্পত্তি সম্পর্কেও জানব।

শৈশব এবং প্রাথমিক জীবন

বাবা রামদেবের জন্ম ২৫শে ডিসেম্বর, ১৯৬৫ সালে হরিয়ানার মহেন্দ্রগড় জেলায়। তিনি একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর বাবা-মায়ের নাম ছিল রামনিবাস যাদব ও গুলাবো দেবী। তাঁর শৈশব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর বাবা-মা জানান যে তিনি খুব লাজুক স্বভাবের ছিলেন এবং অন্যান্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা থাকতেন। ছোটবেলায় তাঁর ওজনও বেশি ছিল, যার কারণে বন্ধুদের ঠাট্টার শিকার হতে হত তাঁকে।

যোগের সূচনা

বাবা রামদেবের যোগের প্রতি আগ্রহ খুব কম বয়সেই শুরু হয়েছিল। যখন তাঁর বয়স মাত্র ৮ বছর, তখন তাঁর শরীরে ফোঁড়া হতে শুরু করে, যার কারণে তাঁর হাঁটতে অসুবিধা হতো। এই সমস্যা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু তিনি যোগের মাধ্যমে এটি সারানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি যোগাভ্যাস শুরু করেন এবং তাঁর শারীরিক সমস্যা দূর করেন। একবার তিনি প্যারালাইসিসের শিকারও হয়েছিলেন, যার কারণে তাঁর শরীরের বাঁ দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু যোগ তাঁকে সেই সমস্যা থেকেও মুক্তি দিয়েছে।

শিক্ষা এবং গুরুকুলে সময়

বাবা রামদেব তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা নিজের শহর থেকেই লাভ করেন, যেখানে তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি খানপুর গ্রামের একটি গুরুকুলে শিক্ষা গ্রহণ করতে যান, যেখানে তিনি যোগ, সংস্কৃত এবং ভারতীয় শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এই সময় তিনি তাঁর জীবনের দিকনির্দেশনাও পান এবং সন্ন্যাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্বামী শঙ্করদেব জি মহারাজের তত্ত্বাবধানে তিনি বাবা রামদেব নামে পরিচিত হন।

বাবা রামদেবের পতঞ্জলি যাত্রা

বাবা রামদেব শুধুমাত্র একজন যোগ গুরু হিসেবেই পরিচিত নন, একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ১৯৯৫ সালে, তিনি বাবা রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণকে সাথে নিয়ে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানিটি আজ বিশ্বজুড়ে আয়ুর্বেদিক পণ্যের জন্য বিখ্যাত এবং সারা দেশে এর কোটি কোটি গ্রাহক রয়েছে। পতঞ্জলি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যখাতেই নয়, দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য যেমন শ্যাম্পু, সাবান, খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রেও নিজেদের স্থান তৈরি করেছে। আজ পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ ভারতীয় বাজারে একটি বড় নাম এবং এর বিক্রির পরিমাণ বছরে কয়েক বিলিয়ন রুপিতে পৌঁছেছে।

বাবা রামদেবের সম্পত্তি

আজ বাবা রামদেব শুধু একজন যোগ গুরু নন, একজন বড় ব্যবসায়ীও বটে। রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা)-এর বেশি। তাঁর আয়ের প্রধান উৎস পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ, তবে এর পাশাপাশি যোগ ব্যায়ামের ভিডিও, বই এবং সেমিনার থেকেও তাঁর আয় হয়। এর সাথে সাথে তাঁর আয়ুর্বেদিক ওষুধ ও পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা তাঁকে একজন শিল্পপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

যোগের মাধ্যমে সমাজের সেবা

বাবা রামদেবের মতে, যোগ শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যও প্রয়োজনীয়। তিনি যোগকে মানুষের জীবনের অংশ করার জন্য বিভিন্ন টিভি শো এবং চ্যানেলের মাধ্যমে যোগ শেখানোর একটি অভিযান শুরু করেছেন। তিনি যোগকে শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর এই কাজ মানুষকে সুস্থ, সুখী এবং চাপমুক্ত জীবন যাপন করতে উৎসাহিত করে।

বাবা রামদেবের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে মনে যদি দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে কোনো বাধাই অসম্ভব নয়। যোগ ও আয়ুর্বেদের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসাধারণ। তাঁর জন্মদিনে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর অবদানকে কুর্নিশ করি। তাঁর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং ভারতকে একটি সুস্থ জাতি হিসেবে গড়ে তোলার দিকে তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণীয় থাকবে।

Leave a comment