মাধবসিংহ সোলঙ্কির জন্মদিন ও রাজনৈতিক জীবনের বিস্ময়কর গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

মধবসিংহ সোলঙ্কি: মাধবসিংহ সোলঙ্কির পুণ্যতিথি পালিত হয় ৯ই জানুয়ারী। ১৯২৭ সালের ৩০শে জুলাইয়ের দিন গুজরাটের একটি কোলি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর জীবনের শুরু ছিল সাধারণ পরিবেশে, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবন তাঁকে ভারতের রাজনীতিতে একটি দৃঢ় পরিচয় এনে দিয়েছে। সোলঙ্কির পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিল, এবং তাঁর বড় ছেলে, ভারতসিংহ মাধবসিংহ সোলঙ্কি, একজন প্রধান রাজনীতিবিদ। মাধব সোলঙ্কি রাজনীতিতে প্রবেশ করে গুজরাটের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবেশ বুঝে নিয়েছিলেন এবং তাঁর রাজনীতি তদনুযায়ী গড়ে তুলেছিলেন।

KHAM সিদ্ধান্ত এবং গুজরাটের রাজনীতিতে পরিবর্তন

মাধবসিংহ সোলঙ্কিকে বিশেষ করে KHAM সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত, যা তিনি ১৯৮০-এর দশকে গুজরাটে প্রয়োগ করেছিলেন। KHAM-এর অর্থ হলো- K ক্ষত্রিয়, H হিন্দু, A আদিবাসী এবং M মুসলমান। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, সোলঙ্কি গুজরাটে জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলিকে একত্রিত করে এবং সরকারে নিজের দৃঢ়তা অর্জন করেন। এই কৌশলের অধীনে তিনি ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করেন, যা তাঁর রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করে। KHAM সূত্রের কারণে গুজরাটে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়, এবং সোলঙ্কি তাঁর দলকে শক্তিশালী করে তোলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ও বিতর্ক

১৯৮১ সালে, সোলঙ্কি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে গুজরাট সরকার বাক্সী কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে। এই পদক্ষেপ সোলঙ্কির সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ক হিসেবে দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পর রাজ্যে সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনও শুরু হয়। এই আন্দোলন দাঙ্গায় পরিণত হয় এবং এর ফলে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়।

তবে, এই ঘটনাগুলির পরও, ১৯৮৫ সালে সোলঙ্কি তাঁর পদ থেকে ইস্তিফা দেন, কিন্তু ১৯৮৬ সালে আবার নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনি ১৮২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৪৯টি আসন দখল করেন, যা আজও গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে একটি অনন্য রেকর্ড। এই সময়ে, সোলঙ্কি ক্ষত্রিয়, দলিত, আদিবাসী এবং মুসলমানদের সমর্থন পান, যার ফলে তাঁর রাজনীতিতে নতুন সম্প্রসারণ ঘটে।

বোফর্স বিতর্ক

মাধবসিংহ সোলঙ্কির নাম বোফর্স ঘটনায়ও জড়িত। ১৯৯২ সালে, সোলঙ্কি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনে ফেলবারের সাথে দেখা করেন। সিবিআই-এর মতে, এই সাক্ষাতের সময় সোলঙ্কি তাঁকে জানিয়েছিলেন যে "ভারতে ঘটনাটির তদন্ত থেকে কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি এবং পারস্পরিক সহায়তা চাওয়া রাজনৈতিক চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে ছিল।" এই ঘটনা সোলঙ্কির রাজনৈতিক চিত্রকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করে, কিন্তু তিনি ভারতের রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবেই থেকে যান।

শেষ সময় এবং অবদান

মাধবসিংহ সোলঙ্কির অবদান ভারতের রাজনীতিতে সবসময় স্মরণীয় থাকবে। তিনি শুধুমাত্র একজন দক্ষ নেতা ছিলেন না, বরং গুজরাটের উন্নয়ন এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সোলঙ্কি ভারতের রাজনীতিতে নয় শুধুমাত্র তাঁর নীতিগুলো দ্বারা প্রভাবিত করেছিলেন, তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন, যা তাঁর নেতৃত্বের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল।

২০২১ সালের ৯ই জানুয়ারী মাধবসিংহ সোলঙ্কির মৃত্যু হয়, যা ভারতীয় রাজনীতির একটি যুগের অবসান ঘটায়। তাঁর জীবন ও কর্ম ভারতীয় রাজনীতিতে সবসময় অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে।

```

Leave a comment