পালঘামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে দেখা করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। এই বৈঠকের সময়, তিনি হামলার পরের পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
নয়াদিল্লি: ২২শে এপ্রিল পালঘামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলা জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আবারও উত্তাল করে তুলেছে, যেখানে ২৬ জন পর্যটক সন্ত্রাসবাদীদের হামলার শিকার হয়েছেন। এই হামলার পর ভারত সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে।
এদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে দেখা করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। এই বৈঠকটি ৪০ মিনিট স্থায়ী হয় এবং এর সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অবহিত করা হয়।
রাজনাথ সিংহ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যে ৪০ মিনিটের বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে দেখা করার আগে, রাজনাথ সিংহ ২৩শে এপ্রিল দিল্লিতে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহানের সাথে দেখা করেন। এই বৈঠকে উভয় নেতা পালঘামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পরের সামরিক কৌশল এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সামগ্রিক প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়।
সূত্রমতে, রাজনাথ সিংহ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অবহিত করেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সামগ্রিক কৌশল ত্বরান্বিত করেছে। তিনি জানান যে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (BSF) ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে, বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিষয়ে বিবেচনা
এই বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) -এ ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও এই হামলার যথাযথ জবাব দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যে এই বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মনে করা হচ্ছে যে এই ধরণের হামলার পর ভারতের কৌশলে কিছু কঠোর পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যাতে পাকিস্তানকে তার কাজের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যায়।
CDS জেনারেল অনিল চৌহানের সাথে বৈঠক
রাজনাথ সিংহ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠকের আগে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী CDS জেনারেল অনিল চৌহানের সাথেও দেখা করেন। এই বৈঠকে উভয়ে পালঘাম হামলার পরের সামরিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। জেনারেল অনিল চৌহান জানান যে ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধুমাত্র তার কৌশলকে শক্তিশালী করেনি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায়, বরং পাকিস্তানের সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতাও বৃদ্ধি করেছে।
এছাড়াও, CDS জানান যে ভারতীয় সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন যে ভারতীয় সৈন্যরা যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত।
পাকিস্তানের কার্যকলাপ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর জবাব
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠকের সময়, নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানের গোলাগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং কোনো কারণ ছাড়াই ভারতীয় অঞ্চলের দিকে গোলাগুলি করছে। ২৬ এবং ২৭ এপ্রিল রাতেও পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরে গোলাগুলি করে, যার জবাব ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে ভারতীয় অঞ্চলে যেকোনো ধরণের অনুপ্রবেশ সহ্য করা হবে না।
ভারতীয় নৌবাহিনীর অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী সম্প্রতি অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে। এই পরীক্ষাকে ভারতীয় নৌবাহিনী সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, এবং এটি প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় নৌবাহিনী যেকোনো সমুদ্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন যে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্ধিত প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এবং নির্ভুলতাকে তুলে ধরে। নৌবাহিনীর বিশ্বাস যে তাদের পুরো দল যেকোনো সমুদ্র পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে সক্ষম। এই সফল পরীক্ষা থেকে এই বার্তাও গেছে যে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সমুদ্রপথে আসা যেকোনো চ্যালেঞ্জকে কেবল ব্যর্থ করবে না, বরং দেশের সমুদ্র সীমানার রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ঘাটতি রাখবে না।