শ্রাবণ পূর্ণিমা ২০২৫: তিথি, পূজন, ও ধর্মীয় গুরুত্ব

🎧 Listen in Audio
0:00

শ্রাবণ মাস হিন্দু ধর্মে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভগবান শিবকে উৎসর্গীকৃত এই মাসটি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও তপস্যার প্রতীক। এই মাসের শেষ দিনে আগমনী শ্রাবণ পূর্ণিমা কেবলমাত্র রক্ষাবন্ধন সহ অন্যান্য পবিত্র উৎসবের সাক্ষী হিসাবেই নয়, বরং এই দিনে স্নান, দান, ব্রত ও পূজার অত্যন্ত পুণ্যফলও লাভ করা যায়। ২০২৫ সালে এই তিথি আরও বিশেষভাবে উদযাপিত হবে, কারণ এ বছর সর্বার্থসিদ্ধি যোগ ও অভিজিত মুহূর্তের যোগ ঘটছে।

শ্রাবণ পূর্ণিমা ২০২৫-এর তিথি ও পূজনের সঠিক সময়

শ্রাবণ পূর্ণিমা ২০২৫ সালে ৮ আগস্ট দুপুর ২:১২ মিনিটে শুরু হবে এবং ৯ আগস্ট দুপুর ১:২৪ মিনিটে শেষ হবে। ধর্মীয় প্রথা ও জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, ব্রত ও পূজার আয়োজন উদয়তিথি অর্থাৎ সূর্যোদয়ের দিনেই করা হয়। তাই শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার ব্রত ও পূজা ৯ আগস্ট ২০২৫ সালে পালন করা হবে। এই দিন শিব পূজা, চন্দ্র পূজন, রক্ষাবন্ধন ও পিতৃতর্পণের মতো বিশেষ কাজ করা হয়, যা জীবনে সুখ-শান্তি ও শুভ ফল বয়ে আনে বলে মনে করা হয়।

শ্রাবণ পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রোদয়ের সময়

৯ আগস্ট ২০২৫ সালে শ্রাবণ পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রমার উদয় সন্ধ্যা ৭:২১ মিনিটে হবে। এই বিশেষ উপলক্ষে চন্দ্রদেবের পূজা করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিন চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দিলে মনের অশান্তি দূর হয় এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলীতে চন্দ্রমা দুর্বল বা পীড়িত থাকে, তাহলে এই দিন বিশেষ পূজা ও উপায় করলে তার দোষ কমে যেতে পারে। তাই চন্দ্রোদয়ের সময় শ্রদ্ধা সহকারে পূজা অবশ্যই করবেন।

শ্রাবণ পূর্ণিমার ধর্মীয় গুরুত্ব

শ্রাবণ পূর্ণিমা ও রক্ষাবন্ধন: এই দিন বোনেরা ভাইয়ের কलाईতে রক্ষাসূত্র বাঁধে এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করে। এটি প্রেম, সমর্পণ ও সুরক্ষার উৎসব। মনে করা হয় যে রক্ষাবন্ধনে বোনদের দ্বারা বাঁধা রক্ষাসূত্র শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করে।

পিতৃতর্পণ: শ্রাবণ পূর্ণিমায় পিতৃতর্পণ করলে পূর্বপুরুষদের আত্মাকে শান্তি মেলে। বিশেষ করে যাদের পিতৃমাতার মৃত্যু শ্রাবণ মাসে হয়েছে তাদের জন্য এই দিনটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। তর্পণের মাধ্যমে পিতৃদোষও শান্ত হয় এবং পরিবারে সুখ-শান্তি আসে।

চন্দ্রপূজনের গুরুত্ব: চন্দ্রমাকে মনের কারক বলে মনে করা হয়। যাদের জন্মকুণ্ডলীতে চন্দ্রমা নীচের অবস্থানে আছে অথবা অশুভ গ্রহের প্রভাবে পীড়িত, তাদের এই দিন চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দিয়ে মানসিক শক্তি, স্মৃতিশক্তি ও আবেগগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য পাওয়া যায়।

স্নান-দান ও পূজার শুভ মুহূর্ত

  • ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান: ব্রহ্মমুহূর্তে স্নানের সময় সকাল ৪:২৮ থেকে ৫:১৬ মিনিট পর্যন্ত। এই শুভ সময়ে স্নান করলে দেহ ও মন পবিত্র হয় এবং বিশেষ পুণ্য লাভ করা যায়।
  • অভিজিত মুহূর্তে পূজা: অভিজিত মুহূর্ত দুপুর ১২:০৬ থেকে ১২:৫৮ মিনিট পর্যন্ত, যা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই সময়ে শিব বা চন্দ্রমার পূজা করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
  • সর্বার্থসিদ্ধি যোগ: এই যোগে করা যে কোনও শুভ কাজ সফলতার দিকে নিয়ে যায়। রক্ষাসূত্র বাঁধা, ব্রত, দান-পুণ্য— সব কিছুর জন্যই এই যোগ ফলপ্রসূ।

শ্রাবণ পূর্ণিমার পূজাবিধি

শিব পূজন: এই দিন বিশেষ করে শিবলিঙ্গে জল, দুধ, মধু, বেলপত্র ইত্যাদি অর্পণ করুন। ‘ॐ নমঃ শিবায়’ মন্ত্রের জপ করুন।

চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দিন: রাতে চন্দ্রোদয়ের সময় পরিষ্কার জলে চাল, চিনি ও সাদা ফুল দিয়ে চন্দ্রদেবকে অর্ঘ্য দিন। এতে মন স্থির থাকে।

রক্ষাসূত্রের পূজন: রক্ষাসূত্র (রাখি) পূজায় রাখুন এবং মন্ত্রের সাহায্যে ভাইয়ের কलाईতে বাঁধুন।

পিতৃতর্পণ করুন: আপনার পিতৃমাতাকে জল অর্পণ করুন এবং তাদের স্মরণ করে পিন্ডদান বা শ্রাদ্ধ করুন।

দান-পুণ্য করুন: দরিদ্রদের খাবার, কাপড়, দুধ, চাল, চিনি ইত্যাদি দান করুন। এতে আর্থিক বাধা দূর হয় এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।

শ্রাবণ পূর্ণিমা ও পারিবারিক প্রেম

এই দিনটি কেবলমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিতে নয়, বরং পারিবারিক প্রেম ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীকও। যেখানে একদিকে ভাই-বোন পরস্পরের প্রতি তাদের প্রেম রক্ষাসূত্র দিয়ে বাঁধে, সেখানে অন্যদিকে পুরো পরিবারে পূজা, ভজন-কীর্তন ও তর্পণের মতো কাজের মাধ্যমে একাত্মতা ও পুণ্যের পরিবেশ তৈরি হয়।

শ্রাবণ পূর্ণিমা ২০২৫ আত্মশুদ্ধি, পারিবারিক প্রেম ও পিতৃকর্তব্যের অদ্ভুত মিলন। এই দিন যদি সঠিক পদ্ধতি ও শ্রদ্ধার সাথে পালন করা যায়, তাহলে জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও ভারসাম্য আসে। শিব ভক্তি, চন্দ্রমার পূজন ও রক্ষাবন্ধনের উৎসব—এই তিনটির সমন্বয়ে এই দিন আরও পবিত্র হয়ে ওঠে।

Leave a comment