রাজস্থানের শিকর জেলার খাটু শ্যাম মন্দির হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান। এই মন্দির বাবা খাটু শ্যামকে উৎসর্গীকৃত, যাঁকে হারেওয়ালা সাহায্যকারীও বলা হয়। খাটু শ্যামের পূজা ও দর্শন করলে ভক্তদের সকল মনোকামনা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস, তাই দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত এখানে আসেন। খাটু শ্যাম মন্দির ধর্মীয় আস্থার কেন্দ্র হওয়ার সাথে সাথে ভক্তদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়নের স্থান হিসেবেও পরিচিত। এই প্রবন্ধে আমরা খাটু শ্যাম মন্দিরের আরতির সময়, মন্দিরের খোলা ও বন্ধের সময় এবং মন্দিরের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
খাটু শ্যাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় গুরুত্ব
খাটু শ্যাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেনাপতি বর্বারিকের সম্মানে করা হয়েছে, যাঁকে খাটু শ্যাম নামে পরিচিত। বর্বারিককে মহাভারত যুদ্ধের সময় তাঁর অসাধারণ বীরত্ব ও সমর্পণের জন্য স্মরণ করা হয়। বলা হয়, বর্বারিক প্রাণের বলি দিয়ে ভগবান কৃষ্ণের লীলাকে সফল করেছিলেন। তাঁর ভক্তরা শ্রদ্ধাভরে এই মন্দিরে আসেন এবং তাঁর কৃপা লাভের জন্য ভক্তিপূর্ণ পূজা করেন।
মন্দিরে আগত ভক্তদের বিশ্বাস, খাটু শ্যামের পূজা-অর্চনা করলে জীবনের সকল বাধা দূর হয়, মনের ইচ্ছা পূর্ণ হয় এবং সমস্যার সমাধান মেলে। তাই, এই মন্দিরের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর।
খাটু শ্যাম মন্দিরে প্রতিদিন পাঁচবার আরতি হয়
খাটু শ্যাম মন্দিরে প্রতিদিন পাঁচটি আরতি হয়, যাদের প্রত্যেকটিরই নিজস্ব গুরুত্ব আছে। এই আরতিগুলি মন্দিরে ভক্তি ও শ্রদ্ধার পরিবেশকে আরও দিব্য করে তোলে। আরতির প্রক্রিয়ায় ভগবান শ্যামের মহিমা গান করা হয়, যা ভক্তদের মনকে সন্তুষ্টি ও শান্তিতে পূর্ণ করে।
মঙ্গলা আরতি (সকাল ০৪:৩০ টা): মন্দিরের দ্বার খোলার সাথে সাথেই এই আরতি হয়। মঙ্গলা আরতি দিয়ে দিনের শুরু হয় এবং বাবা খাটু শ্যামের পূজা সহ দিনের শুরুর জন্য আশীর্বাদ চাওয়া হয়।
শৃঙ্গার আরতি (সকাল ০৭:০০ টা): মঙ্গলা আরতির পর এই আরতি হয়, বাবার শৃঙ্গারের পর। এতে বাবার প্রতিমাকে সুন্দর বস্ত্র ও আভরণে সজ্জিত করা হয়, এরপর পূজা করা হয়।
ভোগ আরতি (দুপুর ১২:৩০ টা): ভগবান শ্যামকে ভোজন নিবেদন করার পর এই আরতি হয়। ভোগ আরতিতে ভক্তগণ ভগবানকে প্রসাদ অর্পণ করেন এবং তাঁর কৃপা লাভ করেন।
সন্ধ্যা আরতি (সন্ধ্যা ০৭:৩০ টা): সূর্যাস্তের সময় এই আরতি হয়, দিনের সমাপ্তি ও রাতের শুরুর প্রতীক। এই সময় মন্দিরে ভক্তদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি এবং এই আরতি বিশেষ ভাবে ভক্তি ও উৎসাহে পরিপূর্ণ।
শয়ন আরতি (রাত ১০:০০ টা): দিনভরের পূজা-অর্চনার পর এই আরতি হয়, ভগবানকে বিশ্রামের জন্য উৎসর্গীকৃত। একে শয়ন আরতি বলা হয়, যেখানে বাবাকে বিশ্রামের জন্য বিদায় করা হয়।
মন্দিরের দ্বার খোলা ও বন্ধের সময়
খাটু শ্যাম মন্দিরের দ্বার প্রতিদিন সকাল ০৪:৩০ টায় খোলে। সকালের মঙ্গলা আরতির পর ভক্তরা দর্শনের জন্য মন্দিরে আসেন। সকালের এই সময় ভগবানের পূজার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। সকালের দ্বার বন্ধের সময় দুপুর ১২:৩০ টা, যখন মন্দিরের প্রধান দ্বার কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে।
সন্ধ্যায় মন্দির আবার ০৪:০০ টায় খোলে, যাতে ভক্তরা সন্ধ্যার সন্ধ্যা আরতি ও শয়ন আরতিতে যোগ দিতে পারেন। সন্ধ্যার দ্বার রাত ১০:০০ টায় বন্ধ করা হয়। এই সময় ভক্তরা মন্দির থেকে ফিরে যান এবং ভগবানকে বিশ্রামের জন্য বিদায় জানান। এই সময় মন্দিরে শান্তি ও পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়।
খাটু শ্যাম মন্দিরে দর্শনের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব
খাটু শ্যাম মন্দিরে দর্শন করার একটি আলাদা আধ্যাত্মিক গুরুত্ব আছে। এখানে আগত ভক্তদের বিশ্বাস, বাবা খাটু শ্যাম তাদের হারিয়ে যাওয়া মনোকামনা পূর্ণ করেন। যে ব্যক্তি সমর্পণ ও বিশ্বাস সহকারে এখানে পূজা করে, সে জীবনে সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য লাভ করে।
মন্দিরের বিশেষ পূজা পদ্ধতিতে ভক্তরা ভগবানের প্রতিমার সামনে দীপ জ্বালান, পুষ্প অর্পণ করেন এবং ভক্তিপূর্ণ ভজন-কীর্তন করেন। এখানকার আরতিতে যোগ দিয়ে ভক্তরা তাদের মনের শান্তি অনুভব করেন এবং আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেন।
ভক্তদের জন্য ভ্রমণ ও অন্যান্য সুবিধা
খাটু শ্যাম মন্দিরে যাওয়ার জন্য সড়কপথে শিকর শহর থেকে বিশেষ বাস পরিষেবা পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের জন্য আশপাশের এলাকায় থাকার জন্য আবাসন সুবিধাও পাওয়া যায়। মন্দির পরিষরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয় যাতে ভক্তরা সুখদ ও শান্তিপূর্ণ অভিজ্ঞতা পান।
খাটু শ্যাম মন্দির কেবল রাজস্থানের নয়, সমগ্র ভারতের একটি প্রধান ধর্মীয় স্থান, যেখানে বাবা খাটু শ্যামের পূজা-অর্চনা করলে ভক্তরা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভ করেন। প্রতিদিন পাঁচবার আরতি মন্দিরের পরিবেশকে ভক্তিময় ও দিব্য করে তোলে। সকাল ও সন্ধ্যার সময় মন্দিরের দ্বার খোলা ও বন্ধের সময়ের বিশেষ গুরুত্ব আছে, যা ভক্তদের পূজার জন্য উপযুক্ত সময় দেয়।