রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগকে প্রায়শই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এর ঝুঁকি অত্যন্ত কম।
ভারতে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ এখনও নিরাপদ এবং লাভজনক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবতা হল, অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে, ভারতে প্রায় ৯০ শতাংশ রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী এমন যারা অথবা তাদের বিনিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অথবা তাদের প্রত্যাশিত লাভ পাচ্ছেন না। এর প্রধান কারণ হল ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল সময়ে বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনাহীন আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
গত কয়েক বছরে নয়ডা, গুরুগ্রাম, মুম্বাই, পুনে ইত্যাদি নগর এলাকায় সম্পত্তির দাম দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এটি শোনতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হলেও, এই দামের সুবিধা কেবলমাত্র কিছু নির্বাচিত বিনিয়োগকারীই পেয়েছেন। বাকি বিনিয়োগকারীরা অথবা ফ্ল্যাটের EMI পরিশোধ করতে ব্যস্ত আছেন অথবা সেই সম্পত্তি বিক্রয় করার জন্য সংগ্রাম করছেন।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
গুরুগ্রামের রিয়েল এস্টেট পরামর্শদাতা ऐश्वर्या श्री कपूर-এর মতে, ভারতে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের আসল চিত্র অনেক আলাদা। তিনি একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণে বলেছেন যে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সম্পত্তি ক্রয়ের সিদ্ধান্তে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং সেজন্য ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাঁর মতে, মাত্র এক শতাংশ বিনিয়োগকারীই রিয়েল এস্টেট থেকে আসলে সম্পদ গড়ে তুলতে পারছেন।
সবচেয়ে সাধারণ ভুলগুলি কী কী?
বিনিয়োগকারীদের দ্বারা করা সাধারণ ভুলগুলির মধ্যে প্রধান হল
- ভুল সময়ে বিনিয়োগ: অনেকেই মার্কেটের বুম পিরিয়ডে বিনিয়োগ শুরু করেন, যখন দাম চরমে থাকে। এমন সময়ে সম্পত্তি ক্রয় করা বিনিয়োগ নয় বরং অধিক মূল্যে সম্পত্তি ক্রয় করে নিজেকে আর্থিক বোঝা তৈরি করা।
- গবেষণাহীন সিদ্ধান্ত: অনেক বিনিয়োগকারী একদিনে অনেক প্রকল্প দেখে সবচেয়ে কম দামে অথবা সবচেয়ে বেশি ছাড় পাওয়া প্রকল্পটি বেছে নেন। তারা প্রকল্পের অবস্থানের মূল্যায়ন করেন না, ডেভেলপারের বিশ্বাসযোগ্যতার মূল্যায়ন করেন না।
- আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত: অনেক সময় মানুষ কেবলমাত্র এই কারণে সম্পত্তি ক্রয় করেন কারণ এটি তাদের অফিসের কাছে অথবা সন্তানদের স্কুলের কাছে অথবা কোন আত্মীয় সেখানে থাকেন। এই ধরণের সিদ্ধান্ত প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদী রিটার্নের দিক থেকে ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়।
- তরলতাকে উপেক্ষা করা: রিয়েল এস্টেট একটি কম তরল সম্পদ। অর্থাৎ, যদি আপনার হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি অবিলম্বে সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবেন না। অনেক বিনিয়োগকারী এই বিষয়টিকে উপেক্ষা করে এবং আটকে যান।
প্রি-লঞ্চে বিনিয়োগ কেন লাভজনক?
যারা রিয়েল এস্টেট থেকে উন্নত রিটার্ন পাচ্ছেন, তারা সাধারণত প্রি-লঞ্চ স্টেজে বিনিয়োগ করেন। এই পর্যায়ে সম্পত্তির দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং পরে প্রকল্পের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে দামে স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়।
এই বিনিয়োগকারীরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির দিকে নজর দেন
- তারা ডেভেলপারের স্বচ্ছতা যাচাই করেন
- আইনি কাগজপত্র এবং অনুমোদনের অবস্থার মূল্যায়ন করেন
- প্রকল্পের অবস্থান এবং আশেপাশের অবকাঠামো সম্পর্কে গবেষণা করেন
- প্রবেশ এবং প্রস্থানের সময়সীমা নির্ধারণ করেন
- ব্রোকারের চাপে পড়ে নিজে সিদ্ধান্ত নেন
EMI-র বোঝা বনে যাওয়া সম্পত্তি
একটি বড় সমস্যা হল অনেকেই বাড়ি কেনাকে বিনিয়োগ মনে করেন, যখন আসলে এটি একটি খরচ, যতক্ষণ না সেই সম্পত্তি ভাড়া দিচ্ছে অথবা রিটার্ন আয় করছে। প্রতি মাসে ব্যাঙ্ককে প্রচুর পরিমাণ EMI পরিশোধ করা এবং তারপর সেই সম্পত্তি অনেক বছর ধরে ব্যবহার না করতে পারা একটি ক্ষতির চুক্তি প্রমাণিত হয়।
আপনার কি রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা উচিত?
রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা ভুল নয়, কিন্তু এর জন্য পরিকল্পনা, বোঝাপড়া এবং ধৈর্য্যের প্রয়োজন। যদি আপনি কেবলমাত্র এই কারণে ফ্ল্যাট কিনছেন কারণ সবাই করছে অথবা কোন ব্রোকার বলেছে, তাহলে এটি একটি দুর্বল কৌশল।
বিনিয়োগ করার আগে নিজেকে এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা জরুরি
- এই সম্পত্তি কি আমাকে নিয়মিত ভাড়া দিতে পারবে?
- এর মূল্য কি পরবর্তী ৩-৫ বছরে বাড়ার সম্ভাবনা আছে?
- এই প্রকল্পের ডেভেলপার কি বিশ্বাসযোগ্য?
- আমার কাছে কি বিকল্প বিনিয়োগের তুলনায় এটি উন্নত?
- এর জন্য কি আমাকে ঋণ নিতে হবে, এবং কি সেই ঋণ আমার আর্থিক অবস্থা নষ্ট করবে?
কৌশল ছাড়া বিনিয়োগ নয়
প্রতিটি বিনিয়োগের মতো রিয়েল এস্টেটেও কৌশলের প্রয়োজন। আপনি একটি SIP, FD অথবা স্টকসে ভাবনাচিন্তা ছাড়া টাকা লাগান না, তাহলে সম্পত্তির মতো বড় বিনিয়োগে পরিকল্পনা ছাড়া কেন?
একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী সেই ব্যক্তি যিনি
- সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেন
- অবস্থান এবং বাজারের চাহিদা বুঝেন
- ৩ থেকে ৫ বছরের পরিকল্পনা করেন
- নগদ প্রবাহ এবং রিটার্নের মূল্যায়ন করেন
- আবেগপ্রবণ নয়, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেন