শেয়ার বাজারকে প্রায়শই ঝুঁকির খেলা বলা হয়, কিন্তু সঠিক সময়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের ধনীও করে তুলতে পারে।
ভারতীয় শেয়ার বাজারে যেখানে প্রতিদিন শত শত শেয়ার ওঠানামা করে, সেখানে কিছু নির্বাচিত শেয়ার রয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের অসাধারণ রিটার্ন দিতে পারে। এগুলিকে সাধারণত মাল্টিব্যাগার শেয়ার বলা হয়। এমনই একটি কোম্পানি হল – সুব্রোস লিমিটেড। এই কোম্পানি অটোমোবাইল থার্মাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অগ্রণী প্রস্তুতকারক হিসেবে পরিচিত এবং সম্প্রতি এর শেয়ারে যে দারুণ ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, তা বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়েছে।
২০ শতাংশের ঊর্ধ্বগতিতে রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে শেয়ার
১৬ জুন শেয়ার বাজারে অন্যান্য কোম্পানির মিশ্র প্রদর্শন দেখা গেলেও, সুব্রোসের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বড় উপহার দিয়েছে। একদিনেই এর ২০ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি ধরা পড়েছে এবং এটি ৯৯৯.২৫ টাকার স্তরে পৌঁছেছে, যা এখন পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ দাম। এই ঊর্ধ্বগতি বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এর চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক সপ্তাহে ৩১ শতাংশ রিটার্ন
এটি শুধুমাত্র একদিনের ঘটনা নয়, বরং গত এক সপ্তাহে এই শেয়ার প্রায় ৩১ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দেখিয়েছে। অন্যদিকে, এক মাসের পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই শেয়ার প্রায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এটি স্পষ্ট করে যে এই শেয়ার কেবলমাত্র স্বল্পকালীন নয়, বরং মধ্যমকালীন সময়েও চমৎকার রিটার্ন দিতে সক্ষম হয়েছে।
তিন মাসে ৮১ শতাংশের লাফ
গত তিন মাসের কথা বললে, এই মাল্টিব্যাগার শেয়ার প্রায় ৮১ শতাংশ ঊর্ধ্বগতিতে বিনিয়োগকারীদের চমকে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই সময়কালে যখন অনেক বড় বড় কোম্পানির শেয়ার স্থিরতা বা অবনতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন সুব্রোস বিনিয়োগকারীদের প্রচুর লাভ অর্জনের সুযোগ দিয়েছে।
কোম্পানির পটভূমি এবং পরিচয়
সুব্রোস লিমিটেড ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি একটি যৌথ উদ্যোগ যেখানে ডেনসো কর্পোরেশন (জাপান), সুজুকি মোটর কর্পোরেশন (জাপান) এবং সুব্রো লিমিটেড (ভারত) অংশীদার। কোম্পানির প্রধান ব্যবসা হল অটোমোবাইল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, হিটার, কন্ডেন্সার, কম্প্রেসার, রেডিয়েটর এবং অন্যান্য থার্মাল প্রোডাক্টস তৈরি করা।
সুব্রোস ভারতে থার্মাল সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত এবং দেশের অনেক বড় অটোমোবাইল কোম্পানি যেমন মারুতি সুজুকি, টাটা মোটরস, মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা ইত্যাদিকে এগুলি সরবরাহ করে।
ডিভিডেন্ড বিতরণেও অগ্রণী
কেবলমাত্র শেয়ারের দাম নয়, বরং ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রেও সুব্রোস বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেনি। কোম্পানি গত বছরগুলিতে ক্রমাগত লাভানশ দিয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এর প্রতি আস্থা আরও দৃঢ় হয়েছে।
- ২০২৪ সালে কোম্পানি প্রতি শেয়ার ১.৮০ টাকা ডিভিডেন্ড দিয়েছে
- ২০২৩ সালে এক টাকা প্রতি শেয়ার ডিভিডেন্ড
- ২০২২ এবং ২০২১ সালে যথাক্রমে ৭০ পয়সা প্রতি শেয়ার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছিল
এই নিয়মিত ডিভিডেন্ড নীতি এটিকে সেইসব কোম্পানির তালিকায় নিয়ে এসেছে যা বিনিয়োগকারীদের কেবলমাত্র মূলধন বৃদ্ধি নয়, বরং নিয়মিত আয়ও প্রদান করে।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনার খনি
যদি কোনও বিনিয়োগকারী গত পাঁচ বছর ধরে এই শেয়ার ধরে রেখে থাকে, তাহলে তিনি প্রায় ৪৯৮ শতাংশের চমৎকার রিটার্ন পেয়েছেন। অন্যদিকে, দশ বছরের সময়কালে এই শেয়ার প্রায় ১৮১৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ১৮ গুণ। এই ধরনের পরিসংখ্যান কোনও শেয়ারকে মাল্টিব্যাগারের শ্রেণীতে নিয়ে আসে।
এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র বাজারের অনুমানের উপর নির্ভর করে নয়, বরং কোম্পানির শক্তিশালী আর্থিক কর্মক্ষমতা, নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব এবং পণ্যের গুণমান এটিকে বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ করে তুলেছে।
৫২ সপ্তাহের উচ্চ এবং নিম্ন স্তর
যদি গত এক বছরের তুলনা করা হয়, তাহলে কোম্পানির ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তর ৯৯৭.২৫ টাকা ছিল, যখন সর্বনিম্ন স্তর ৫০১.৫৫ টাকায় দেখা গেছে। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রায় ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দেখায় যে কোম্পানির পারফরম্যান্স ক্রমাগত ইতিবাচক দিকে ছিল এবং এটি বিনিয়োগকারীদের স্থির এবং লাভজনক রিটার্ন দিতে সক্ষম হয়েছে।
বাজারে বর্ধমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
অটোমোবাইল সেক্টরে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং সবুজ প্রযুক্তির বর্ধমান প্রভাবের সাথে সাথে থার্মাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, সুব্রোসের মতো থার্মাল ম্যানেজমেন্ট পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানির চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুব্রোস ইতিমধ্যেই এই দিকে গবেষণা এবং উন্নয়নে জোর দিচ্ছে, যার ফলে এটি কেবলমাত্র ভারতে নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। কোম্পানির ফোকাস নতুন প্রযুক্তিগত সমাধান, ব্যয় কমানো এবং কাস্টমাইজেশনের উপর, যাতে এটি তার গ্রাহকদের আরও ভালো সেবা দিতে পারে।
