ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা: দক্ষিণ আফ্রিকার উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা

ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা: দক্ষিণ আফ্রিকার উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা
সর্বশেষ আপডেট: 16-05-2025

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে এ পর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গোরাদের উপর ‘গণহত্যা’ (genocide) চলছে এবং এই গুরুতর মানবাধিকার সংকট বিশ্বের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে।

জোহানেসবার্গ: আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা আবারো বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়েছেন এবং কেবলমাত্র G20-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব মঞ্চ থেকে দূরত্ব বজায় রাখেননি, বরং বহু আর্থিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছেন। ট্রাম্পের এই ক্রোধ হঠাৎ করেই জেগে ওঠেনি, এর পিছনে রয়েছে জাতিগত হিংসা, ইসরাইল-বিরোধী মনোভাব, হামাসের সাথে তথাকথিত সম্পর্ক এবং ইরানের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘনিষ্ঠতা—এই জটিল জাল।

গোরাদের উপর ট্রাম্পের তীব্র আক্রমণ

ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার উপর সবচেয়ে বড় অভিযোগ এটাই করেছেন যে সেখানে গোরা কৃষকদের জাতিগত ভিত্তিতে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। ট্রাম্পের মতে, কৃষ্ণাঙ্গ-বহুল সরকার সাদা কৃষকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ‘গণহত্যা’ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে সাধারণ অপরাধ বলে দাবি করেছে, তবুও ট্রাম্পের বক্তব্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের রূপে উপস্থাপন করে ৫০ জনের বেশি গোরা দক্ষিণ আফ্রিকানকে আমেরিকায় আশ্রয় দিয়েছে। এই পদক্ষেপকে আমেরিকার দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে পরিবর্তিত নীতির প্রতীক হিসাবে দেখা হচ্ছে।

ইসরাইল-বিরোধী মনোভাবের জন্য ট্রাম্পের রোষ

২০২৪ সালের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনি গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এতে ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ আমেরিকা এবং ইসরাইল উভয়ের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘শত্রুতাপূর্ণ নীতি’র পরিচায়ক। ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার এই কর্মকাণ্ডকে হামাসের পক্ষে দাঁড়ানোর সাথে তুলনা করেছেন।

নিষেধাজ্ঞার ঝড়: আর্থিক সহায়তা ও কৌশলগত সহযোগিতা বন্ধ

৭ ফেব্রুয়ারী ট্রাম্প কর্তৃক জারি করা এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আমেরিকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেওয়া সমস্ত আর্থিক সহায়তা এবং কৌশলগত সহযোগিতা অবিলম্বে স্থগিত করেছে। এর অধীনে আমেরিকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে সামরিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং এমনকি বাণিজ্য চুক্তিতেও বাধা দিয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য, যতক্ষণ না দক্ষিণ আফ্রিকা তার বিদেশ নীতির দিক পরিবর্তন করে, ততক্ষণ আমেরিকার কোনো সহযোগিতা পাবে না।

ইরানের সাথে সম্পর্ক: আরও একটি বিতর্কের কারণ

কেবলমাত্র ইসরাইল নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ইরানের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কও ট্রাম্পকে বিরক্ত করছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সম্প্রতি ইরানকে পারমাণবিক শক্তি রিঅ্যাক্টর প্রকল্পে জড়িত করার অনুমতি দিয়েছে। যদিও এটি শক্তি চাহিদা পূরণের দিকে নেওয়া পদক্ষেপ ছিল, তবুও ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার মতো বলে অভিহিত করেছে।

G20 থেকে দূরত্ব: বিশ্ব মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা একাকী

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো G20-এর সভাপতিত্ব করছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই বছরের সমস্ত G20 কর্মসূচির বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফেব্রুয়ারী মাসে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত G20 বৈঠকে অংশগ্রহণ করেননি। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার সেসব বিশ্বব্যাপী বিষয়ের ক্ষতি হয়েছে যা সে G20 মঞ্চে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিল—যেমন জলবায়ু ন্যায়, বিশ্বের দক্ষিণ অংশের সবলীকরণ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্কার।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিক্রিয়াশীল কৌশল

দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামফোসা এই সংকটকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের দিকে পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে তিনি ট্রাম্পের সাথে হোয়াইট হাউসে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করবেন এবং তাঁর সামনে বাস্তব অবস্থা তুলে ধরবেন। রামফোসার ধারণা, ট্রাম্পকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেই ভুল ধারণা দূর করতে চান।

Leave a comment