পুণের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১১.৫ লক্ষ টাকা অনলাইন টাস্কের প্রলোভনে ঠকিয়ে নিয়েছে ঠগরা। বেশি টাকা উপার্জনের লোভ দেখিয়ে তাঁদের ঠকিয়েছে ঠগরা। সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ঠকানোর সতর্কতা: ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে অনলাইন পেমেন্ট, ব্যবসা এবং ঘরে বসে কাজের সুযোগ বেড়েছে, ঠিক তেমনি ইন্টারনেটে জাল বিছিয়ে সাইবার ঠগেরাও দ্রুত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি পুণে থেকে এমন এক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে এক বেওপারী গাড়ি ব্যবসায়ীকে "অনলাইন টাস্ক" -এর নামে ১১.৫ লক্ষ টাকার বড় ঠকানোর শিকার করা হয়েছে।
এই ঘটনা কেবলমাত্র একটি বড় আর্থিক প্রতারণাকে উন্মোচন করে না, এটা এটাও দেখায় যে কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপ এবং টাস্ক-ভিত্তিক স্কিমের মাধ্যমে লোকেদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।
ঠকানোর শুরু: ছোট ছোট টাস্ক, দ্রুত লাভ
শুক্রবার পেঠ এলাকায় থাকা এক ব্যবসায়ীর WhatsApp এ একটি বার্তা আসে যেখানে লেখা ছিল, '১৫০ টাকার টাস্ক, এখনই সম্পূর্ণ করুন এবং অবিলম্বে পেমেন্ট পান।' উৎসুক হয়ে তিনি টাস্কটি সম্পূর্ণ করেন এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১৫০ টাকা তার অ্যাকাউন্টে চলে আসে। এখান থেকেই তার বিশ্বাস অর্জনের খেলা শুরু হয়।
তারপর তাকে একটি প্রাইভেট মেসেজিং গ্রুপে যুক্ত করা হয়, যেখানে তাকে প্রতিদিন ছোট ছোট অনলাইন টাস্ক (যেমন কোন অ্যাপ ইন্সটল করা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি) দেওয়া হয় এবং প্রতিটি টাস্কের বিনিময়ে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা অবিলম্বে দেওয়া হয়।
বড় ধাক্কা: 'মার্চেন্ট টাস্ক'-এর প্রলোভন
কয়েকদিন পরে গ্রুপ অ্যাডমিন ব্যবসায়ীকে 'মার্চেন্ট টাস্ক'-এর অফার দেয় যেখানে বলা হয় যদি তিনি কিছু টাকা বিনিয়োগ করেন তাহলে দ্বিগুণ টাকা পাবেন। এই টাকা ১০,০০০ থেকে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
ব্যবসায়ী বিশ্বাস করে একের পর এক ১১.৫ লক্ষ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন। প্রতিবার তাকে বলা হয় পরের টাস্কের পর তার সমস্ত আয় তাকে দেওয়া হবে।
কিন্তু যখন তিনি তার আয় ফেরত চাইতে শুরু করেন, তখন বাহানা শুরু হয় — 'সার্ভার ডাউন আছে', 'শেষ টাস্ক বাকি আছে', 'আরও কিছু বিনিয়োগ করুন' এই ধরনের কথা বলে তাকে টালানো হয়।
যখন চোখ খুললো, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল
দুই দিন পরে যখন কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি এবং টাস্ক গ্রুপও ডিলিট হয়ে গেছে, তখন গিয়ে ব্যবসায়ী বুঝতে পারেন যে তিনি ঠকানোর শিকার হয়েছেন। তিনি অবিলম্বে সাইবার পুলিশে শিকায়ত দায়ের করেন।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে পায় যে ঠগরা গোপন আইডি ব্যবহার করে সিম কার্ড নিয়ে ফিনটেক অ্যাপ এবং ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করে পয়সা গ্রহণ করেছে। ট্রানজেকশনগুলি এত দ্রুত এবং চালাকিপূর্ণভাবে করা হয়েছিল যে টাকা খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
কিভাবে এই ঠকানোর কাজটা টেকনিক্যালি হয়?
১. ফিশিং টেক্সট
ব্যবহারকারীদের কাছে প্রলোভনমূলক অফার পাঠানো হয় যেমন '২০০ টাকা আজই উপার্জন করুন!' যেখানে লুকিয়ে থাকে মিথ্যা লিঙ্ক।
২. মিথ্যা ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ
ঠগরা নিজেদের মিথ্যা টাস্ক ওয়েবসাইট তৈরি করে যা আসলের মতো দেখায়।
৩. Telegram/WhatsApp গ্রুপ ব্যবহার
এই প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমেই টাস্ক, পেমেন্ট স্ক্রিনশট এবং "ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া" শেয়ার করা হয় যাতে পরিবেশ বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
৪. মিথ্যা পেমেন্ট স্ক্রিনশট
বিশ্বাস অর্জন করার জন্য মিথ্যা পেমেন্ট স্ক্রিনশট এবং ভিডিও শেয়ার করা হয়।
৫. অনেক ব্যাংক এবং ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার
যাতে টাকা ট্র্যাক করা যায় না, ঠগরা অনেক মিথ্যা KYC-ওয়ালা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঠকানো সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি ক্লাসিক উদাহরণ — যেখানে মানুষের ভাবনা এবং লোভের সাথে খেলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঠকানো হয়।
RBI এবং CERT-In (ভারতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম) এর আগেও এই ধরনের স্কিম নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
এই ধরনের ঠকানো থেকে বাঁচার জন্য এই সাবধানতাগুলি মনে রাখুন
১. URL চেক করুন
যে ওয়েবসাইটে টাস্ক করছেন, তার URL এবং SSL সার্টিফিকেট পরীক্ষা করুন (https:// দিয়ে শুরু হচ্ছে কিনা)।
২. কেবলমাত্র অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করুন
কখনোই APK ফাইল বা থার্ড পার্টি অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না। কেবলমাত্র Google Play Store বা App Store থেকেই অ্যাপ ইন্সটল করুন।
৩. পেমেন্ট অ্যাপে লিমিট সেট করুন
PhonePe, Google Pay বা Paytm এ ট্রানজেকশন লিমিট সক্রিয় করুন যাতে পাসওয়ার্ড ছাড়া অনেক টাকা ট্রান্সফার করা যায় না।
৪. দুই-স্তরীয় সুরক্ষা ব্যবহার করুন
আপনার সমস্ত অনলাইন অ্যাকাউন্টে 2FA (Two Factor Authentication) অবশ্যই চালু রাখুন।
৫. সন্দেহজনক গ্রুপ এবং নম্বর রিপোর্ট করুন
WhatsApp, Telegram এবং SMS সার্ভিসে আসা এ ধরনের গ্রুপগুলি অবিলম্বে রিপোর্ট করুন।
৬. সাইবার ক্রাইম পোর্টাল ব্যবহার করুন
এই ধরনের ঠকানোর তথ্য https://cybercrime.gov.in এ বা হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০ তে জানান।