এনটিপি ২০২৫: ভারতের ডিজিটাল যাত্রার নতুন অধ্যায়

এনটিপি ২০২৫: ভারতের ডিজিটাল যাত্রার নতুন অধ্যায়
সর্বশেষ আপডেট: 19-05-2025

ভারতের ডিজিটাল যাত্রাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে এবার বড় উদ্যোগ নিতে চলেছে সরকার। কেন্দ্র সরকার শীঘ্রই নতুন জাতীয় দূরসংযোগ নীতি (National Telecom Policy - NTP 2025) আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার লক্ষ্য দেশের প্রতিটি নাগরিককে দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং স্মার্ট ডিজিটাল সংযোগ প্রদান করা। এই নীতি শুধুমাত্র নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উপর জোর দেবে না, বরং দেশে কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করবে।

শীঘ্রই আসছে NTP 2025, ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার হবে আরও শক্তিশালী

নতুন টেলিযোগাযোগ নীতি 2025 (NTP 2025) শীঘ্রই প্রকাশিত হতে চলেছে। টেলিযোগাযোগ বিভাগ (DoT) এ বিষয়ে দ্রুত কাজ করছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি কার্যকর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নীতির প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতের প্রতিটি এলাকায় দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এর অধীনে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ব্রডব্যান্ড এবং স্যাটেলাইট সংযোগকে আরও শক্তিশালী করা হবে। পাশাপাশি, ৬জি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), সাইবার সিকিউরিটি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগুলিকেও উৎসাহিত করা হবে। এর ফলে ডিজিটাল জগতে ভারতের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

NTP 2025-এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ করা। এই নীতির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিক, শহর বা গ্রামের বাসিন্দা, উন্নত ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ডিজিটাল সেবা আরও সহজ এবং নিরাপদ হবে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে। সরকারের এই পরিকল্পনা ভারতকে ডিজিটাল জগতে শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভরশীল করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগে উৎসাহ

সরকারের দাবি, নতুন টেলিযোগাযোগ নীতির অধীনে আগামী ৫ বছরে প্রায় ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। এর সাথে প্রতি বছর প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগেরও সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে। এই বিনিয়োগ মূলত টেলিযোগাযোগ ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ডাটা সেন্টার, ক্লাউড পরিষেবা এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের উপর কেন্দ্রীভূত হবে।

নতুন নীতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) কে ভারতের জিডিপিতে বৃহৎ অংশীদারিত্ব প্রদান করার লক্ষ্য নিয়েছে। বর্তমানে ICT-এর অবদান প্রায় ৭.৮%, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১১% পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

৪জি এবং ৫জি সংযোগে বৃদ্ধি

নতুন টেলিযোগাযোগ নীতির অধীনে দেশের প্রতিটি এলাকায় ৪জি নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়া হল সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। আজ পর্যন্ত ৪জি পরিষেবা অধিকাংশ স্থানে উপলব্ধ হয়েছে, তবে এখন সরকার এটিকে আরও শক্তিশালী করার উপর কাজ করছে। পাশাপাশি, ৫জি নেটওয়ার্ককেও দ্রুত বৃদ্ধি করা হবে যাতে দেশের ৯০% জনসংখ্যার কাছে এই পরিষেবা পৌঁছাতে পারে।

বর্তমানে ভারতের প্রায় ৯৩% জেলায় ৫জি সংযোগ উপলব্ধ এবং টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলি তাদের নেটওয়ার্ক উন্নত করার জন্য কাজ করছে। নতুন নীতি ৫জি সম্প্রসারণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ৬জি-এর মতো নতুন প্রযুক্তির জন্যও শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে, যার ফলে ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের গতি এবং গুণমান উভয়ই উন্নত হবে।

গ্রামে গ্রামে পৌঁছাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট

নতুন টেলিযোগাযোগ নীতি NTP 2025-এর অধীনে প্রতিটি গ্রাম এবং সরকারি কার্যালয়ে দ্রুত অপটিক্যাল ফাইবার ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার বৃহৎ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। ভারতনেট পরিকল্পনার অধীনে BSNL ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সকল গ্রামকে অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে সংযুক্ত করবে, যার ফলে গ্রামীণ এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেটের সুবিধা পাওয়া যাবে।

পাশাপাশি, এই নীতিতে প্রতিটি জেলা এবং ব্লক পর্যায়ে ওয়াই-ফাই হটস্পট স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ ডিজিটাল সেবার সুবিধা আরও ভালোভাবে নিতে পারবে। এই পদক্ষেপের ফলে দেশের দূরবর্তী এলাকায়ও অনলাইন শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ব্যবসার মতো সেবা সহজলভ্য হবে।

স্যাটেলাইট সংযোগে বৃহৎ উৎসাহ

নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিতে স্যাটেলাইট সংযোগকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য দেশের দূরবর্তী এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া, যেখানে ঐতিহ্যগত নেটওয়ার্ক সুবিধা দুর্বল। এই দিকে বৃহৎ কোম্পানি যেমন Jio, Airtel, Starlink এবং Amazon Kuiper ইতোমধ্যেই তাদের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রোজেক্টের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সরকার শীঘ্রই এই কোম্পানিগুলিকে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া শুরু করবে। বর্তমানে, কোম্পানিগুলিকে পরীক্ষার জন্য এয়ারওয়েভ প্রদানের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে ভারত মহাকাশ ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় ধাপ এগিয়ে যাবে এবং দেশের দূরবর্তী এলাকায় ডিজিটাল সংযোগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

প্রযুক্তির উদয়মান ক্ষেত্রে বিশেষ ফোকাস

নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিতে শুধুমাত্র সংযোগ নয়, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে:

  1. ৬জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি: নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিতে ৬জি নেটওয়ার্কের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে। এটি ভবিষ্যতের মোবাইল প্রযুক্তি, যা এখনও উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। সরকার এই ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে যাতে ভারত দ্রুত ৬জি প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে এবং ব্যবহারকারীদের আরও দ্রুত ইন্টারনেট গতি পাওয়া যায়।
  2. AI এবং মেশিন লার্নিং (ML): AI এবং ML-এর ব্যবহার সরকারি সেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে কাজ করার পদ্ধতিতে উন্নতি হবে এবং মানুষ উন্নত সেবা পেতে পারবে। নীতিতে এই প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
  3. সাইবার সিকিউরিটি: ডিজিটাল জগতে নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন নীতিতে সাইবার সিকিউরিটিকে শক্তিশালী করার উপর ফোকাস থাকবে যাতে ইন্টারনেট এবং ডাটাকে সুরক্ষিত রাখা যায়। এর জন্য কঠোর নিয়ম এবং উন্নত প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা করা হবে যাতে যে কোনও ধরণের সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করা যায়।
  4. কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ভবিষ্যতের একটি নতুন প্রযুক্তি, যা অত্যন্ত দ্রুত গণনা করতে পারে। এ বিষয়েও নীতিতে গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করা হবে যাতে ভারত এই ক্ষেত্রেও শক্তিশালী হতে পারে এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে পারে।

ডেভেলপার এবং ইন্ডাস্ট্রিকেও সমর্থন

সরকার নতুন টেলিযোগাযোগ নীতির মাধ্যমে শুধুমাত্র বৃহৎ কোম্পানিগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং ছোট ছোট স্টার্টআপ এবং অ্যাপ ডেভেলপারদেরও এর অংশীদার করতে চায়। এর জন্য NTP 2025-এ বিশেষ AI টুলস এবং API অ্যাক্সেসের সুবিধা দেওয়া হবে, যার ফলে ছোট ছোট উদ্ভাবকরাও তাদের ডিজিটাল পণ্য এবং অ্যাপে স্মার্ট বৈশিষ্ট্য যোগ করতে পারবে।

এই পদক্ষেপের ফলে দেশে স্মার্ট অ্যাপ এবং ডিজিটাল সেবার নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। এর ফলে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীরা উন্নত অভিজ্ঞতা পাবে না, বরং ডিজিটাল জগতে সবার জন্য সমান সুযোগও বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি শক্তিশালী হবে।

সরকারের নতুন টেলিযোগাযোগ নীতি NTP 2025 ডিজিটাল ইন্ডিয়াকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এর ফলে দেশের সংযোগ উন্নত হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক উন্নয়ন শক্তিশালী হবে। এই নীতির অধীনে শুধুমাত্র শহর নয়, গ্রামও উচ্চগতির ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড এবং স্মার্ট ডিজিটাল সেবায় সংযুক্ত হবে। আগামী বছরগুলিতে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাত বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং দেশের অর্থনীতিতেও নতুন গতি আসবে।

Leave a comment