আজকাল প্রায় সকলেই কোনও না কোনও ধরণের এনার্জি ড্রিঙ্ক, কফি অথবা অন্যান্য উদ্দীপকের সাহায্যে দিনের শুরু করেন, কিন্তু কিছু টেক লিডার আছেন যারা কোনও বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই দিনের শুরু করেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন ফেসবুক এবং মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ, যাঁর সকালের রুটিন সম্প্রতি শিরোনাম দখল করেছে।
এই রুটিনকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘Rawdog Routine’ নামে পরিচিত করা হচ্ছে, যেখানে জুকারবার্গ কোনও ধরণের উদ্দীপক যেমন কফি অথবা এনার্জি ড্রিঙ্ক ছাড়াই দিনের শুরু করেন। এই রুটিন কেবল তাঁর কার্যশৈলীর অংশ নয়, বরং এটি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার তাঁর অভ্যাসও। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বের শীর্ষ টেক লিডারদের সকালের রুটিন সম্পর্কে।
‘Rawdog Routine’ - উদ্দীপক ছাড়াই দিনের শুরু
মার্ক জুকারবার্গ বিশ্বাস করেন যে, যদি আপনি সকালে কোনও বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই নিজেকে সক্রিয় করতে পারেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক এবং শরীর উভয়ই আরও শক্তিশালী হয়। জুকারবার্গ বলেন যে তাঁকে কখনোই সকালে কফির প্রয়োজন হয় না। হ্যাঁ, ছুটির দিনে মাঝেমধ্যে মজার জন্য তিনি কফি পান করেন, কিন্তু কাজের দিনগুলিতে তিনি কখনোই এটি সেবন করেন না। তাঁর মতে, সকালে কোনও বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই শক্তি পাওয়ার ফলে তাঁর শরীর এবং মস্তিষ্কে বেশি স্থিরতা এবং স্পষ্টতা আসে।
জুকারবার্গের সকালের ৫টি বিশেষ দিক
- ক্যাফিন থেকে দূরে - জুকারবার্গ বিশ্বাস করেন যে, ক্যাফিন এড়িয়ে চলায় তাঁর মস্তিষ্ক শান্ত এবং স্পষ্ট থাকে, যা দিনভর সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
- ব্রাজিলিয়ান জিউ-জিৎসু এবং MMA ট্রেনিং - জুকারবার্গ তাঁর সকালের প্রায় দুই ঘন্টা ব্রাজিলিয়ান জিউ-জিৎসু এবং মিশ্র মার্শাল আর্টস (MMA) প্রশিক্ষণে ব্যয় করেন। এটি কোনও হালকা-ফুফকা ওয়ার্কআউট নয়, বরং এটি একটি জোরালো ব্যায়াম। মার্শাল আর্টসে মনোযোগ ঘোলা হারের কারণ হতে পারে, এবং এটাই কারণ যে এই রুটিন তাঁকে পুরোপুরি ফোকাস করতে সাহায্য করে।
- একই ধরণের পোশাক পরা - জুকারবার্গ সবসময় একই ধরণের পোশাক পরেন, যেমন ধূসর টি-শার্ট এবং জিন্স। এর কারণ হল, এতে তাঁকে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে হয় না এবং তিনি বড় বিষয়গুলিতে ফোকাস করতে পারেন।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার - ব্যায়ামের পরে, জুকারবার্গ শরীরকে পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান এবং দিনভরের শক্তির জন্য প্রচুর ক্যালোরিও গ্রহণ করেন।
- নেশা থেকে দূরত্ব - জুকারবার্গ বিশ্বাস করেন যে, মস্তিষ্ক ও শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য উদ্দীপক বা নেশা থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত, এবং এই অভ্যাস তিনি শৈশবেই শিখেছিলেন।
অন্যান্য টেক লিডারদের সকালের রুটিন
মার্ক জুকারবার্গের পদ্ধতি তাঁর নিজস্ব, কারণ তিনি কোনও বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই দিনের শুরু করেন। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য টেক লিডারদের সকালের রুটিনও বিশেষ:
- এলন মাস্ক - টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও এলন মাস্ক দীর্ঘ সময় কাজ করার অভ্যাস আছে। তিনি দিনভর প্রচুর পরিমাণে কফি পান করেন এবং মাঝেমধ্যে তাঁর শিফটে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। মাস্ক বিশ্বাস করেন যে ক্যাফিন তাঁর মনোযোগ ধরে রাখে এবং তাঁর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- জ্যাক ডর্সি - টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডর্সি তাঁর সকালের শুরু করেন উপোস, ধ্যান এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নানের মতো শারীরিক ও মানসিক অনুশাসন দিয়ে। তাঁর মতে, এটি দিনের শুরুটিকে সুষম এবং শান্তিময় করে তোলে।
- জেফ বেজোস - আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস দিনের শুরু করেন আরাম করে। তিনি ভালো ঘুম পছন্দ করেন এবং তারপর পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে দিনের শুরু করেন। তাঁর মতে, ভালো ঘুম এবং আরাম দিনের শুরু মানসিকভাবে উৎপাদনশীল রাখে।
- টিম কুক - অ্যাপলের সিইও টিম কুক সকালে তাড়াতাড়ি উঠে নিয়মিত ওয়ার্কআউট করেন। তাঁর মতে, এটি তাঁকে দিনভর উজ্জীবিত রাখে এবং কাজের জন্য প্রস্তুত করে।
এই সকলের সকালের দৈনন্দিন কাজগুলি প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির দিনের শুরু করার পদ্ধতি আলাদা, এবং এটিই তাদের কার্যশৈলী এবং মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। মার্ক জুকারবার্গের ‘Rawdog Routine’ তাঁর দৃঢ়তা এবং মানসিক স্পষ্টতা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে অন্যান্য টেক লিডারদের পদ্ধতিও তাদের উচ্চ কার্য সম্পাদন এবং সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে, এই সকল লিডার এক ব্যাপারে একমত - একটি সুস্থ শুরু তাদের পুরো দিনটিকে ইতিবাচক এবং উৎপাদনশীল করে তোলে।