২০২৫ সালের ৩১শে মার্চে শেষ হওয়া অর্থবর্ষে অ্যাপল ইন্ডিয়া তাদের ভারতীয় সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে আইফোন উৎপাদনে ৬০% এর চমৎকার বৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই সময়কালে কোম্পানির রপ্তানিতেও অভূতপূর্ব বৃদ্ধি দেখা গেছে। এখন অ্যাপল চীনের পরিবর্তে ভারতকে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য।
ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, অ্যাপল ইন্ডিয়া ২০২৪-২৫ সালে ভারত থেকে মোট ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার আইফোন রপ্তানি করেছে। এই উৎপাদনের প্রায় ৭০% অংশ তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ফক্সকন-এর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, এবং বাকি ৩০% রপ্তানি অন্যান্য উৎপাদনকারীদের দ্বারা করা হয়েছে, যার মধ্যে টাটা গ্রুপের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
ভারতে আইফোন উৎপাদনে বৃদ্ধি
ভারতে অ্যাপলের উৎপাদন ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর প্রধান কারণ হলো আমেরিকা-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ। যখন থেকে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা বেড়েছে, অ্যাপল তাদের উৎপাদন চীন থেকে বাইরে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতে তৈরি স্মার্টফোনে আমেরিকার শুল্ক অনেক কম, যা অ্যাপলকে এখানে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আরও উৎসাহিত করে।
ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন (ICEA)-এর মতে, ২০২৪-২৫ সালের প্রথম ১১ মাসে ভারতের স্মার্টফোন রপ্তানি ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪% বেশি। এই বৃদ্ধি অ্যাপলকে ভারতে তাদের উৎপাদন কার্যকলাপ আরও শক্তিশালী করার সুযোগ দিয়েছে।
আইফোন উৎপাদনে বড় পরিবর্তন
অ্যাপলের আইফোন উৎপাদন মূলত তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ফক্সকন-এর কারখানাগুলি থেকে হচ্ছে। ফক্সকন-এর সাথে অ্যাপলের অংশীদারিত্ব গত অর্থবর্ষে ৪০% এর বেশি বৃদ্ধি অর্জন করেছে। ফক্সকন কর্তৃক করা রপ্তানির মোট অংশ প্রায় ৭০%, যা বিদেশী চালানের প্রায় অর্ধেক। ফক্সকন তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে অ্যাপলের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করেছে।
টাটা গ্রুপের নতুন শক্তি
টাটা গ্রুপ ভারতে আইফোন উৎপাদন নিয়ে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে। টাটা ইলেকট্রনিক্স কর্ণাটকে উইস্ট্রনের স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা অধিগ্রহণ করেছে, এবং এখন তারা ভারতে অ্যাপলের প্রধান উৎপাদনকারী হিসেবে উঠে এসেছে। টাটা ইলেকট্রনিক্সের অবদান আইফোনের মোট রপ্তানিতে প্রায় ২২%। এছাড়াও, কোম্পানি জানুয়ারী মাসে পেগাট্রনে ৬০% শেয়ার কিনে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে।
পেগাট্রন, যা আগে তাইওয়ানের কোম্পানি ছিল, এখন টাটা ইলেকট্রনিক্সের সাথে মিলে ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদন করছে। এই অংশীদারিত্ব ভারতকে অ্যাপলের সবচেয়ে বড় উৎপাদন কেন্দ্রগুলির একটি করে তুলেছে, এবং এটি ভবিষ্যতে ভারতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতাকে বিশ্বব্যাপী আরও শক্তিশালী করবে।
স্মার্টফোন রপ্তানিতে অনুমানের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি
ভারত থেকে স্মার্টফোন রপ্তানিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট Samsung-এরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। Samsung ২০২৪-২৫ সালে প্রায় ২০% স্মার্টফোন রপ্তানি করেছে, যা ভারতকে একটি প্রধান ইলেকট্রনিক্স রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। এই পুরো বছরের তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে ভারতের স্মার্টফোন রপ্তানি অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। আগে অনুমান করা হয়েছিল যে ২০২৪-২৫ সালে স্মার্টফোন রপ্তানি ২০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, কিন্তু ১১ মাসেই এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
ভারতে আইফোন উৎপাদনের ভবিষ্যৎ
ভারতে অ্যাপলের বর্ধিত উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যকলাপ স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে যে আগামী দিনগুলিতে অ্যাপল এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ভারতকে তাদের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে দেখতে পারে। এছাড়াও, উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা (PLI) পরিকল্পনা সহ সরকারের উদ্যোগ এই ক্ষেত্রে আরও দ্রুত বিকাশে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছে।
অ্যাপলের ভারতে উৎপাদন বৃদ্ধি শুধুমাত্র ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় সুযোগ নয়, এটি দেশকে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দানের দিকেও একটি পদক্ষেপ। যেমন অ্যাপল তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল ভারতে আরও সম্প্রসারণ করবে, তার ইতিবাচক প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতিতে দেখা যাবে, যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং সমৃদ্ধিতেও বৃদ্ধি হবে।
ভারতে অ্যাপলের উৎপাদন এবং রপ্তানিতে যে অসাধারণ বৃদ্ধি হয়েছে, তা এই কথার প্রমাণ যে দেশটি এখন বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে। ফক্সকন, টাটা গ্রুপ এবং Samsung-এর মতো প্রধান খেলোয়াড়রা এই প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের স্মার্টফোন রপ্তানিতে যে বৃদ্ধি দেখা গেছে, তা কেবল দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে শক্তিশালী করবে না, বরং ভারতকে একটি প্রধান বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।