ভারতীয় বিমানবাহিনীর বীর পরীক্ষামূলক পাইলট শুভান্শু শুক্লা, যিনি শীঘ্রই মহাকাশে ঐতিহাসিক উড়ান ভরার পথে। একটি ভিডিও বার্তায় শুক্লা তার এই অভূতপূর্ব মিশনের আগে দেশবাসীকে সম্বোধন করেছেন।
শুভান্শু শুক্লা: 'নমস্কার, আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভান্শু শুক্লা...' – ভারতীয় বিমানবাহিনীর বীর পরীক্ষামূলক পাইলটের এই কথাগুলি এখন কেবল ভারত নয়, পুরো বিশ্বের মহাকাশ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হতে চলেছে। ৩৯ বছর বয়সী শুভান্শু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ যাওয়া প্রথম ভারতীয় নাগরিক হতে চলেছেন। এই ঐতিহাসিক মিশনটি ২০২৫ সালের ১০ জুন নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে।
বেসরকারি মহাকাশ উড়ানের অংশ শুভান্শু
যে মিশনের অংশ শুভান্শু, তা একটি বেসরকারি মহাকাশ মিশন, যা অ্যাক্সিওম স্পেস কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। মিশনটির নাম অ্যাক্সিওম-৪ এবং ভারতে তা আবেগময়ভাবে ‘মিশন আকাশগঙ্গা’ বলা হচ্ছে। এই উড়ানে শুভান্শুর সাথে অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহাকাশচারীও থাকবেন, তবে একজন ভারতীয় হিসেবে এই মিশনে তার অংশগ্রহণ ঐতিহাসিক এবং গৌরবোজ্জ্বল।
এই উড়ানটি স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন সি২১৩ যানের মাধ্যমে হবে। ১০ জুন উৎক্ষেপণের পর প্রায় ২৮ ঘন্টার যাত্রা শেষ করে এই যান ১১ জুন রাত ১০টার দিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যুক্ত হবে। যানে থাকা যাত্রীরা কক্ষপথে অবস্থিত আইএসএস-এ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, প্রযুক্তিগত निरीक्षण এবং মহাকাশ জীবনের চ্যালেঞ্জগুলির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
২,০০০ ঘন্টারও বেশি উড়ানের অভিজ্ঞতা
লখনউতে জন্মগ্রহণকারী শুভান্শু শুক্লা ২০০৬ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কমিশন পেয়েছিলেন। ১৫ বছর ধরে একজন যুদ্ধ বিমান চালক হিসেবে দেশের সেবা করে শুভান্শু সুখোই-৩০, মিগ-২১, মিগ-২৯, জাগুয়ার, হক এবং ডর্নিয়ার সহ অসংখ্য বিমান উড়িয়েছেন। তিনি ২০০০ ঘন্টারও বেশি উড়ানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং তাকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষামূলক পাইলটদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শুভান্শুকে ২০২০ সালে ইসরোর গগনযান মিশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল, যা ভারতের নিজস্ব প্রথম মানব মহাকাশ উড়ান প্রকল্প। তবে গগনযানের প্রযুক্তিগত এবং পরিকল্পনাগত বিলম্বের কারণে, তার মহাকাশে যাওয়া তখন স্থগিত হয়। কিন্তু ভাগ্য তাকে অ্যাক্সিওম-৪ মিশন হিসেবে আরও একটি, এবং সম্ভবত আরও रोमांचক সুযোগ দিয়েছে।
রাकेশ শর্মা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন
তার একটি ভিডিও বার্তায় শুভান্শু বলেছেন, আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন বইতে ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মার সম্পর্কে পড়তাম। তার অভিজ্ঞতা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আমি তখন জানতাম না যে একদিন আমি নিজেও মহাকাশে যাওয়া ব্যক্তি হব। তিনি আরও যোগ করেছেন যে, প্রথমদিকে আমার স্বপ্ন ছিল কেবল পাইলট হওয়া, কিন্তু মহাকাশের দিকে এই যাত্রা আমার জীবনের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দিক হয়ে উঠেছে।
শুভান্শু শুক্লার এই উড়ান ভারতের নাম বিশ্ব মহাকাশ অন্বেষণে আরও দৃঢ়ভাবে স্থাপন করবে। যেখানে রাকেশ শর্মা ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত মিশনের অধীনে গিয়েছিলেন, সেখানে শুভান্শু শুক্লা আজ একটি বেসরকারি, আন্তর্জাতিক মিশনের অংশ হয়ে ভারতের মহাকাশ ইতিহাসকে আধুনিক এবং বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাপটে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।