ISRO-র ১০১তম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ গত রবিবার, ১৮ই মে, ব্যর্থ হয়েছে। এই মিশনে EOS-09 উপগ্রহকে PSLV-C61 রকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর পর্যবেক্ষণের জন্য উৎক্ষেপণ করা হচ্ছিল। তবে, রকেটের তৃতীয় স্তরে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে মিশন সফল হয়নি।
নতুন দিল্লি: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) গত রবিবার, ১৮ই মে, ২০২৫-এ একটি অপ্রত্যাশিত ধাক্কা পেয়েছে যখন তাদের নির্ভরযোগ্য PSLV-C61 মিশন ব্যর্থ হয়। এই মিশনের লক্ষ্য ছিল EOS-09 নামক একটি অত্যাধুনিক পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহকে কক্ষপথে স্থাপন করা, কিন্তু তৃতীয় স্তরে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এই ব্যর্থতা গত আট বছরে ISRO-র PSLV রকেটের জন্য প্রথম বড় ব্যর্থতা, যা ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আসুন বিস্তারিতভাবে বুঝি এই ব্যর্থতার কারণগুলি, PSLV-র বৈশিষ্ট্য এবং এর ইতিহাস।
PSLV-C61 মিশনে কি হয়েছিল?
PSLV-C61 মিশনের অধীনে EOS-09 উপগ্রহকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (LEO) স্থাপন করা হবে, যা বায়ুমণ্ডলীয় পর্যবেক্ষণ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করবে। ISRO-র চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন জানিয়েছেন যে উৎক্ষেপণের সময় রকেটের তৃতীয় স্তরে একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিয়েছে, যার ফলে উপগ্রহটিকে সফলভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা যায়নি। বর্তমানে, ব্যর্থতার কারণগুলির তদন্ত চলছে এবং ISRO দল এ ব্যাপারে কাজ করছে। নারায়ণন বলেছেন, আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি এবং শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করব।
PSLV: ISRO-র 'ওয়ার্ক হর্স' কেন?
PSLV (Polar Satellite Launch Vehicle) ISRO-র সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং জনপ্রিয় উৎক্ষেপণ যান হিসেবে পরিচিত। এটি ১৯৯০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত অনেক সফল মিশন সম্পন্ন করেছে। PSLV কে "ওয়ার্ক হর্স" বলা হয় কারণ এটি বিভিন্ন ধরণের উপগ্রহকে পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথে নিয়ে যেতে সক্ষম। পৃথিবী পর্যবেক্ষণ হোক, যোগাযোগ উপগ্রহ হোক বা নেভিগেশন সিস্টেম, PSLV প্রতিটি ধরণের মিশনে তার শক্তি এবং নির্ভরযোগ্যতা প্রদর্শন করেছে।
এছাড়াও, PSLV ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ এবং ২০১৩ সালে মঙ্গল অরবিটার মিশন সহ উচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি কেবল ভারতের জন্যই নয়, অন্যান্য দেশের জন্যও অনেক উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছে, যার ফলে এর বিশ্বব্যাপী মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
PSLV-র ইতিহাসে ব্যর্থতা: মাত্র দুবার
১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো PSLV-র উড়ান ডুবে যাওয়ার কারণে প্রথম মিশন ব্যর্থ হয়েছিল। সেই সময় PSLV-D1 মিশনের সময় রকেটে প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। এর পর ২০১৭ সালে PSLV-C39 মিশন ব্যর্থ হয়, যখন IRNSS-1H উপগ্রহটিকে সফলভাবে আলাদা করা যায়নি। এছাড়াও, ১৯৯৭ সালে PSLV-C1 মিশন আংশিকভাবে সফল ছিল, যেখানে IRS-1D উপগ্রহটিকে সম্পূর্ণরূপে কক্ষপথে স্থাপন করা যায়নি।
এই অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও, PSLV ১৯৯৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুবার বড় ব্যর্থতা झেলেছে, যার ফলে এর নির্ভরযোগ্যতা বজায় রয়েছে। কিন্তু এখন, ২০২৫ সালে এটি তৃতীয় ব্যর্থতা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
EOS-09 উপগ্রহ এবং এর গুরুত্ব
EOS-09 উপগ্রহটি ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর উপরিভাগের উচ্চমানের ছবি তোলা এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ করা। এই উপগ্রহটি কৃষক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এবং গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করার কথা ছিল। এই উপগ্রহের ব্যর্থতার ফলে কেবল ভারতের উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রভাবিত হবে না, বরং অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতেও প্রভাব পড়বে, যেখানে আবহাওয়া এবং পরিবেশের সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ISRO-র সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
এই ব্যর্থতা ISRO-র জন্য অনেক প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত প্রশ্ন তৈরি করেছে। PSLV-র নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যদিও ISRO স্পষ্ট করেছে যে এটি একটি দুর্লভ ঘটনা এবং তারা সম্পূর্ণরূপে এর কারণ জানতে এবং সংশোধন করার জন্য নিযুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী মহাকাশ প্রতিযোগিতার সময়কালে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য এটি প্রয়োজনীয় যে ISRO এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তার প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করবে। আগামী মিশনে আরও সতর্কতা এবং প্রযুক্তিগত তদন্তের প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে।