আমাজনের প্রকল্প কুইপার: ২৭টি উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ

আমাজনের প্রকল্প কুইপার: ২৭টি উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

আমাজন প্রকল্প কুইপারের সূচনা করেছে, যা ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছিল। সোমবার এই প্রকল্পের অধীনে ২৭টি ইন্টারনেট টার্মিনাল সফলভাবে নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (LEO) উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

কুইপার উপগ্রহ: উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্র এখন একটি নতুন দিকে প্রবেশ করেছে। গত কয়েক বছরে এলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক সেবা এই ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছে, কিন্তু এখন এখানে একজন নতুন খেলোয়াড় এসেছে। এই খেলোয়াড় হলো – আমাজন, যারা তাদের বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্প কুইপার (Project Kuiper) এর সূচনা করেছে। সোমবার আমাজন মহাকাশে তাদের প্রথম ২৭টি ইন্টারনেট টার্মিনাল উৎক্ষেপণ করেছে, যা নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (LEO) স্থাপন করা হবে।

এই প্রকল্পটি প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য মোট ৩২৩৬টি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো। আমাজনের এই পদক্ষেপ উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা বাজারে স্টারলিঙ্কের সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতা করবে, যার ফলে এই ক্ষেত্রে নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।

আমাজনের প্রকল্প কুইপারের উদ্দেশ্য

প্রকল্প কুইপারের প্রধান উদ্দেশ্য হল সেইসব এলাকায় উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, যেখানে ঐতিহ্যগত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সুবিধা নেই। বিশেষ করে দূরবর্তী এবং গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেটের অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা এই প্রকল্পের মাধ্যমে দূর করার চেষ্টা করা হবে। আমাজনের পরিকল্পনা হল সেইসব এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করা, যেখানে ঐতিহ্যগত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারে না। এর ফলে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের বিস্তারই হবে না, বরং বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল বৈষম্যও কমবে।

প্রকল্প কুইপারের সূচনা নিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আমাজন এই ক্ষেত্রে স্টারলিঙ্কের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। স্টারলিঙ্ক ইতোমধ্যেই অনেক দেশে তাদের সেবা শুরু করেছে এবং এখন আমাজনও এই দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে, আমাজন সোমবার তাদের প্রথম ব্যাচের ২৭টি উপগ্রহ বোয়িং এবং লকহিড মার্টিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স (ULA) এর সহযোগিতায় মহাকাশে পাঠিয়েছে। এই উপগ্রহগুলি অ্যাটলাস রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের বিলম্ব এবং আসন্ন লক্ষ্য

আমাজনের পরিকল্পনা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি চালু করা, কিন্তু বিভিন্ন প্রযুক্তিগত এবং নিয়ন্ত্রক কারণে এই প্রকল্পে বিলম্ব হয়েছে। আমেরিকার ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (FCC)ও প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। FCC আমাজনকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অন্তত ১৫০০টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানটি স্টারলিঙ্কের পিছনে না পড়ে। বর্তমানে স্টারলিঙ্ক আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের মতো অনেক দেশে তাদের সেবা প্রদান করছে এবং আমাজনের জন্য এটিকে টক্কর দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পরিকল্পনা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, কারণ মাত্র ২৭টি উপগ্রহ নিয়ে তারা স্টারলিঙ্কের মতো ব্যাপক সেবা শুরু করতে পারবে না। এর অর্থ হল আমাজনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে হবে, যাতে তারা তাদের নেটওয়ার্কটিকে আরও কার্যকর করে তুলতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী তাদের উপস্থিতি স্থাপন করতে পারে।

আমাজনের দর্শন এবং লক্ষ্য

আমাজনের প্রকল্প কুইপারের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ইন্টারনেট সেবার বিস্তার নয়, এটি প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি ব্যবসায়িক সুযোগও। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাজন উপগ্রহ ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে পারবে।

আমাজনের এই প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি মূলত বিশ্বজুড়ে মৌলিক ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, বিশেষ করে সেইসব এলাকায় যেখানে অন্যান্য ইন্টারনেট নেটওয়ার্কিং বিকল্প উপলব্ধ নয়। এই প্রকল্পের অধীনে উপগ্রহের মাধ্যমে অবকাঠামো স্থাপন করা হবে, যা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে।

স্টারলিঙ্কের সাথে প্রতিযোগিতা

উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবার সবচেয়ে বড় নাম হল স্টারলিঙ্ক, যা এলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স পরিচালনা করছে। স্টারলিঙ্ক ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী তাদের সেবা শুরু করেছে এবং এটি আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশে তাদের ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করেছে। স্টারলিঙ্কের নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি এই ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান দৃঢ় করছে। আমাজনের প্রকল্প কুইপারকে এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আমাজনের কাছে তাদের বিশাল প্রযুক্তি এবং আর্থিক সম্পদের সুবিধা থাকবে, যা তাদের প্রতিযোগিতায় শক্তি প্রদান করবে।

একদিকে আমাজন এবং স্টারলিঙ্ক উপগ্রহ ইন্টারনেটের জগতে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে, অন্যদিকে চীনও ১০G ইন্টারনেট সেবার সূচনা করেছে। চীনের দাবি, তাদের ১০G ইন্টারনেট সেবা ঘন্টার কাজ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে করতে পারে, যার ফলে এই সেবা ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে একটি নতুন বিপ্লব হতে পারে।

Leave a comment