বিবিসি পেরপ্লেক্সিটি এআই-এর বিরুদ্ধে কন্টেন্ট চুরির অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। স্টার্টআপটি অভিযোগগুলোকে ভুল বলে দাবি করেছে। এই ঘটনাটি এআই এবং মিডিয়ার মধ্যে বৌদ্ধিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
Perplexity AI: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বর্ধমান জগতে টেক এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘাত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) এবং আমেরিকার এআই স্টার্টআপ Perplexity AI-এর মধ্যে, যেখানে বিবিসি অভিযোগ করেছে যে Perplexity তাদের কন্টেন্ট অবৈধভাবে ব্যবহার করে তাদের এআই মডেল প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই ঘটনাটি প্রযুক্তি ও মিডিয়া উভয় জগতেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিবিসির বড় অভিযোগ: অনুমতি ছাড়া কন্টেন্ট ব্যবহার
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, বিবিসি Perplexity-এর CEO অরবিন্দ শ্রীনিবাসকে একটি আনুষ্ঠানিক আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। এই নোটিশে বিবিসি বলেছে যে যদি Perplexity:
- বিবিসির ওয়েবসাইট থেকে কন্টেন্ট স্ক্র্যাপ করা বন্ধ না করে,
- তাদের এআই মডেল থেকে সেই প্রশিক্ষণ ডেটা মুছে না ফেলে যেখানে বিবিসির কন্টেন্ট রয়েছে, এবং
- বৌদ্ধিক সম্পত্তির লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণ না দেয়,
তাহলে বিবিসি আদালতে যাবে এবং নিষেধাজ্ঞা (injunction) চাইবে।
পেরপ্লেক্সিটির প্রতিক্রিয়া: 'এই অভিযোগ ভ্রান্ত'
বিবিসির এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় Perplexity AI বলেছে যে বিবিসির অভিযোগ 'ছলচাতুরীপূর্ণ এবং সুযোগবাদী'। তারা এটাও বলেছে যে বিবিসির 'প্রযুক্তি, ইন্টারনেট এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি আইনের মৌলিক ধারণা নেই।'
পেরপ্লেক্সিটি জোর দিয়ে বলেছে যে তারা প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনসম্মতভাবে কাজ করছে এবং তারা তাদের ব্যবহারকারীদের সঠিক ও দ্রুত তথ্য দিতে ইন্টারনেটে উপলব্ধ সম্পদের ব্যবহার করছে।
আগেও অভিযোগ উঠেছে
পেরপ্লেক্সিটি এআই কোনো নতুন খেলোয়াড় নয়। এটি OpenAI-এর ChatGPT এবং Google-এর Gemini-র মতো মডেলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে ফোর্বস, ওয়্যার্ড এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো খ্যাতনামা মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কন্টেন্ট অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
গত অক্টোবর ২০২৪ সালে, নিউ ইয়র্ক টাইমস পেরপ্লেক্সিটিকে একটি Cease and Desist Notice (বন্ধ করো এবং থামো নোটিশ) পাঠিয়েছিল, যেখানে এআই উদ্দেশ্যে তাদের কন্টেন্ট ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বিরোধের মূল: এআই-এর ক্ষুধা এবং কন্টেন্টের অধিকার
পেরপ্লেক্সিটি, ChatGPT অথবা Gemini-র মতো জেনারেটিভ এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য লক্ষ লক্ষ পেজের প্রয়োজন হয়। এই মডেলগুলো প্রায়শই জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ ইন্টারনেট কন্টেন্ট স্ক্র্যাপ করে ডেটা সংগ্রহ করে এবং তারপর মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া দিতে শেখে।
তবে, মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলে যে তাদের পরিশ্রমের ফলে তৈরি প্রতিবেদন এবং লেখা তাদের বৌদ্ধিক সম্পত্তি, এবং অনুমতি বা অর্থ প্রদান ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা সরাসরি কপিরাইট লঙ্ঘন।
রাজস্ব ভাগাভাগির চেষ্টা
এই সমালোচনাগুলির মধ্যে Perplexity AI সম্প্রতি একটি রাজস্ব ভাগাভাগি কর্মসূচী শুরু করেছে, যেখানে তারা প্রকাশকদের সাথে অংশীদারিত্ব করে তাদের এআই পরিষেবা থেকে হওয়া আয়ের অংশ ভাগ করে নিতে চায়। তবে বিবিসির মতো বড় মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এই কর্মসূচীতে সন্তুষ্ট নয়।
বিবিসি বলেছে যে এই মডেলটি স্বচ্ছ নয় এবং এটি তাদের কন্টেন্টের স্বত্ব রক্ষা করতে পারে না। তারা চায় তাদের কন্টেন্টের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহারের অনুমতি তাদের কাছেই থাকবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই ঘটনার পর প্রযুক্তি ও আইনি জগতে আলোচনা তীব্র হয়েছে। বিবিসির এই পদক্ষেপকে একটি বড় উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার ফলে অন্যান্য মিডিয়া প্রতিষ্ঠানও আইনি পথ অবলম্বন করতে অনুপ্রাণিত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা প্রযুক্তি এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি আইনের মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার সূত্রপাত করবে। এটি নির্ধারণ করবে যে এআই প্রতিষ্ঠানগুলি কি ‘ফেয়ার ইউজ’–এর আওতায় উন্মুক্ত ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে সবকিছু ব্যবহার করতে পারে, নাকি তাদের কন্টেন্ট নির্মাতাদের অনুমতি ও অর্থ প্রদান করতে হবে।