মালয়েশিয়া পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান: ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কর্মসূচী অব্যাহত

মালয়েশিয়া পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান: ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কর্মসূচী অব্যাহত
সর্বশেষ আপডেট: 04-06-2025

মালয়েশিয়ায় ভারতীয় সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধি দলের কর্মসূচী বাতিল করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান, কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার সেই দাবি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে।

মালয়েশিয়ায় ভারতীয় প্রতিনিধি দল: সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ভারতের সংসদ সদস্য এবং প্রাক্তন কূটনীতিকদের একটি প্রতিনিধি দল একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভ্রমণ সম্পন্ন করেছে, যা পাকিস্তানের জন্য ব্যাপক ধাক্কা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই প্রতিনিধি দলের কর্মসূচী বাতিল করার সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ মালয়েশিয়া সরকার পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই কূটনৈতিক সাফল্য ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান বিশ্বব্যাপী অভিযানকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং এটি প্রমাণ করে যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই ভারতের পাশে রয়েছে।

পাকিস্তানের ব্যর্থ চেষ্টা এবং মালয়েশিয়ার কঠোর প্রতিক্রিয়া

সূত্রমতে, পাকিস্তান ইসলামী ঐক্যের উল্লেখ করে মালয়েশিয়া কর্মকর্তাদের কাছে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কর্মসূচী বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। পাকিস্তানের এই কৌশল ছিল ভারতের বিরুদ্ধে পরিবেশ তৈরি করা, যাতে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন দুর্বল করা যায়। কিন্তু মালয়েশিয়া পাকিস্তানের এই হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে ভারতের প্রতিনিধি দলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং সুরক্ষা প্রদান করেছে।

এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে মালয়েশিয়া তার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং কোনো বহিরাগত চাপে পড়ে না। পাকিস্তানের এই চেষ্টা ‘অপারেশন সিন্দুর’ সহ ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী পদক্ষেপগুলিকে বাধাগ্রস্ত করার একটা প্রয়াস ছিল, কিন্তু এতে ব্যাপক ধাক্কা লেগেছে।

সংজয় ঝার নেতৃত্বে বহুজাতিক ভ্রমণের সারসংক্ষেপ

ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতীয় জনতা দল (জেডিইউ)-এর সংসদ সদস্য সংজয় ঝা। এই দলে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি), এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী)-র সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। এই প্রতিনিধি দল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া সহ পাঁচটি দেশ ভ্রমণ করেছে।

এই ভ্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাকিস্তানের ভূমিকা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা এবং ভারত সরকারের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি বাড়ানো। ‘অপারেশন সিন্দুর’ হল ভারতের সেই সামরিক অভিযানের নাম, যাতে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে সঠিক এবং সংযত আক্রমণ চালানো হয়েছিল, যার ফলে সন্ত্রাসবাদীরা ব্যাপক ধাক্কা পেয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে ভারত

সংজয় ঝা এই মিশনকে অত্যন্ত সফল বলে বর্ণনা করে বলেছেন, “আমাদের এই ভ্রমণ সম্পূর্ণরূপে সার্থক হয়েছে। ২২ এপ্রিল পাহলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার বিশ্বব্যাপী নিন্দা হয়েছে এবং ভারতের সংযত প্রতিক্রিয়ারও প্রশংসা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে এবং প্রশাসন সেখানকার পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।”

তিনি আরও জানিয়েছেন যে, ভারত FATF-এ আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে। এই উদ্যোগকে অনেক দেশ সমর্থন করেছে, যার ফলে পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ বার্তা

এই প্রতিনিধি দল কেবলমাত্র সরকারের প্রতিনিধি ছিল না, বরং ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তিরও প্রতীক ছিল, যেখানে সকল রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। সিপিএম সাংসদ জন ব্রিটাস বলেছেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের প্রতি সচেতন এবং সংবেদনশীল করে তোলা।” বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গীও বলেছেন, “এটা স্পষ্ট হয়েছে যে প্রতিটি দেশ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে।”

এই বার্তা পাকিস্তান এবং তার সমর্থকদের জন্য স্পষ্ট ছিল যে ভারতের এই সংগ্রাম একাকী নয়। ভারতের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ সত্ত্বেও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সমগ্র দেশের ঐক্য এই অভিযানকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

‘অপারেশন সিন্দুর’-এর বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি বৃদ্ধি

‘অপারেশন সিন্দুর’ হল ভারত কর্তৃক সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে পরিচালিত অভিযানের নাম, যা ভারত পুরোপুরি সতর্কতা এবং কৌশলের সাথে সম্পন্ন করেছে। এই অভিযানে কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদীদের বিরাট ক্ষতিই হয়নি, বরং বিশ্ব সম্প্রদায়কেও এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।

প্রতিনিধি দলের বিদেশ ভ্রমণ এই অভিযানকে বিশ্বের সামনে সঠিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেছে। এর ফলে ভারত বিশ্ব মঞ্চে বর্ধিত সমর্থন পেয়েছে, যখন পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে তীব্র ধাক্কা লেগেছে।

Leave a comment