ধুবুরীতে মন্দিরের বাইরে মাংস ফেলার ঘটনার পর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাঙ্গাবাজদের দেখেই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
Assam: অসমের ধুবুরী জেলায় সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রবিবার একটি মন্দিরের বাইরে অশালীন বস্তু (গরুর মাংস) ফেলার পর স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। সোমবার এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়, যার পর পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় এবং ব্যাপক সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর বার্তা
এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি X (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, ধুবুরীতে একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মন্দিরগুলি ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সক্রিয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন অসামাজিক তত্ত্বদের মোকাবেলা করার জন্য "দেখেই গুলি করার" নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিএম শর্মা বলেছেন, "ধুবুরীতে কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। যারা সমাজে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
"আমি নিজেই মন্দিরের রক্ষা করব"
মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেছেন, প্রয়োজন হলে তিনি আগামী ঈদে রাতভর হনুমান মন্দিরে পাহারা দেবেন যাতে কোনও অসামাজিক তত্ত্ব কোনও ধরনের অপকর্ম করতে না পারে। তিনি বলেছেন, "এইবার ঈদে কিছু তত্ত্ব হনুমান মন্দিরে গরুর মাংস ফেলার নিন্দনীয় চেষ্টা করেছে। এটি পুরোপুরি পরিকল্পিত এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র।"
ধুবুরী নিয়ে আগেও উঠেছে প্রশ্ন
ধুবুরী জেলা আগেও অনেকবার বিতর্কে জড়িয়েছে। রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ সুধানশু ত্রিবেদীর ধুবুরীকে 'মিনি বাংলাদেশ' তুলনা করার পর রাজনৈতিক ভূমিকম্প লেগেছিল। বিরোধীরা এই বক্তব্যে বিজেপিকে ঘেরাও করার চেষ্টা করেছিল। এই জেলা বাংলাদেশ সীমান্তের সাথে লাগানো এবং এখানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অনুপ্রবেশ, জনসংখ্যা অসাম্য এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যেসব বিষয় চর্চায় থাকে।
প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থার তৈয়ারি
রাজ্য সরকার এবং জেলা প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে দোষীদের কোনও ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। ঘটনার পর পুলিশ এলাকায় নিবিড় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সাথে সাথে, উপমহাদেশে এবং মিথ্যা খবরের উপর কড়া নজর রাখার জন্য সাইবার সেলকে ও সক্রিয় করা হয়েছে।
ধুবুরীর সামাজিক পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ
ধুবুরী জেলার সামাজিক গঠন জটিল এবং সংবেদনশীল। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা থাকে এবং কোনও ছোট ঘটনায় বড় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মন্দিরের বাইরে অশালীন বস্তু ফেলার ঘটনা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার উল্লঙ্ঘন নয়, সামাজিক সম্প্রীতির জন্যও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
সিএম-এর শূন্য সহনশীলতার বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা আগেও রাজ্যে অসামাজিক তত্ত্বদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পরিচিত। যা ই হোক না কেন, ড্রাগস মাফিয়া হোক অথবা কট্টরপন্থী সংগঠন, তিনি সবসময় "শূন্য সহনশীলতা" নীতি অনুসরণ করেছেন। ধুবুরী ঘটনায়ও তার এই নির্দেশ সেই নীতির ই বিস্তার।
"শুট অ্যাট সাইট"-এর আইনি ভিত্তি কি?
ভারতে 'শুট অ্যাট সাইট' আদেশ তখন দেওয়া হয় যখন কোনও পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণরূপে ধ্বসে পড়ে এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনে গুরুতর খতরা থাকে। এই আদেশ সাধারণত ম্যাজিস্ট্রেট অথবা গৃহ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে ই প্রযোজ্য হয় এবং এতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে তারা যে কোনো হিংস্র দাঙ্গাবাজকে মেরে ফেলার অধিকার নিয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। তবে, এই আদেশ শুধুমাত্র অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে ই প্রযোজ্য হয়।